সোনাগাজীতে ঝুঁকিপূর্ন ভবনে চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম

ঝুঁকিপূর্ন ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফিচার

সোনাগাজীতে ঝুঁকিপূর্ন ভবনে চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম

  • সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৯ মার্চ, ২০১৯

সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের উত্তর চর সাহাভিকারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার কক্ষের ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে। তার পরও কক্ষ সংকটের কারণে ঝুঁকি নিয়ে ভবনটিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। ভবনের তিনটি কক্ষ পাঠদানের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। কক্ষ সংকটের কারণে বিদ্যালয়ে সহকারী ও প্রধান শিক্ষকের জন্য আলাদা কোনো কক্ষ নেই। অপর কক্ষটি শিক্ষকদের অফিস ও দাপ্তরিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। গত কয়েক বছর যাবত প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়ে নতুন ভবনের আশ্বাস দিলেও অধ্যবদি নতুন ভবন নির্মাণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

১৯৩০ সালে উত্তর চর সাহাভিকারী গ্রামের স্থানীয় কয়েকজন লোকের দান করা ৩৩ শতক জমির উপর টিন আর বেড়া দিয়ে একটি ঘর নির্মাণ করে বিদ্যালয়টি চালু করা হয়। আট-দশ বছর পর টিনের ঘরটি জোয়ার আর বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েন শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। পরে জোড়াতালি দিয়ে চলতে থাকে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম। দীর্ঘদিন পর স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় ১৯৯৪ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে চার কক্ষ বিশিষ্ট একটি দ্বিতল পাকা ভবন নির্মিত হয়। ভবনটির নিচ তলা খোলা। দোতলায় চলে পাঠদান। কয়েক বছর যেতে না যেতেই ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। দোতালায় উঠার সিঁড়ির হাতলগুলো ভেঙ্গে পড়ে গেছে। শ্রেণি কক্ষগুলোতেও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ২০০৫ সালে পুরাতন ভবনের পাশে নতুন একটি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হয়। ওই ভবনটিতে শুধু মাত্র প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রম আর শিক্ষকদের অফিস ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চলে। কিন্তু কক্ষ সংকটের কারনে পুরাতন ভবনের তিনটি কক্ষে ঝুঁকি নিয়ে দুই শিফটে শ্রেণি কার্যক্রম হওয়ায় পাঠদানে সংকট তৈরি হয়েছে। এ জন্যে সকালে তিনটি কক্ষে প্রথম-দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বসে পাঠদান করে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছুটির পর ওই দু’টি কক্ষে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির পাঠদান শুরু হয়। তবে পরীক্ষার সময় সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করে। ভবনটির চারটি কক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় ফেটে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ভবনের দরজা-জানালা। মেঝে ও ভবনের খুঁটিগুলোতে লম্বা ফাটল সৃষ্টি হওয়ার পর শিক্ষকেরা ঝুঁকি নিয়ে তিনটি কক্ষে শ্রেণি কার্যক্রম চালাচ্ছেন। বেশি সমস্যা হওয়ায় শিক্ষকদের কক্ষটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র আরাফাত হোসেন , ছাত্রী বিবি কুলসুম ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ মেহেদি হাসান, ছাত্রী আকলিমা আক্তার জানায়, বৃষ্টি হলে ছাদ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে এবং জানালা নষ্ট থাকায় পানি ডুকে তাদের বই-খাতা নষ্ট হয়ে যায়। ভবন না থাকায় তারা ঠিক ভাবে লেখা-পড়া করতে পারছেনা। এতে তাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে।

তৃতীয় শ্রেণির আব্দুল্লা রুপক ও ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস নুর নবী বলেন, হাতল না থাকায় সিঁড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ের দোতলায় উঠতে তাদের মধ্যে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। শ্রেণি কক্ষেও একইভাবে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার আতঙ্কে থাকে তারা।গত কিছুদিন পূর্বে ক্লাস চলাকালীন সময়ে পলেস্তারা খসে পড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভূপাল চন্দ্র দাস বলেন, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩৫ জন। এরা সবাই এলাকার দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পড়ালেখা করছে। পাঠদান ছাড়াও স্বাভাবিক ভাবে ঝুঁকি নিয়ে দোতলায় উঠা-নামা করতে হয়। গত বছরও সমাপনী পরীক্ষায় ২৮জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই পাশ করেছে। কক্ষ সংকটের কারনে এক সাথে সব শ্রেণির কার্যক্রম ও পরীক্ষা নিতেও সমস্যা হয়ে থাকে। তিনি বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন বরাদ্দ দিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে ঝুঁকিপূর্ন আবস্থায় রয়েছে। অনেক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা ফাটল দেখলে ভয় পেয়ে স্কুলে আসবে না এই আশঙ্কায় ফাটলগুলো রং করে ও কাগজ দিয়ে ডেকে দেওয়া হয়েছে।

তিনি শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং এলাকায় শিক্ষার হার বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হিটলারুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি তিনি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে কক্ষসংকট ও ভবনের দুরবস্থা দেখে নতুন একটি ভবন বরাদ্দের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে আবেদন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads