লক্ষ্য যখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

লক্ষ্য যখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

  • প্রকাশিত ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা প্রায় শেষ পর্যায়ে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন। ইতোমধ্যে ভর্তির প্রস্তুতিও শুরু করেছেন অনেকেই। আবার অনেকে মেধাবী শিক্ষার্থী হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। এসব শিক্ষার্থীর বড় একটা অংশ ভর্তি হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সিমেস্টার পদ্ধতিতে পড়াশোনা, পছন্দের বিষয় সহজে পাওয়া, সেশনজটমুক্ত, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস থাকার কারণে অনেকের কাছে প্রথম পছন্দ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান হাসান বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সবার ধারণা হলো পড়াশোনার মান ভালো নয়। লেকচার শিট দিয়ে পড়ানো হয়। কিন্তু আমি বলব, পাবলিক আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পার্থক্য নেই। আপনি মেধাবী কিন্তু আপনার মেধা কীভাবে কাজে লাগাবেন এটাই মুখ্য। শিক্ষকরা সাফল্যের পথ দেখিয়ে দিতে পারবেন কিন্তু অর্জন করতে হবে নিজেকে। বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাক্টর নয়, মেধাকে সঠিকভাবে কাজ লাগিয়ে ভালো কিছু অর্জন করা সম্ভব।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রনি তালুকদার জানান, বিশ্ববিদ্যালয় সেই জায়গা যেখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের জ্ঞানের সান্নিধ্যে এসে স্বপ্নের চাষ করে। সে তুলনায় আমি বলব, আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। গবেষণা ও গঠনমূলক কাজে আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও জগ্ননাথ হলের প্রাধাক্ষ্য অসীম সরকার বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীর তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা সীমিত। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ভরসা এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু শিক্ষার মানের দিক থেকে সব এক নয়। দেশে এখন অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের শিক্ষাদানের মান অক্ষুণ্ন রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকের বিরুদ্ধে শিক্ষার মান নিয়ে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তাই সতর্কতার সাথে জেনে বুঝে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ভালো। আমি মনে করি, উচ্চশিক্ষার প্রসারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

বছরে তিনবার ভর্তির সুযোগ : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে তিনবার ভর্তির সুযোগ পাবেন আপনি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ‘স্প্রিং’ সিমেস্টার ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে। এ ছাড়া এপ্রিল-মে মাসে ‘সামার’ এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ‘ফল’ সিমেস্টারে শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে। সাধারণত এই তিন সিমেস্টারে দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এ ছাড়া ‘উইন্টার’ ও ‘অটাম’ সেশনেও ভর্তির সুযোগ দেয় কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই চলছে ভর্তি কার্যক্রম। ভর্তি ফরম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও অ্যাডমিশন অফিস থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

ভর্তির যোগ্যতা : মানসম্মত বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির যোগ্যতা ভিন্ন। এমনকি বিষয়ভেদে ভিন্ন যোগ্যতা চাওয়া হয়ে থাকে। এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ-৩.৫০ (চতুর্থ বিষয় বাদে) চাওয়া হয়। জিপিএ-২.৫০ থাকলেও আবেদন করা যায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই যোগ্যতাগুলো থাকার পরও মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। দেশসেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে প্রস্তুতিটা ভালো থাকতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে হলে ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। সেই সঙ্গে গণিতেও ভালো করতে হবে।

সুযোগ-সুবিধা : বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের অনেকের লালিত স্বপ্ন থাকলেও আর্থিক সামর্থ্য থাকে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা অনেক ব্যয়বহুল। তারপরও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে দরিদ্র ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোট আসনের ৬ শতাংশ দরিদ্র ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সম্পূর্ণ বিনা বেতনে ভর্তির সুবিধা এবং সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা আছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ভালো ফলের বা সিজিপির ওপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৃত্তি ও মোট কোর্স ফি থেকে বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকে।

শিক্ষার্থী : ইউজিসি তথ্য অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার লাখের কাছাকাছি এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। বর্তমানে এ সংখ্যা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৬১ শতাংশ।

 

তন্ময় কুমার রায়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads