অতিরিক্ত স্নেহ-ভালোবাসায় শিশু হতে পারে পথভ্রষ্ট

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

অতিরিক্ত স্নেহ-ভালোবাসায় শিশু হতে পারে পথভ্রষ্ট

  • প্রকাশিত ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

আপনার সন্তান আপনার অমূল্য রতন। আদর ভালোবাসা আর মমতায় বাড়তে থাকবে বড় থেকে আরো বড়। কিন্তু জেনে কিংবা নিজের অজান্তে ভালোবাসার বেড়াজালে এমন কিছু কাজ করবেন না যা তাদের জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এমনি কিছু বিষয় জেনে নিন আজ।

অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয়। সন্তানের ভালো কাজে প্রশংসা অবশ্যই করুন। কিন্তু অবশ্যই মাত্রাতিরিক্ত নয়। এতে শিশু অহংকারী হয়ে উঠতে পারে। খারাপ বা অন্যায় কাজের জন্য কখনোই প্রশংসা করবেন না। অতিরিক্ত আদর করে কোনো কিছু অন্যায় আবদার পূরণ করতে যাবেন না। ছোট বয়সে সন্তানের সব ইচ্ছা পূরণ করলে ভবিষ্যতে তাকে আয়ত্তে আনা কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে।

কোনো কিছুতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবেন না। ‘খাবে না কেন, খেতেই হবে’, ‘খাওয়া থেকে শুরু করে তোমাকে ফার্স্ট হতেই হবে’ পড়ালেখা পর্যন্ত চাপ সৃষ্টি করা যেন নিত্যদিনের কর্মকাণ্ড। আপনি যদি জোর করে খাবার খাওয়ান, শিশুর মনে খাবারের প্রতি ভীতি জন্মাবে এবং সুযোগ পেলে সে এটি এড়িয়ে যাবে। এটি শুধু খাবারের ক্ষেত্রে নয়, পড়ালেখার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন হয় যে অতিরিক্ত পড়ালেখার চাপে তাদের খেলাধুলার সুযোগই থাকে না। হারিয়ে ফেলে তাদের রঙিন শৈশব। হয়ে ওঠে যান্ত্রিক। কমে যায় মুক্তবুদ্ধি, শিক্ষা হয়ে যায় পুঁথিগত।

এমন অনেক বাবা-মা আছেন, যাদের কাছে তাদের সন্তান সবসময় সঠিক। তারা সন্তানের ব্যাপারে কোনো নেতিবাচক কথা শুনতে পারেন না কিংবা মানতে চান না। মারাত্মক ভুল! এতে সন্তান ভুল বিষয়কে সঠিক মনে করবে এবং বারবার ভুল করবে। জীবনে বিপথে চালিত হবে। মনে রাখবেন, ভুল যে কেউই করতে পারে; আপনার সন্তানও। তাদের ভুলগুলো এড়িয়ে যাবেন না। তাকে শোধরানোর চেষ্টা করুন। আবার বাবা-মায়েরা নিজেরাও ভুল করতে পারেন। নিজেকে সবসময় সঠিক প্রমাণ করতে যাবেন না। ভুল করলে তা স্বীকার করুন। না হলে আপনার সন্তানও  একই শিক্ষা নেবে। কারণ আপনারাই তাদের আইডল। অন্য বাবা মা এবং তাদের সন্তানের ভুল ধরা এবং তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত নয়। দোষ-গুণ নিয়েই মানুষ। আপনি যদি অন্য সন্তানের দোষ আলোচনা করেন, সেটি আপনার সন্তান শিখবে এবং নিজে ভুল করে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করবে।

তুলনা ভয়ঙ্কর এক গ্যাঁড়াকল। অমুক পারে, তমুক পারে, তুমি পার না কেন? এমন তুলনা শিশুর মধ্যে হীনম্মন্যতা সৃষ্টি করে। প্রতিযোগিতার এই ইঁদুর দৌড়ে সন্তানকে ফেলে দিয়ে তার প্রতিভা নষ্ট করবেন না। প্রতিটি শিশু তার নিজস্বতায় পূর্ণ; তাকে বিকশিত হতে দিন। প্রতিযোগিতায় অভ্যস্ত না করে পরিশ্রমী ও উদ্যোগী করে তুলুন। বলুন তুমিও পারবে, অবশ্যই।

ভালো কাজের জন্য উপহার অবশ্যই দেবেন। এতে শিশু ভালো কাজে উৎসাহ পাবে। কিন্তু উপহারের ধরন যেন সর্বদা এমন কিছু হয় যা শিশুর জন্য শিক্ষামূলক। সুন্দর জীবন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে অযথা উপহার অনেক ক্ষেত্রে খারাপও বটে। তুমি যদি এটা খাও অথবা এটা কর, তবে চকোলেট দিব। কিছু একটা কাজ করানোর জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত এ ধরনের  উপহার (ঘুষ বলতে চাই না) পেলে উপহারটি তাদের কাছে অধিক মূল্যবান মনে হতে পারে। তখন কাজটি তারা স্বেচ্ছায় করবে না; লোভ তাকে তাড়িত করবে। আর নৈতিক অবক্ষয়ের সূচনা হয়তো এভাবেই হবে। তাই সন্তানদের শুরু থেকেই একটু একটু করে শেখাতে থাকুন কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ, কোনটা উচিত, কোনটা উচিত নয়। প্রথম থেকেই যদি স্নেহ-ভালোবাসা আর শাসনের মাঝে একটা সামঞ্জস্য থাকে, তাহলে পরে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হতে পারে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads