প্রতিদিন সাতসকালে বাইসাইকেল নিয়ে রেলস্টেশন হয়ে তিনি ছুটে চলেন স্থানীয় হাটবাজারে। সঙ্গে থাকে ব্যাগ, জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন ম্যাগাজিন। নেই কোনো ক্লান্তি, নেই বিশ্রাম। বিরামহীনভাবে প্রতিদিন অন্তত ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও বিভিন্ন ম্যাগাজিন বিক্রি করছেন তিনি। বলছি বিজয়নগর উপজেলার হরেষপুরের আম্বারিয়া গ্রামের মরহুম নিদান আলীর ছেলে মো. শাহ আলমের (৪৫) কথা। স্থানীয়দের কাছে যার পরিচয় ‘হকার’। একটানা প্রায় ২৭ বছর ধরে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত স্থানীয় হাটবাজারে পত্রিকা বিক্রি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। আর পত্রিকা বিক্রির আয় দিয়েই চলছে তার পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ।
প্রতিটি মানুষ তার ব্যক্তিগত জীবনের গণ্ডির মধ্যে দৈনন্দিন কিছু না কিছু কাজ করে সাংসারিক জীবনব্যবস্থার মানোন্নয়নের চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে কারো সাংসারিক জীবনে আর্থিক সচ্ছলতা আসে, আবার কারো আসে না। আর সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা আনার একমাত্র চাবিকাঠি হলো ইচ্ছাশক্তি, শ্রম আর আত্মবিশ্বাস। আর এ সূত্র মেনেই শাহ আলম নিজের ইচ্ছা শক্তি, শ্রম আর আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে পত্রিকা আর ম্যাগাজিন বিক্রি করে জয় করে নিতে পেরেছেন পরিবারের অভাব-অনটনকে। সংসারে মা, স্ত্রী ও ৫ ছেলেমেয়ে নিয়ে তিনি এখন সুখে-শান্তিতেই দিনানিপাত করছেন।
ক্ষুদ্র ব্যবসা করে সংসার চালালেও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার প্রতি তার রয়েছে যথেষ্ট আগ্রহ। বর্তমানে তার এক ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে, এক ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে, এক ছেলে মাদরাসায় ও এক মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করলেও স্ত্রী-সন্তানদের তিনি কিছুই বুঝতে দেন না। যে কারণে সমাজের অসহায় হতদরিদ্র মানুষের কাছে তিনি আজ একজন আদর্শ পুরুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
শাহ আলম জানান, প্রতিদিন সকালে ৮টায় বাড়ি থেকে পত্রিকা বিক্রির উদ্দেশ্যে সাইকেল চালিয়ে আখাউড়ার আজমপুর রেলওয়ে স্টেশনে যেতে হয়। সেখান থেকে ট্রেনে আসা পত্রিকাগুলো আখাউড়ায় নিয়ে আসা হয়। তারপর প্রয়োজনীয় ভাঁজ দিয়ে পত্রিকাগুলো নিয়ে বিরামহীনভাবে ছুটে চলতে হয় আখাউড়া পৌর শহর, খরমপুর, দুর্গাপুর, আজমপুর, সিঙ্গারবিল, মিরাশানি, আওলিয়া বাজার, চম্পকনগরসহ বিভিন্ন জায়গায়। দুপুরের খাবার রাস্তায়ই সেরে নিতে হয়। প্রতিদিন প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ ঘুরে পত্রিকা বিক্রি করতে গিয়ে কখনো সন্ধ্যা হয়ে যায়। তিনি জানান, আজ থেকে ২৭ বছর আগে মাত্র ২০টি পত্রিকা দিয়ে তার যাত্রা শুরু। বর্তমানে তিনি প্রায় ৩০০ জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও ৫০-৬০টি বিভিন্ন ম্যাগাজিন বিক্রি করছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে পত্রিকার মাসিক কিছু গ্রাহক রয়েছেন। তারা মাস শেষে টাকা পরিশোধ করেন। তা ছাড়া হাটবাজারে নগদ অর্থেও পত্রিকা বিক্রি হয়। এ কাজে প্রতি মাসে তার ১২-১৪ হাজার টাকা আয় হয়। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসে পত্রিকা বন্ধ থাকার দিন ছাড়া শাহ আলমের কোনো অবসর নেই। তবে প্রতিদিন সাইকেলে চড়ে পত্রিকা বিক্রি করা কষ্টকর বলেও জানান তিনি। অন্য পেশায় যাওয়ার মতো প্রয়োজনীয় পুঁজি না থাকায় বাধ্য হয়েই তাকে এ পেশায় থাকতে হচ্ছে।