অনাবাদির শঙ্কায় দেড়'শ বিঘা বোরো জমি

প্রতিনিদির পাঠানো ছবি

কৃষি অর্থনীতি

অনাবাদির শঙ্কায় দেড়'শ বিঘা বোরো জমি

শতাধিক কৃষকের গোলায় উঠবে না ধান

  • শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

বাপু এইবার অক্করে মাইলাছে ঠাঁইট। কইদিন পরেই ঘরে চাইল(চাল) থাকতনা। তারা আমগর পেটে লাত্তি মারছে। ইকটু ধানের ক্ষেত আছিন হেনি লাগাইতারতাম (রোপন) না ত। এমনি শঙ্কা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাড়ে তিন বিঘা বোরো জমি আবাদের প্রস্তুতি নেওয়া কৃষক নজরুল ইসলাম নজু। তাঁর মত শতাধিক কৃষকের প্রায় দেড়শ বিঘা বোরো জমি অনাবাদি পড়ে থাকার এমনি শঙ্কায় পড়েছে। এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের গাফিলতির কারনে সেচের পানি সরবরাহের ড্রেন বন্ধ করে দেওয়ার কারনে এ শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। দায়িত্বশীলরা আশ্বাস দিলেও কৃষকরা সে কথায় ভরসা পাচ্ছে না। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বাপতা, বেলদিয়া ও বয়রা তিন গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয়রা জানান, বাপতা বেলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছন থেকে (কাওরাইদ বরমী আঞ্চলিক) বয়রা গ্রামের মোজাহিদ ব্রিজের সামনে পর্যন্ত ১৩ শ ৯০ মিটার কার্পেটিং সড়কের কাজ করছে শহিদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অনেক দিন আগেই এ সড়কের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এ বোরো মৌসুমে কাজ শুরু করে। তাঁরা আরো জানান, আশপাশের কয়েক গ্রামের দুই আড়াইশ বিঘা জমির সেচ কার্যক্রম চালাতে সুতিয়া নদীতে পানির কল (বিদ্যুত চালিত) স্থাপন করা হয়েছে। সে কলের পানি এ সড়কের পাশ দিয়ে তৈরি ড্রেনের মাধ্যমে ক্ষেতে ব্যবহার করা হতো। এ সেচ ব্যবস্থা প্রায় ৫০ বছরের পুরানো। রাস্তার কাজ শুরু করার কারনে ড্রেন ভেঙে ফেলা হয়েছে। এবার সেই সেচ ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে স্থানীয় কৃষকরা। অনাবাদি থাকতে পারে দেড়শ বিঘা বোরো জমি।

কৃষক আবদুল হেকিম বলেন, এ ড্রেনেজ ব্যবস্থা অনেক প্রাচীন। এ সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমেই তিন চার গ্রামের কৃষক তাঁদের কৃষি জমিতে ধান আবাদ করে। এবার ড্রেন ভেঙে ফেলায় সে সব জমিতে পানির অভাবে ধান আবাদ করা হবে না। আমরা অর্ধশত কৃষক স্থানীয় এমপির কাছে গিয়েছিলাম। তিনি ওই দিন বাসায় না থাকায় এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। তবে তিনি শুনে কৃষকের প্রয়োজনীয় সুবিধামত ব্যবস্তা নিতে বলেছেন বলে আমরা শুনেছি।

কৃষক ফজলুল হক বলেন আমাদের কৃষিই প্রধান পেশা। আর বোরো আবাদ হলো প্রধান চাষাবাদ। আমার চার বিঘা ক্ষেতে বোরো ধান চাষ করতে প্রস্তুতি নিছিলাম। এখন দেখি পানি (সেচ) অভাবে বোরো আবাদ বন্ধ থাকবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বোরো আবাদের সময় ড্রেন ভেঙে দেওয়া কৃষকদের খাদ্য সংকটে ফেলে দিবে।

কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন , আমাদের দেড় বিঘা জমিতে বোরো চাষের ব্যবস্থা হচ্ছিল। পরে ড্রেন ভাঙার কারনে তা জমিতে ধান চাষ করতে পারব না। তিনি কান্না কন্ঠে বলেন এ জমির ধানেই আমাদের পরিবারের খাদ্য যোগান হয়। এবার ক্ষেত অনাবাদি থাকার কারনে খাদ্য সংকটে পড়ব আমরা। তিনি বলেন দ্রুত ড্রেনের ব্যবস্থা করে কৃষকদের বাঁচার উপায় করা হোক।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শহিদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধীকারি শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রথমে ঈদের জন্য দেরি হয় কাজ শুরু করতে। পরে আমন ধান থাকায় সড়কের পাশের ক্ষেতে ইটবালি ফেলতে অসুবিধা হয়। তিনি কৃষকের ধান আবাদে কোনো অসুবিধা হবে না। আগামি এক সপ্তাহের মধ্যেই পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করে বোরো আবাদে ব্যবস্থা করা হবে।

কাওরাইদ ইউনিয়নের ৭ নাম্বার ওর্য়াডের সদস্য ইসলাম উদ্দীন বলেন, প্রায় দেড়শ বিঘা বোরো জমি অনাবাদের শঙ্কায় পড়েছে ড্রেন ভেঙে দেওয়ার কারনে। তিনি বলেন ঠিকাদারের সাথে কৃষকরা বসেছিল। তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়েছে আগামি এক সপ্তাহের মধ্যেই ড্রেন তৈরি করে সেচের ব্যবস্থা করা হবে।

শ্রীপুর উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মাসুদুল হক বলেন ঠিকাদারকে বলা হয়েছে কৃষি সেচের জন্য ড্রেনের ব্যবস্থা রাখতে। ঠিকাদার ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে দিবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএসএম মূয়ীদুল হাসান বলেন, কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন কাজ করতে হবে। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান। তিনি বলেন এমন উন্নয়ন কাজের আগে কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের সাথে সমন্বয়ন করা প্রয়োজন। দেড়শ বিঘা জমি বোরো আবাদের বাইরে থাকলে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হবে কৃষকদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads