সুখী যদি হতে চান...

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

সুখী যদি হতে চান...

  • সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
  • প্রকাশিত ৬ জানুয়ারি, ২০১৯

জগতে সবাই সুখী হতে চায়, ছুটে চলে সুখের সন্ধানে। একটু সুখ পেতে অনেকে প্রচুর অর্থ খরচ করেন, যদিও সুখ সবাইকে ধরা দেয় না। তবে অল্প খরচে এমনকি নিত্যদিনের কিছু সাদাসিধে কাজের মধ্যেও এমনকিছু বিষয় লুকিয়ে থাকে, যা কাউকে পরিপূর্ণ সুখ ও শান্তি এনে দিতে পারে। আমাদের জীবনের মুহূর্তগুলোকে আনন্দে ভাসাতে পারে। এমন কিছু বিষয় নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত বিবিসির এক প্রতিবেদন অবলম্বনে লিখেছেন সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন


পরিমিত ঘুমের ব্যবস্থা করুন : খাবার ও ব্যায়ামের মতো মানসিক এবং শারীরিক বিশ্রাম সুস্থতা ও ভালো থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, ঘুম কম হলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, স্ট্রেস হরমোন লেভেল বেড়ে যায়, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা দেখা যায়। আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের শরীরের ভেতর নানা কাজ চলে। ভালো ঘুমের জন্য পরিশ্রম দরকার। শোবার ঘরকে পরিষ্কার এবং নীরব রাখা দরকার, রাতে দেরি করে খাওয়াও বন্ধ করতে হবে।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন : পানি মানবদেহের প্রধান উপাদান। প্রাপ্তবয়স্ক একজন নারীর শরীরে ৫৫ শতাংশ এবং পুরুষের শরীরে ৬০ শতাংশ কার্যক্ষমতার জন্য পানি প্রয়োজন। সে কারণে শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকলে সুস্বাস্থ্য, শক্তির মাত্রা এবং মনোযোগ শক্তি বাড়ে। যদি প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে বিস্বাদ মনে হয়, তাহলে তার সঙ্গে লেবু বা শসা কিংবা আদার টুকরো মেশানো যেতে পারে।

হাসতে হবে বেশি করে : হাসি সত্যিকারভাবেই মানুষের জন্য এক শ্রেষ্ঠ ওষুধ। নির্মল হাসি আমাদের পেশিগুলোকে আলগা করে, রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে, নাইট্রিক অক্সাইড বের করে দেয়, যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। হাসি স্ট্রেস হরমোন কমায় এবং শরীরের এন্ডোরফিন শিথিল করে যার ফলে আমাদের শরীর আরাম পায় এবং এটা প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে।

মানসিক প্রশান্তির উৎস খুঁজে নিন : যে বন্ধুদের সঙ্গ আনন্দ দেয় তাদের সঙ্গে সময় কাটানো, কমেডি দেখা ইত্যাদি হতে পারে মানসিক প্রশান্তির উৎস। শত কর্মব্যস্ততার পর মানুষ ঘরে ফেরে একটু শান্তির আশায়। ঘরে ফিরে সে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়, টিভি দেখে বা অন্য কিছুতে মগ্ন হয়। প্রকৃত অর্থে, ঘরেই প্রতিটি মানুষ প্রশান্তি খোঁজে। সেই ঘর প্রশান্তময় করে তুলতে গাছপালা রাখতে পারেন। ঘরের ভেতর গাছপালা আপনার স্ট্রেস কমিয়ে প্রশান্তি বাড়িয়ে দেবে। এছাড়া গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন ছাড়ে যা আমাদের বেঁচে থাকার শক্তি। কিছু কিছু গাছ বায়ু থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক টেনে নিয়ে বায়ুকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে।

