নদী চড় খাল বিল গজারির বন, টাঙ্গাইল শাড়ী তার গর্বের ধন। টাঙ্গাইলে রয়েছে ধলেশ্বরী, যমুনা, লৌহজং,বংশাইসহ ছোট বড় অনেক নদী। চাড়ান বিল, চাপড়া বিলসহ অসংখ্য জলাশয়। শীত শুরুর সাথে সাথে এসব নদী ও জলাশয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। দেশীয় প্রজাতির পাখি বক, পানকৌড়ি, মাছরাঙ্গাদের তেমন একটা চোখে নাপড়লেও বিদেশী (সাইবেরিয়ান) পাখির বিচরণ মুগ্ধ করে রেখেছে প্রকৃতি প্রেমিদের।
আমাদের দেশে অতিথি পাখিরা অতটা পথ পাড়ি না দিলেও তারাও অনেক দূর থেকেই আসে। বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকেই বেশির ভাগ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখিরা হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বতের লাদাখ থেকে সেন্ট্রাল এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে প্রবেশ করে। এ ছাড়া ইউরোপ, দূরপ্রাচ্য (যেমন সাইবেরিয়া) থেকেও এসব পাখি আসে। এরা কিছু সময় পর আবার ফিরে যায় নিজ দেশে।
নদী হাওড় বাওর এখন এসব অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত। পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান (বেলা)”র গবেষক, সোমনাথ লাহেরী বলেন, অনুকুল পরিবেশ, প্রয়োজনীয় খাবার থাকলে পাখিগুলো স্থায়ী হতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বীকারীদের উৎপাত, বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় গাছপালা, অপরিকল্পিত শিল্পকারখানা গড়ে উঠার কারণে আমাদের দেশী প্রজাতির পাখিই বিলুপ্তির পথে, সেখানে অতিথি পাখি ধরে রাখা সম্ভব হবেনা।
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুসারে অতিথি পাখি শিকার ও বিক্রয় করা দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এ আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নেই বলে এই মৌসুমে পাখিশিকারিদের দৌরাত্ম চলে। শুধু পেশাদার নয়, অনেক শৌখিন শিকারিও অতিথি পাখি শিকার করেন। প্রতিদিনই মারা পড়ছে শত শত অতিথি পাখি। এতে একদিকে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র।
অথচ এসব পাখিরা বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসলকে রোগ বালাই মুক্ত রাখে। এক শ্রেণির হাঁসজাতীয় পাখি আছে, যারা শুধু ক্ষেতের আগাছার বীজ খেয়ে জীবন ধারণ করে। এর ফলে প্রকৃতি গতভাবে জমির আগাছা দমন হয়। আবার কিছু পাখি ইদুর খেয়ে শস্য রক্ষায় সাহায্য করে। আর কিছু পাখি মাছ খেয়ে জীবন ধারণ করে। পাখির বিষ্ঠা মাটিতে জমা হয়ে মাটিকে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ করে। পাখি মানব জাতির জন্য অমুল্য স¤পদ। পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় পাখির গুরুত্ব অপরিসিম। পাখির অপরূপ সৌন্দর্য মানুষকে শুধু মনোমুগ্ধ করেনা মানব জাতির অপরিসিম উপকারও করে।
আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রকৃতির অমূল্য স¤পদ পাখির জীবন সুরক্ষা খুবই জরুরী। অতিথি পাখির প্রতি আমাদের সহানুভূতি প্রবণ হতে হবে। কেহ যেন পাখি শিকার না করে, তার জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। এর পাশাপাশি সবাইকে পাখি সংরক্ষণে ঐক্যবন্ধ ভাবে কাজ করতে হবে।