সুন্দর জীবন গঠনে আত্মসমালোচনা

সুন্দর জীবন গঠনে আত্মসমালোচনা

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

সুন্দর জীবন গঠনে আত্মসমালোচনা

  • ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ
  • প্রকাশিত ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮

সুখী, সমৃদ্ধ ও সুন্দর জীবন গঠনে আত্মসমালোচনার বিকল্প নেই। আত্মসমালোচনা সফল জীবনের পাথেয়। আত্মসমালোচনা না করে একে দাবিয়ে রাখার প্রচেষ্টা প্রকারান্তরে উন্নয়নের পথে বাধা ও পরকালীন মুক্তির অন্তরায়। হাদিসে আত্মসমালোচনাকারীকে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আগামীকালের জন্য সে কী প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা, (সুরা : হাশর, আয়াত ১৮)।

আত্মসমালোচনার আরবি অর্থ ইহতিসাব বা মুহাসাবা। দুটোরই অর্থ হিসাব নেওয়া। এ হিসাবের ব্যাপারটা প্রকৃতপক্ষে আখিরাতে আল্লাহর কাছে দুনিয়ার জীবনের সামগ্রিক কার্যক্রমের জবাবদিহির পূর্ব প্রস্তুতি মাত্র। প্রত্যেক ব্যক্তিকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর কাছে দুনিয়ার জীবনে কৃত যাবতীয় আমলের হিসাব দিতে হবে। সংঘবদ্ধ জীবনযাপনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্য ভাইকেও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে হবে। এসব কেবল কোরআন-সুন্নাহসিদ্ধই নয়, বরং শরিয়ত স্বীকৃত ও অনুমোদিত। এ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার সুযোগ নেই। এতে কেবল অনুশোচনাই বাড়বে। সুরা আম্বিয়ার শুরুতেই বর্ণিত হয়েছে, ‘মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় নিকটবর্তী, অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’ একই সুরার অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, ‘অমোঘ প্রতিশ্রুত সময় নিকটবর্তী হলে কাফেরদের চক্ষু উচ্চে স্থির হয়ে যাবে; হায় আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা এ বিষয়ে বেখবর ছিলাম; বরং আমরা গুনাহগারই ছিলাম’ (সুরা আম্বিয়া : ৯৭)।

আত্মসমালোচনা নানাভাবে করা যেতে পারে। প্রথমত, প্রত্যেক দিন, দিনের যে কোনো নির্দিষ্ট সময় আত্মসমালোচনা করা যায়। ফজর ও এশার নামাজের পর এ কাজের সর্বোত্তম সময়। এ সময় দিনের যাবতীয় ভালো-মন্দতে অনুরূপ ভুল না করার জন্য দৃঢ়সংকল্প গ্রহণ ও আল্লাহর কাছে তৌফিক কামনা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, কোনো কাজ করার পর তাতে ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলে সে জন্য সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর দরবারে তওবা ও মাগফিরাত চাইতে হবে। কারো প্রতি কোনো অন্যায় হয়ে থাকলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। আবার কারো অধিকার হরণ করে থাকলে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। এভাবে দিনের সব কাজকর্ম আত্মসমালোচনার দ্বারা কাজের খতিয়ান গ্রহণ করে ভালো ও কল্যাণকর কাজের জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হবে। পাপ ও ভুল-ত্রুটির জন্য তওবা ও মাগফিরাত কামনা করতে হবে। তৃতীয়ত, কোরআন-হাদিস অধ্যয়নকালে যখনই ঈমানদারের জীবন-বৈশিষ্ট্য ও দায়িত্ব-কর্তব্যের আয়াত সামনে আসবে নিজ জীবনে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখবে। যখন জাহান্নামের ভয়াবহ আজাবের কথা এবং জান্নাতের চিরসুখ ও শান্তির বাণী উপস্থাপিত হয় তখন নিজের আমল নিয়ে ভাবতে হবে। আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের জন্য কান্নাকাটি করতে হবে। সাহাবায়ে কেরাম এরূপ আমল করতেন।

 

লেখক : আলেম ও গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads