শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির চরম উদাসীনতার কারনে নড়াইলের লোহাগড়ার ইতনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে এবছর ৬০ জন শিক্ষার্থী এস,এস,সি পরীক্ষার ফরমপূরণ করতে পারছে না। অভিভাবক, ভূক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে অনুষ্ঠিত এস,এস,সির টেস্ট পরীক্ষায় ১৯৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে প্রকৃত পক্ষে মাত্র ২৪ জন শিক্ষার্থী পাশ করলেও পাশ দেখানো হয়েছে ১০৭ জনকে। ইংরাজি ও গণিত বিষয়ে দ্বিতীয় দফায় টেস্ট পরীক্ষা নেওয়া হলে ৮৭ জন অংশ নিয়ে পাশ করেছে ২৭ জন। ৬০ জন অকৃতকার্য হয়েছে। ওই ৬০ জন শিক্ষার্থী এখন ফরমপূরণ করতে পারছে না।
শিক্ষাথীদের অভিযোগ, প্রকৃত বা প্রথম টেস্ট পরীক্ষায় মাত্র ২৪ জন পাশ করলেও এখন ১৩৪ জন শিক্ষার্থীকে ফরমপূরণ করতে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ফরমপূরণের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে ১১০ জনকে। মোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপস্থিত রয়েছে ৩জন। এখন ফরম পূরণ করতে পারছে না ৬০ জন। বোর্ড নির্ধারিত ফি বা ফরমপূরণে বিজ্ঞান শাখায় ১৫৬৫ টাকা, মানবিক শাখায় ১৪৪৫ টাকা নেবার কথা থাকলেও অভিযোগ রয়েছে এই বিদ্যালয়ে উভয় শাখায় শিক্ষার্থী প্রতি নেয়া হচ্ছে ২৯৮৫ টাকা।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ৪/৫ বিষয়ে ফেল করেছে এমন অনেক ছাত্রছাত্রীকে ফরম পূরণ করতে দেয়া হয়েছে। যে সকল ছাত্র-ছাত্রী বা তাদের অভিভাবকরা শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের চাপপ্রয়োগ করেছে বা ম্যানেজ করেছে তাদেরকে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ফরমপূরণ করতে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী প্রতি ২৯৮৫ টাকা নেয়া হয়েছে। প্রভাবশালী শিক্ষকদের কাছে যে সব শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়েছে তাদের টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট পাল্টে দিয়ে ফরমপূরণের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষকরা ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের পরীক্ষা দেবার সুযোগ দিচ্ছে। আমাদের অপরাধ কি। আমাদের কেন পরীক্ষা দিতে দেবে না।
নামপ্রকাশে একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়টিতে অনিয়ম বাসা বেঁধেছে। টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করেও প্রভাবশালী হলে তাকে ফরমপূরণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। শিক্ষকরা নেমেছেন অর্থ বাণিজ্যে। অকৃতকার্য কে কৃতকার্য দেখানো হয়েছে। অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষকরা এখন টাকা কামানোর ধান্ধায় ঘোরেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করান না। ক্লাসে ঠিকমতো লেখাপড়া করালে এত শিক্ষার্থী ফেল করে কিভাবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে, রোববার ইতনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ বাবু বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর ফোনে কয়েকবার ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ মাহাবুবুর রহমান এর নিকট জানতে তাকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সরাসরি দেখা হলেও কথা বলতে রাজি হননি। ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান হবির সাথে এ বিষয়ে জানতে ফোন দিলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। তবে, নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
লোহাগড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শহীদুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, দ্বিতীয় দফায় টেস্ট পরীক্ষা নেবার বিধান নাই। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ফরমপূরণে অতিরিক্ত টাকা নেবার বিষয়ে অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভূক্তভোগীরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানায়।