মুক্তমত

পদ্মা সেতুর ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম

অদক্ষতায় সুফল মিলবে না : ড. জাহিদ হোসেন

  • প্রকাশিত ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

পদ্মা সেতুর যাবতীয় ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, অদক্ষতা থাকলে সুফল মিলবে না। এমন মত বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ও অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। বাংলাদেশের খবরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই অর্থনীতিবিদ পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি সম্ভাবনার নানা দিক নিয়ে কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মোহসিন কবির।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রিজিয়নাল ইন্টিগ্রেশনে পদ্মা সেতুর ব্যবহার যাতে আকর্ষণীয় হয় সেজন্য এই সেতুর ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা জরুরি। তার মতে, যেহেতু সেতুর মূল কাজগুলো সম্পন্ন হয়ে গেছে, তাই অর্থনীতির স্বার্থে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব এটি খুলে দেওয়া দরকার। তিনি সেতুর টোল যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এজন্য যমুনা সেতুর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মত দেন।

পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা তুলে ধরে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে যেসব সমীক্ষা হয়েছে, সেসব হিসাব ছাড়িয়ে জিডিপিতে এর অবদান আরো অনেক বেশি হবে। তার মতে, এই সেতু খুলে দেওয়ার পর অনেক ধরনের নতুন নতুন সেবার প্রয়োজন হবে। একটি হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে গাড়ি মেরামতের মতো সাধারণ এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো আমাদের চিন্তারও বাইরে। কারণ দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি প্রধানত কৃষিনির্ভর। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর বৈচিত্র্যকরণের এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেতুকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটনের বিকাশ ঘটবে। আবার পর্যটনকে ঘিরে অন্যান্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিকশিত হবে। ফলে পদ্মা সেতু দেশের অর্থনীতিতে কতটা অভাবনীয় ভূমিকা রাখবে তা অনুমান করাই দুঃসাধ্য।

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে এডিবি’র একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সেতুটি দেশের জিডিপির হার বাড়াবে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়াবে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। দারিদ্র্য বিমোচনের হার বাড়াবে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ। এ ছাড়া জাপানের সহযোগিতা সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ২০০৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগের অর্থনৈতিক প্রভাব বা ইকোনমিক রেট অব রিটার্ন (ইআরআর) দাঁড়াবে বছরে ১৮ থেকে ২২ শতাংশ। পরবর্তীসময়ে সেটা বাড়তে পারে। কারণ হিসেবে সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার আগে সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, ইআরআর হবে ১৫ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে তা সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে।

এসব সমীক্ষায় জিডিপি কিংবা ইকোনমিক রেট অব রিটার্ন সম্পর্কে যে মূল্যায়ন উঠে এসেছে, তাকে ড. জাহিদ হোসেন ন্যূনতম বলে মত দেন। তিনি বলেন, একেবারে কম করে হলে এটুকু অর্জিত হবেই। তবে বাস্তবে এর চেয়ে অনেক বেশি সুফল মিলবে। এ বিষয়ে কিছুটা বিশ্লেষণ তুলে ধরেন এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে এই সেতু কেবল যোগাযোগের ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারণ এতদিন দেশের পূর্বাঞ্চলে যেসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, তা দক্ষিণাঞ্চলে হয়নি। এর ফলে সেতু চালু হলে অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণ হবে। দক্ষিণাঞ্চলের যেসব মানুষ জীবিকার তাগিদে ঢাকা-চট্টগ্রামে গিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে তারা সেখানে ফিরবে। অন্যদিকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুই সমুদ্রবন্দরের (বাগেরহাটের মোংলা ও পটুয়াখালীর পায়রা) সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করার পাশাপাশি এই সেতু প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েরও একটি জরুরি অবকাঠামো। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক অবদান নির্ণয় করা সম্ভবপর নয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads