সালাহউদ্দিন সালমান, সিরাজদিখান
সিরাজদিখানে কৃত্রিম পদ্ধতিতে জনপ্রিয় হচ্ছে মৌচাষ। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে যেমন, তেমনি মধু সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অনেকে। দুদিকে লাভের কারণে দিন দিন মৌচাষি বেড়ে চলেছে এ অঞ্চলে। কৃত্রিমভাবে কাঠের বাক্সে মৌচাষ করে আশার আলো দেখছেন অধিকাংশ মৌচাষি। মধু সংগ্রহের উত্তম সময় হলো নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। বাকি সময়টুকু মৌমাছি বাঁচিয়ে রাখার জন্য বর্ষার মৌসুমে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানসহ বিভিন্ন এলাকায় মৌবক্স নিয়ে আসে। বর্ষা মৌসুমে তেমন কোনো ফুল না থাকায় ধৈঞ্চা, শাপলা ও নারিকেলের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে জীবন ধারণ করেন এবং রানি মৌমাছি এ সময় বংশবিস্তার করে।
এখন কৃত্রিমভাবে মৌমাছির চাষ করে মধু আহরণের পদ্ধতির ক্রমেই দেশে প্রসার ঘটছে। যারা মধু সংগ্রহ করে তাদের শ্রমিক বলা হয়, আর যারা বাক্সের মধ্যে রানিকে দেখভাল করে তাদের সৈনিক বলা হয়। পুরুষ মৌমাছিদের কোনো কাজ করতে হয় না, শুধু প্রজননের সময় কাজে লাগে। উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের চরকমলাপুর গ্রামে মো. জহিরুল ইসলাম (৭০) জানান, ‘আমি এ এলাকায় মাসখানেক আগে এসেছি। ১৫ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। প্রথমে ৬টি বাক্স নিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন তা দাঁড়িয়েছে ১১০টিতে। আমার একটি রোগ হয়েছিল। তখন চিকিৎসক আমাকে খাঁটি মধু খাওয়ার জন্য বলেছিলেন। তখন আমি ঢাকার সব জায়গায় খোঁজ করে কোথাও খাঁটি মধু পাইনি। তখন বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এ পেশায় জড়িয়ে পড়ি।’
এ পেশায় ভালো লাভ থাকায় এখন স্থানীয় লোকজনও এ কাজে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। ইছাপুরা গ্রামের মৃত আবদুল করিম মৃধার ছেলে মনিরুজ্জামান লিটু (৪৩) জানান, ‘প্রথমে আমি ১৩০টি বাক্স নিয়ে শুরু করি। এখন আমার বাক্স ২৩০টি হলেও নষ্টগুলো বাদ দিয়ে ২২০টির মতো থাকবে। অন্য জেলা থেকে বর্ষার মৌসুমে আমাদের এলাকায় যারা আসতেন, তাদের দেখে ও স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে এ কাজ শুরু করি। আমি এ পেশায় তিন বছর ধরে আছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, সিরাজদিখানে মৌচাষে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন। মৌচাষ করে মধু সংগ্রহের পাশাপাশি জমির ফলন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মধু সংগ্রহের জন্য মৌমাছি যখন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে ঘুরে বেড়ায়, তখন ফসলের পরাগায়নে সহায়তা করে। যার ফলে ফসলের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পায়। দুদিকেই লাভ, তাই আগের তুলনায় মৌচাষি বেড়েছে।