মনের মতো করে বাসা সাজিয়ে নিন : আমরা আমাদের ঘরবাড়ি কীভাবে সাজাই, সেটা আমাদের মেজাজের ওপর খুবই প্রভাব ফেলে। সেইসঙ্গে কতটা ঘুমাই এবং আমাদের এনার্জি লেভেল কেমন, তাতেও প্রভাব ফেলে। যদি আপনি সেখানে নতুন রূপ দিতে চান তাহলে শোবার ঘর থেকে শুরু করুন। মুক্ত বাতাসের জন্য জানালা খুলে দিন, যতটা সম্ভব দিনের আলো ঘরে ঢোকার ব্যবস্থা রাখুন। কাপবার্ডের সবকিছু এবং বিছানার নিচে পরিষ্কার রাখুন। যদি আপনি একে এক ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যেতে চান, তাহলে গুরুত্ব দিতে পারেন চীনের প্রাচীন ‘ফেং শুই’ পদ্ধতিকে। ফেং শুই দিয়ে বোঝানো হয় বায়ু ও পানি।

দেয়ালে লাগিয়ে নিন পছন্দের রঙ : বাড়ির দেয়ালের রঙ মানুষের মুড বা মন-মেজাজের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে লাল রঙ এড়িয়ে যাওয়া উচিত। কারণ তা আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসকে দ্রুত করে, যা হার্ট-রেট এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে সবুজ রঙ প্রকৃতির প্রতিনিধিত্ব করে। এই রঙ ঘরের ভেতর ভারসাম্য, সমন্বয় এবং শিথিলতা এনে দিতে পারে। নীল রঙ একটি নান্দনিক গুণসম্পন্ন। এটি প্রশান্তির এক অনুভূতি তৈরি করে এবং বিশ্রাম এনে দেয়। এ কারণে এই রঙ শোবার ঘরের জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ।

পাখির কূজনে যেতে পারেন : লন্ডনের বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, পাখিদের গান বা কিচির-মিচির শব্দ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। স্বেচ্ছাসেবকদের একটি অ্যাপের মাধ্যমে তাদের মুড রেকর্ড করে রাখতে বলা হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, পাখির গান, গাছপালা এবং আকাশ তাদের যে মানসিক প্রশান্তি এনে দিয়েছিল, কয়েক ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তার রেশ ছিল। পাখির গান শুনতে প্রকৃতির মাঝে না যেতে পারলেও এই আধুনিক যুগে সমস্যা নেই। পাখির কিছু গান বা শব্দ ডাউন-লোড করে ফোনে সেভ করে নিয়ে হেড-ফোন দিয়ে শুনুন। আর চোখ বন্ধ করে ভাবুন প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

পোষা বিড়াল কাছে ডাকুন : চার হাজারের বেশি আমেরিকান নাগরিকের ওপর ১০ বছর ধরে চালানো গবেষণায় ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার স্ট্রোক ইনস্টিটিউট ইন মিনেপলিসের গবেষকরা দেখেছেন, বিড়াল পুষেছেন এমন ব্যক্তিদের অন্যদের তুলনায় হার্ট অ্যাটাকে কিংবা স্ট্রোকে মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ কম ছিল।

কর্মক্ষেত্রে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কর্মকাণ্ড : বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর অন্যতম স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো। যেমন— সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে এবং আইসল্যান্ড। কাজের ক্ষেত্রে সুখী এবং উন্নতির জন্য বেশকিছু কৌশল অনুসরণ করে থাকে সেখানকার মানুষ। সুইডেনে একটি রীতি প্রচলিত আছে, যা ‘ফিকা’ নামে পরিচিত। এর ফলে প্রতিদিন কফি ও কেক খাওয়ার জন্য বিরতি নিয়ে কলিগরা একত্রিত হন। তারা কফির পাত্র নিয়ে বসেন এবং সঙ্গে থাকে কিছু ঘরে বানানো খাবার। এই দেশগুলোতে কর্মক্ষেত্রে ফিকা এক ধরনের অবশ্য পালনীয় রীতি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads