আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুর্গখ্যাত বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-মোল্লাহাট ও ফকিরহাট) আসনে ৪ জন সংসদ সদস্য প্রার্থী রয়েছেন। বিগত ২০১৪ সালের নির্বাচন ছাড়া সবক‘টি নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। এবারো তার ব্যাতিক্রম হবে না এমনটাই মনে করছে এ আসনের ভোটাররা।
এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্রাতুষ্পুত্র গত চার বারের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন। তিনি এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খুলনা বিভাগের সম্বন্নয়কারী। অপর দিকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি মেরিণ ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা। তিনি এবারের নতুন মুখ। তাই ভোটাররা বলছেন, এবার এই আসনে লড়াই হবে নবীন-প্রবীনে।
বাগেরহাট-১ আসন ৩টি উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। তার মধ্যে ফকিরহাটে ৮টি এবং মোল্লাহাট ও চিতলমারী উপজেলায় ৭টি করে ইউনিয়ন। মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৩ হাজার ২৮ জন। যার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৩ হাজার আর নারী ভোটার ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৬০ জন। যারা ১১০টি ভোট কেন্দ্রের ৫৯৫ ভোট কক্ষের মাধ্যমে তাদেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ বাড়ছে।
বাগেরহাট জেলা রিটানিং কর্মকর্তার অফিস সুত্রে জানাগেছে, বাগেরহাট- আসনে ৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তার মধ্যে ঋণ খেলাপীর অভিযোগে আহমেদ জোবায়ের নামের জাপা প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। আর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষনা করা হয় মহাজোট থেকে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুস্পুত্র ও বর্তমান এমপি শেখ হেলাল উদ্দিন (আওয়ামী লীগ), এক্যফ্রন্ট থেকে সাবেক এমপি শেখ মুজিবর রহমান (বিএনপি), ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা (বিএনপি), মো. লিয়াকত আলী শেখ (ইসলামী আন্দোলন), এম, ডি শামছুল হক ( বাংলাদেশ মুসলিম লীগ)। তবে কেন্দ্রের নির্দেশে বিএনপির প্রার্থী শেখ মুজিবর রহমান মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।
সুত্রমতে, বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াকে মধুমতি নদী বাগেরহাটের চিতলমারী ও মোল্লাহাট উপজেলাকে পৃথক করলেও যুগ যুগ ধরে গোপালগঞ্জের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব জেলার উত্তরের এই তিন উপজেলায় বহমান। স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে অধিকাংশ জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনেই এ আসন থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। আসনটি পরিণত হয়েছে আওয়ামীলীগের শক্ত ঘাঁটিতে। বিগত সময়ে মুসলিমলীগ, জাতীয় পার্টি বা বিএনপি এই এলাকায় রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে যেয়ে হোঁচট খেয়েছে বার বার। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারীর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ডা: মোজাম্মেল হোসেন (বর্তমানে তিনি বাগেরহাট-৪ আসনের এমপি) ৬২ হাজার ৪৫ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রার্থী বিএনপির মুজিবুর রহমান পান ৪০ হাজার ১ শ ৫৫ ভোট। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর বির্তকির্ত নির্বাচনে বিনাভোটে বিএনপির প্রার্থী মুজিবুর রহমান কয়েক মাসের জন্য এমপি নির্বাচিত হন। পরবতীর্তে একই বছরের ১২ জুন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই আসন থেকে ৭৭ হাজার ৩শ ৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম বিএনপি প্রার্থী মুজিবুর রহমান পেয়েছিলেন ৪৭ হাজার ২শ ৯৯ ভোট। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা আসনটি ছেড়ে দিলে তার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দীন উপ-নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে বাগেরহাটের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দীন আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে বাগেরহাট -১ আসনে ১ লাখ ৬ হাজার ২শ ৩৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী মুজিবুর রহমান পেয়েছিলেন ৮২ হাজার ৯শ ২২ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারী নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাগেরহাট-১ আসন থেকে ইতিপূর্বে দুই বার নির্বাচিত এমপি শেখ হেলাল উদ্দীন মামলাসহ নানা জটিলতায় দেশের বাইরে থাকায় তিনি এই নির্বাচনে অংশ নেননি। এঅবস্থায় আওয়ামীলীগ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আবারও এই আসন থেকে নির্বাচন করে ১ লাখ ৪২ হাজার ৯শ ৭৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী বিএনপির শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু পান ৫৮ হাজার ৫ শ ৩৩ ভোট। পরে শেখ হাসিনা আসনটি ছেড়ে দিলে শেখ হেলাল উদ্দীন দেশে ফিরে উপ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হেলাল উদ্দীন এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
এই আসনের চিতলমারী উপজেলাকে বলা হয়ে থাকে ‘আওয়ামীলীগের ভোটব্যাঙ্ক’। এই আসনের বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলায় এই দুই দলের ভোটের ব্যবধান তেমন বেশি থাকে না। ফলে বরাবরই জয়ের নিয়ামক হয়ে ওঠেন চিতলমারীর ভোটাররা। আর এখানকার সিংহভাগ ভোটই যায় আওয়ামী লীগের বাক্সে।
চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পীজুস কান্তি রায় এই প্রতিবেদককে জানান, সপ্তম থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত টানা চারটি মেয়াদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এই আসনে আওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি শুধু এই আসন নয়, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের রুপকার। এই এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। এলাকার সাধারণ মানুষ এই আসনে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদেরই দেখতে চান সব সময়