শনিবার ঢাকায় সমাবেশ করতে অনড় বিএনপি

লোগো বিএনপি

রাজনীতি

শনিবার ঢাকায় সমাবেশ করতে অনড় বিএনপি

  • রেজাউল করিম লাবলু
  • প্রকাশিত ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করা নিয়ে অনড় বিএনপি। এ ঘোষণা দিয়ে দলটির নেতারা জানান, নীতিনির্ধারণী কিছু বিষয় জনগণকে জানাতে ও দলের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঘোষণার জন্য এ সমাবেশ খুবই জরুরি। নীতিনির্ধারণী বিষয়ের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

এদিকে আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করবে না জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সমাবেশ না করলেও নেতাকর্মীরা ঢাকা শহরে সজাগ থাকবে। জবাবে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এটি আরো উদ্বেগজনক। তারা পরিকল্পিতভাবে এসব করছে। বিএনপিও এ নিয়ে সজাগ থাকবে।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, যেকোনো মূল্যে বিএনপি সমাবেশ করবে। তারিখ ঘোষণার পর প্রস্তুতি শুরু করেছেন তাদের দলের নেতারা। সমাবেশের অনুমতি পেতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফোন করেছিলেন মির্জা ফখরুল। মির্জা ফখরুল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, তারা রাজধানীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবেন। এজন্য সরকারের সহযোগিতা চান। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে তিনি বিএনপিকে জানাবেন।

অনুমতি পাওয়ার অংশ হিসেবে দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলকে ডিএমপিতে পাঠানো হয়। পুলিশ কমিশনার ঢাকায় না থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রতিনিধিদল। পাশাপাশি প্রতিনিধিদলের সদস্য এ্যানী দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের ফোনে ধরিয়ে দেন মির্জা ফখরুলকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবেন। পুলিশ কর্মকর্তা অক্টোবরের প্রথমে সমাবেশ করার অনুরোধ জানালে মির্জা ফখরুল তাদের বলেন, সেটা হবে না। তারা সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সমাবেশ করতে চান। ২৯ সেপ্টেম্বর অনুমতি না হলে পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর তাদের সমাবেশের অনুমতি যাতে দেওয়া হয়।

শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে প্রকাশ্যে বলেছেন, কেউ সমাবেশের অনুমতি চাইলে যেন অনুমতি দেওয়া হয়। বিএনপি প্রত্যাশা করে ডিএমপি তাদেরকে সমাবেশের অনুমতি দেবে। না দিলেও তারা সমাবেশ করবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকার অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করতে পারে। তার আগেই বিএনপি তাদের নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করতে চায়। অন্তর্বর্তী সরকার বলে সংবিধানে কিছু নেই। কিন্তু সংবিধানের আলোকে বিএনপির প্রত্যাশিত নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা সম্ভব। বিএনপির রূপরেখায় নির্বাচনকালীন একজন প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ১০ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ নিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন। রাষ্ট্রপতির পরামর্শক্রমেই ঐকমত্যের ভিত্তিতে ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে।

গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার সংঘাতের চেষ্টা করছে।

২৯ সেপ্টেম্বর পুরো রাজধানী দখলে রাখার যে ঘোষণা ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম দিয়েছেন তার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ওইদিন কর্মসূচি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কথায় প্রমাণ হয় কারা সংঘাতের চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, তারা যা বলছেন তা গণতন্ত্রের ভাষা নয়। জনগণ বিবেচনা করবে সংঘাত-সহিংসতা কারা শুরু করে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর কারা লগি-বৈঠা দিয়ে ২৭ তরুণকে হত্যা করেছিল। এটা ভুলে যাওয়ার কথা নয়। দুর্ভাগ্য, মিডিয়া কেন জানি সেসবকে সামনে তুলে আনছে না।

গতকাল পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে ২৯ তারিখ শনিবার ছুটির দিন সমাবেশ করলে ভালো হয় বলেও জানানো হয়। সেভাবে জনসভার অনুমতির জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এখন ভিন্ন কথা বলা হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ওইদিন নাকি আওয়ামী লীগের কর্মসূচি আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতবিনিময় মহানগর নাট্যমঞ্চে। আর বিএনপির জনসভা হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এখানে বিরোধের সম্পর্কটা কোথায়?’

অন্য কোনো দিনের জন্য অনুমতি চাওয়া হবে কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।

সমাবেশে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের জনসভায় আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন সব বলে দিলে হবে না তো।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘সরকার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করছে।’

‘দেশে অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের চেষ্টা করা হচ্ছে’- নিউইয়র্কে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এই কথা বলে প্রধানমন্ত্রী জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।

আগামী শনিবারের সমাবেশ সফল করতে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সকালে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল। বৈঠকে অংশ নেন ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads