মো. তরিকুল ইসলাম, ঝিকরগাছা
যশোর শহর থেকে ঐতিহাসিক যশোর রোডের গদখালী এলাকায় ১৯৮২ সালে শুরু হয় বাণিজ্যিকভিত্তিতে ফুলের চাষ। যশোরের ঝিকরগাছা, শার্শা, কেশবপুর, মনিরামপুর, চৌগাছায় উৎপাদিত ফুল দেশের সত্তর ভাগ চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানি শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মধ্যে ৫২টি জেলায় যায় যশোরে উৎপাদিত এ ফুল। আগে সিজনাল ব্যবসা হলেও বর্তমানে সারা বছর ফুলের চাষ হয়। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির দেওয়া তথ্যমতে, যশোরে শুধু ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুলচাষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ জড়িত। এর মধ্যে নারী রয়েছে প্রায় লক্ষাধিক। যশোর জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর ১২০ কোটি পিস ফুল উৎপাদন হয়। ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম জানান, গদখালীতে উৎপাদিত রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুল আন্তর্জাতিক মানের। গ্লাডিওলাস ও রজনীগন্ধার মান ভারতের চেয়ে উন্নত। এখানকার জারবেরার মান চায়নার চেয়ে ভালো। সৌদি আরব, কাতার, দুবাই, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ আরো বেশকিছু দেশে এসব ফুল রফতানির সুযোগ রয়েছে। এখন সবজি ও পানের সঙ্গে অল্পকিছু ফুল রফতানি হয়। প্রতিবছর গদখালীতে চাষিরা নতুন নতুন জাতের ফুল চাষ করেন। এ বছর প্রথমবারের মতো গদখালীতে বিশেষ ধরনের গোলাপ লং স্টিক রোজ চাষ শুরু হচ্ছে। এ কাজটি করছেন গদখালী এলাকার ইমামুল হোসেন। ভারতের পুনে থেকে চারা এনে ৪০ শতক জমিতে এর চাষ শুরু করেছেন।
গদখালীতে উৎপাদিত রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুল আন্তর্জাতিক মানের। গ্লাডিওলাস ও রজনীগন্ধার মান ভারতের চেয়ে উন্নত। এখানকার জারবেরার মান চায়নার চেয়ে ভালো বলে দাবি করে ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, সৌদি আরব, কাতার, দুবাই, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ আরো বেশকিছু দেশে এসব ফুল রফতানির সুযোগ রয়েছে। এখন সবজি ও পানের সঙ্গে অল্পকিছু ফুল রফতানি হয়। এভাবে খুব বেশি ফুল বাইরে পাঠানো যায় না। শুধু ফুল রফতানির ক্ষেত্রে সরকার যদি আলাদা নীতিমালা করে, তাহলে ফুল রফতানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। এ জন্য যেসব দেশে ফুলের চাহিদা রয়েছে, সেসব দেশের বাজারের সঙ্গে ফুলচাষিদের সংযোগ করিয়ে দিতে হবে। এ জন্য দূতাবাসগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। ফুল রফতানির বিষয়ে আলাদা নীতিমালা করা হলে এ বিষয়গুলোর সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে। বাংলাদেশের খবরকে শের আলী বলেন, বাবা আবদুর রহমান সরদারের ছিল নার্সারি ব্যবসা। ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের ‘সরদার নার্সারি’র মালিক। তিন যুগের ব্যবসা। একপর্যায়ে বাবার এ ব্যবসার হাল ধরেন শের আলী। ফলদ ও বনজ বৃক্ষের চারা উৎপাদন করে সুনাম কুড়ান। নার্সারি ব্যবসাকে আরো প্রসারিত করেন। যশোর-বেনাপোল সড়কের গদখালীতে তৈরি করেন আরো একটি নার্সারি। স্মৃতি রোমন্থন করে শের আলী বলেন, ১৯৮৩ সালের অক্টোবরের কোনো এক দিন তিনি বসেছিলেন এ নার্সারিতে। এরশাদ সরকারের শাসনামলের সেই দিনটিতে ছিল হরতাল। ভারত থেকে বেনাপোল হয়ে দেশে ফেরেন যশোরের নূর ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। হরতাল থাকায় বেনাপোল থেকে তিনি রিকশায় রওনা হন যশোরের পথে। গদখালীতে সরদার নার্সারির সামনে রিকশা দাঁড় করিয়ে শের আলীর কাছে পানি খেতে চান তিনি। ভদ্রলোকের হাতে ছিল গামছায় মোড়ানো ২০০-৩০০ রজনীগন্ধার স্টিক।
পানি খাওয়ানোর ফাঁকে কথায় কথায় নূর ইসলাম শের আলীকে বলেন, ‘আপনি তো নার্সারি ব্যবসা করেন। এর পাশাপাশি এই ফুলের চাষ করুন, ভালো লাভ হবে। এসব ফুল আর ভারত থেকে আনতে হবে না। আমিই ভারত থেকে বীজ এনে দেব।’ কথা অনুযায়ী নূর ইসলাম একদিন ২-৩ হাজার টাকায় আড়াই মণ ওজনের এক বস্তা রজনীগন্ধার বীজ এনে দেন শের আলীকে। সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো লাগিয়ে ফেলেন তিনি। কিন্তু শীতকালে বীজ লাগানোয় প্রথম দফায় হতাশ হতে হয় তাকে। পরেরবার সময়মতো বীজ লাগানোয় ৬ মাস পর রজনীগন্ধার হাসিতে ভরে ওঠে শের আলীর ক্ষেত। কিছু ফুল নিয়ে ছুটলেন ঢাকায়। হাইকোর্ট মাজারের বটতলায় সেগুলো ২০০ টাকায় বিক্রি করেন।