মুক্তমত

অদূরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ

  • প্রকাশিত ১৯ নভেম্বর, ২০২০

নূরে আলম সিদ্দিকী শান্ত

 

 

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা খানিকটা কাটিয়ে ওঠা বিশ্বের অনেক দেশে আবার নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ। দ্বিতীয়বারের মতো করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা বা অধিক সংক্রমণের আশঙ্কাকেই বলা হচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বা সেকেন্ডে ওয়েব। ইতোমধ্যে ইতালিতে করোনার সংক্রমণ অধিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটিতে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শুধু ইউরোপ বা পশ্চিমা দেশগুলোতেই নয়, সারা বিশ্বেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অর্থাৎ পুনরায় অধিক সংক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। দেশেও আঘাত হানতে পারে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বা ভয়াবহ সংক্রমণ।

দেশে মানুষজন এখন অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে শুরু করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে সবকিছুই আগের মতো চলছে। অধিকাংশ মানুষই করোনাকে আর তোয়াক্কা করছে না। প্রথম প্রথম মানুষের মাঝে করোনার প্রতি যে ভয়-ভীতি বিদ্যমান ছিল এখন যে তার ছিটেফোঁটাও নেই, তা রাস্তাঘাটে মানুষজনের মাস্কবিহীনভাবে চলাফেরা দেখলেই বোঝা যায়। কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব না মেনে চলার ফলাফল স্বরূপ শীঘ্রই করোনার সংক্রমণ এমনিতেই বৃদ্ধি পাবে। তার ওপর দেশের আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশজুড়ে হেমন্তের হিমেল হাওয়া শীতের অভাস দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, সামনের শীতে দেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে। শীতে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে সেটা হবে বাংলাদেশের জন্য করোনার দ্বিতীয় ঢেউ।

শীতকালে এমনিতেই মানুষের ঠান্ডাজনিত নানা রোগ হয়। এর মাঝে ঠান্ডা লাগা, জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য। শীতকালের এসব অসুখের প্রতিটিই করোনার উপসর্গজনিত। ফলে অনেকের পক্ষেই বোঝা মুশকিল হবে সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছেন নাকি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। চীনে গত বছর শীতকালে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব হয় এবং পুরো শীতজুড়ে চীনে করোনার তাণ্ডব চলে।

গবেষণায় দেখা যায়, যে কোনো ভাইরাস শীতল ও শুষ্ক আবহাওয়া পছন্দ করে। শীতে মানুষের ঘরে বেশি অবস্থান করার প্রবণতা বাড়ে। তাই বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শীতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে। রূপ পরিবর্তনশীল করোনাভাইরাস সম্পর্কে এখনো বিজ্ঞানীরা পুরোপুরিভাবে জ্ঞাত নন। তাই বিশ্বজুড়ে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা চললেও, কবে নাগাদ ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যাবে, তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। এরূপ অবস্থায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা জনসাধারণের জীবন একদম বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে। করোনার ভয়াবহতা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে চাইলে, এখনি সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষায় অধিক সচেতন হতে হবে। ব্যক্তি উদ্যোগে পরম দায়িত্ব নিয়ে পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি ও যতটুকু সম্ভব সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।

জীবন ও জীবিকার তাগিদে সবকিছু সচল হলেও করোনা এখনো চলে যায়নি। তাই ঘরের বাইরে গেলে আমাদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। আমাদের উদাসীনতা যেন আমাদের জীবননাশের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সেটা মাথায় রাখতে হবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরার কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া ঘনঘন হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়তে হবে, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় আদব-কায়দা বা শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। যতটা সম্ভব জনসমাগম পরিহার করে চলাচল করতে হবে। আসছে শীতে করোনার যে দ্বিতীয় ঢেউ কড়া নাড়ছে, তা মোকাবিলায় আমাদের আরো অধিক সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

nasshanto@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads