রাজনীতি

অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে সতর্ক আওয়ামী লীগ

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ৩০ অগাস্ট, ২০১৯

আওয়ামী লীগে ঠাঁই নেওয়া অনুপ্রবেশকারী ও বহিরাগতদের চিহ্নিত করে দল থেকে বাদ দেওয়ার লক্ষ্যে শুদ্ধি অভিযান চালানোর যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা থেকে দল আপাতত সরে এসেছে। আগামী কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে জোরাল শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে দলকে যথাসম্ভব বহিরাগতমুক্ত করার পরিকল্পনা শীর্ষ নেতৃত্বের থাকলেও এর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দল থেকে বাদ দেওয়ার বদলে তাদের বিষয়ে আরো বেশি সতর্ক থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। তৃণমূল থেকে শুরু করে দলের সব পর্যায়সহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও নতুন করে নির্দেশ দেওয়া হবে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে আরো বেশি সতর্ক থাকতে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র বাংলাদেশের খবরকে এসব তথ্য জানায়।

সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে গত কয়েক বছর ধরে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন অনুপ্রবেশকারীরা। আগামী কেন্দ্রীয় সম্মেলন সামনে রেখে দলে ঠাঁই নেওয়া বহিরাগত ও নানা অপকর্মে জড়িতদের চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে দেওয়ার পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে শুদ্ধি অভিযানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। একই সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের দলীয় পদ থেকে সরিয়ে জনপ্রিয়, ত্যাগী ও সৎ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দল। দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা ও ঢাকাসহ আরো কয়েকটি জেলায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ মোকাবেলায় বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতির দলীয় কর্মসূচিগুলো আওয়ামী লীগ এগিয়ে নিতে পারেনি। সম্মেলন আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে আয়োজনের কথা থাকলেও তা পেছাতে পারে।

কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে এর সম্পর্কিত বেশি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নে আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে মাঠে নামবেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ সময়ের মধ্যে বহিরাগতদের দল থেকে বের করে তৃণমূলের কমিটি দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করে দলের নীতিনির্ধারক নেতৃত্ব। তবে অনৈতিক সুবিধাভোগ ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দলকে সমালোচনার মুখোমুখি করতে যারা আওয়ামী লীগে ভিড়েছেন, তাদেরকে দল থেকে অবশ্যই বহিষ্কার করা হবে। দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ‘অনুপ্রবেশকারী, ‘হাইব্রিড’ ও ‘নব্য আওয়ামী লীগারদের’ ব্যাপারে সোচ্চার আছেন।

শুধু অনুপ্রবেশকারীই নয়, অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর প্রমাণ পেলে দলীয় নেতাকর্মীদেরও ছাড় দেওয়া হবে না। ঘোষণা দিয়ে অভিযান চালানো না হলেও অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া অনেক নেতার বিষয়ে তদন্ত করছে দল। অভিযানের লক্ষ্যে সারা দেশে দলের গঠিত আটটি বিভাগীয় টিম সাংগঠনিক সফরও করে। কারো কারো বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দৃশ্যমান না হলেও কোনো না কোনোভাবে শাস্তির আওতায় আসছেন অনুপ্রবেশকারীরা।

দলীয় সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা যেভাবে বলা হচ্ছে, বাস্তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না-এ বিষয়ে সন্দিহান দলের তৃণমূলের অনেকে। ‘কাউওয়া’, ‘নব্য আওয়ামী লীগার’, ‘আশ্রয়দাতা’, ‘সন্দেহভাজন’, ‘নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া’ ও ‘ধর্ষণকারীদের’ বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে অনবরত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর তেমন পদক্ষেপ তৃণমূলের চোখে পড়ছে না। অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে দলের দাপুটে ও প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধেও। বহিরাগতদের দলে ভিড়িয়ে তারা নিজেদের অনুসারী ও দলবলের সংখ্যা ভারী করে নানা ফায়দা লুটছেন। এসব নেতা প্রকাশ্যে না বললেও অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান কার্যক্রম নানাভাবে বিলম্বিত করার কৌশল করবেন বলেও তৃণমূলের সন্দেহ।

তৃণমূলের অভিযোগ, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন দলের যেসব কেন্দ্রীয় নেতা, তাদের মধ্যে কয়েকজনের হাত ধরেও জামায়াত-বিএনপির নেতারা আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব নেতা চাপে পড়ে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেও তাদেরকে দল থেকে বের করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপের পক্ষে থাকবেন বলে মনে করেন না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। দলের টিকিটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের ছত্রচ্ছায়ায় অনুপ্রবেশকারীরা দেশের অনেক এলাকায় মুখ্য ভূমিকা রাখছেন। তাদের প্রভাবে কোণঠাসা ত্যাগী নেতাকর্মীরা। নব্য আওয়ামী লীগারদের অপকর্মের কারণে শুধু তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই নন, দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও ‘বিস্মিত’ হতে হচ্ছে।

সূত্রের ধারণা, গত ১০ বছরে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠাকিভাবে সারা দেশে জামায়াত, শিবির, বিএনপি ও অন্যান্য দলের কমপক্ষে ৬০ হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক আওয়ামী লীগে যোগ দেন। অনেকে অতীতের পরিচয় গোপন করছেন, আবার অনেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে দলে ভিড়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। অতীতের নানা মামলা থেকে রেহাই পেতেও অনেকে এখন সরকারি দলের ছায়ায় আছেন। দলে যোগ দিয়েই তারা তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও কমিটির পদ দখল করেন। তৃণমূল আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ পদেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা নেতাকর্মীরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads