যে কলেজে যেতে রাস্তায় হোঁচট খান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফিচার

যে কলেজে যেতে রাস্তায় হোঁচট খান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা

  • প্রকাশিত ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

দেলোয়ার কবীর, ঝিনাইদহ

কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিনশর বেশি, রয়েছে প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও কর্মচারী। কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর অধিকাংশই স্থানীয় ও দরিদ্র শ্রেণির। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। নারীদের শিক্ষাদান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কলেজটি অবদান রেখে চলেছে। নেই শুধু কলেজে যাতায়াতের ভালো রাস্তা। যানবাহন তো দূরের কথা, হেঁটে যেতেও হোঁচট খেতে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটে। ফলে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না, বরং যাতায়াতের রাস্তার কথা চিন্তা করে অনেকেই অন্য কলেজে চলে যাচ্ছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম কাঁচেরকোল কলেজ। ২০০১ সালে বিশিষ্ট গুণীজন ডা. শহীদুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন কলেজটি। মাসিক বেতনপ্রাপ্তির (এমপিও) অন্তর্ভুক্ত হয় ২০০৪ সালে। ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অজপাড়াগাঁও সাদেকপুর-কাঁচেরকোল এলাকায় অবস্থিত কলেজটি। অথচ ব্যাপক শিক্ষিত ও গুণীজনের আবাসস্থল বলে খ্যাত এই বিদ্যাপীঠ।

কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, কাঁচেরকোল কলেজের সামনের রাস্তায় ১৫-১৬ বছর আগে ইট বিছানো হলেও সংস্কারের অভাবে তা এখন ভেঙেচুরে নষ্ট হয়ে গেছে। গত বছর রাস্তাটি পাকা করার জন্য দরপত্র আহবানের পর অনিবার্যকারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি ব্যবহারের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়ে।

শিক্ষার্থী ঐশ্বর্য, রানা ও তিশা জানান, বছরের কোনো সময়েই তারা কলেজে খেলাধুলা করতে পারেন না মাঠের একাংশে বড় গর্ত, অপর অংশে মাটিভরাটের কাজ না করার কারণে। কলেজটিতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমসহ পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের অভাব। মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করতে সবাই আগ্রহী। তাই শিক্ষকদের উপস্থিতি থাকলেও শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত থাকতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য কমনরুম ও ভালো মানের টয়লেট সুবিধাও নেই বলে জানান তারা।

কাঁচেরকোল কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অভিভাবক জানান, কলেজটি এ এলাকার একমাত্র উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অন্যান্য কলেজের মতো কোনো ভালো ভবন নেই। ফলে পুরনো পাকা ভবনে কোনো প্রকারে কাজকর্ম করেন শিক্ষকরা। আর শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমের অভাবে এলোমেলো চলাফেরা করেন যা লজ্জাজনক। আধুনিক শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই।

কাঁচেরকোল কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রকিব মিয়া জানান, পুরনো দ্বিতল ভবন ও টিনের পাঁচটি ঘরের ক্লাসরুমে ক্লাস নেওয়া হয়। বার্ষিক ও অন্য পরীক্ষার সময় অন্যদের ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া হয় অনেক সময়। মাল্টিমিডিয়ার জন্য পর্যাপ্ত ক্লাসরুম না থাকায় প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে এক রুম থেকে অন্য রুমে টানাটানি করতে হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কমনরুম না থাকায় মাঝে মাঝে নাজুক অবস্থায় পড়তে হয়। ২২৬ শতাংশ জমির ওপর স্থাপিত হলেও কলেজের চারদিকে কোনো বাউন্ডারি দেয়াল নেই। তাই দিনরাত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। তিনি আরো জানান, ডিগ্রি ক্লাস চালু করতে হলে আরো অনন্ত দশটি ক্লাসরুমের প্রয়োজন। কিন্তু ক্লাসরুমের অভাবে ডিগ্রি ক্লাস শুরু করা অসম্ভব। কলেজটিতে ১৬ জন শিক্ষক ও নয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অবিলম্বে কাঁচেরকোল কলেজের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে অধ্যক্ষ আবদুর রকিব মিয়া সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads