ভেনিজুয়েলায় অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে সন্তানদের ভরণ-পোষণ দিতে না পেরে সন্তানদের দত্তক দিচ্ছেন সেখানকার মা-বাবারা। এমনকি সন্তান পেটে থাকতেও আগাম দত্তক দিয়ে দিচ্ছেন তারা। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো খাবার দিতে না পেরে সন্তানদের রাস্তায় ফেলে চলে যাচ্ছেন বাবা-মা। জাতিসংঘের মতে, তেলসমৃদ্ধ ভেনিজুয়েলা ভয়াবহ মানবিক সঙ্কটের মধ্যে সময় পার করছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটিতে এরই মধ্যে চরম দরিদ্রতা ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বেড়েছে অপুষ্টিজনিত মৃত্যুহার। এ ছাড়া এ অর্থনৈতিক কারণে গত দুই বছরে দেশটি থেকে পালিয়ে গেছে লাখ লাখ মানুষ। ভেনিজুয়েলার ভেতরে এবং বাইরের অনেকেই দেশটিতে এমন দুর্দশার জন্য প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর নীতিকে দোষারোপ করছে। তবে নিকোলাস মাদুরোর সমর্থকরা এ দুর্দশার জন্য বিভিন্ন সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভেনিজুয়েলার এক শিশু জানায়, আমরা রাস্তায় থাকছি। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে আমাদের। অন্য এক শিশু বলে, আমি থাকার জন্য একটি রুম খুঁজছি। কারণ রাস্তায় থাকাটা খুব কষ্টের। এমন অসংখ্য শিশু আছে, যাদের বাবা-মা তাদের ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।
রাস্তায় মায়ের সঙ্গে ভিক্ষা করতে থাকা মারিনা নামে এক শিশু বলে, আজ আমরা অনেক ক্ষুধার্ত। ঠিকমতো খেতে পারিনি। ঠিক না মা? ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সকাল থেকে সারা দিন রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে মারিনা আর তার মা। মারিনার মা বলে, সবাই অর্থ অষ্টে আছে, কে কাকে খাবার দেবে। মারিয়া ছদ্মনামে একজন বলেন, আমি ছয় মাসের গর্ভবতী। এখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জন্মের পর আমার সন্তানকে দত্তক দিয়ে দেব। মারিয়ার আরো পাঁচটি সন্তান আছে। যাদের মধ্যে তিনটির দেখভাল করে অন্য পরিবার। তিনি বলেন, আমি আমার সন্তাদের বলেছিলাম, আমি তাদের ছেড়ে থাকতে চাই না। তবে তাদের খরচও আমি বহন করতে পারছি না। নিশ্চিয় কোনো এক দিন আমি সন্তানদের আমার কাছে ফিরিয়ে আনব।
সম্প্রতি ভেনিজুয়েলায় মুদ্রাস্ফীতির কারণে এক প্যাকেট চালের দাম পঁচিশ লাখ বলিভারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটিতে বস্তাভর্তি নোট নিয়ে বাজারে যাচ্ছেন মানুষ।