কক্সবাজারের টেকনাফে সদ্য উৎপাদনে যাওয়া সোলার পার্কের মধ্য দিয়ে নতুন এক মাইলফলক ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। সোলার পার্কটি ওই এলাকার ৩ লাখ মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রশমনেও বিশেষ অবদান রাখবে।
গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থাটির বিশেষ প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে সবুজ শক্তির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের সম্ভাব্য সফলতার এই ইঙ্গিত।
দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫ শতাংশই এখন আসছে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে। বিশেষজ্ঞরা খাতটির এই অর্জনকে সবুজ শক্তির দিকে দেশের অগ্রযাত্রা হিসেবেই দেখছেন। তাদের আশা ২০২০ সাল নাগাদ এই খাত থেকে আসবে চাহিদার মোট ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ।
‘উইথ সোলার ফার্ম অ্যান্ড রুফটফ প্যানেলস, বাংলাদেশ ইঞ্চড টুওয়ার্ড গ্রিন পাওয়ার গোল’ শিরোনামে রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের টেকনাফের নতুন সোলার পার্কটি ওই এলাকার ৩ লাখ মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রশমনেও বিশেষ অবদান রাখবে।
এই সোলার পার্কের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টেকনাফ সোলার টেক এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূহের লতিফ খানের বরাতে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সোলার পাওয়ারের ভবিষ্যৎ অসাধারণ। বায়ু কলের ভবিষ্যৎ এখানে উজ্জ্বল।
তিনি জানান, তাদের তৈরি এই সোলার পার্কটির উৎপাদন সক্ষমতা ২৮ মেগাওয়াট। তবে সরকারের সঙ্গে করা চুক্তি অনুসারে তারা এখন জাতীয় গ্রিডে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছেন। সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের নাফ নদীর পাড়ে হ্নীলার আলুখালীতে অবস্থিত দেশের প্রথম সোলার পার্ক এটি। প্রায় ১১৬ একর জায়গাজুড়ে ৮৭ হাজার প্যানেল আর ৩৪১টি সোলার টেবিলের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে এই পার্ক। প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সোলার পার্কটি ১৮ মাস আগে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। সেই বিদ্যুৎ এখন উখিয়া-টেকনাফের গ্রাহকদের ঘরে ঘরে আলো জ্বালাচ্ছে।
এদিকে সবুজ শক্তির পথে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অনেকটাই এগিয়ে গেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দীপাল সি. বড়ুয়া। তিনি জানান, দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রায় ১২ শতাংশই নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করছে। বসতবাড়ি পর্যায়ে প্রায় ৫২ লাখ সোলার সিস্টেম রয়েছে দেশে। এর বাইরে টেকনাফের এই নতুন সোলার পার্কটি আমাদের জন্য বিশেষ সুখবর বয়ে এনেছে। এই খাতে বিনিয়োগের জন্য নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহী করবে।
তিনি জানান, টেকনাফের এই পার্কটির মতো আরো কয়েকটি প্রকল্প পাইপলাইনে রয়েছে। সেগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনাও চলছে। একটু পৃষ্ঠপোষকতা পেলেই সেগুলোর কাজ শুরু করতে পারবেন উদ্যোক্তারা।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, একদিন বাংলাদেশের প্রতিটি ভবনের ছাদেই থাকবে সোলার প্যানেল। তা থেকেই মিটবে ওইসব ভবনের বাসিন্দাদের বিদ্যুতের চাহিদা। এ ছাড়া দেশের কারখানাগুলোও একসময় সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে চলবে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সোলার প্যানেল স্থাপন ব্যয়বহুল মনে হলেও পরে তাতে আর কোনো বাড়তি ব্যয়ের প্রয়োজন হয় না। তার মতে, নবায়নযোগ্য শক্তিই আমাদের টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রচেষ্টাকে সফল করতে পারে।
এদিকে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে দেশে বিদ্যুতের মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২০ হাজার মেগাওয়াট। ২০০৮ সালে এই লক্ষ্যমাত্রা স্থিরের সময়ই পরিকল্পনা করা এই ১০ শতাংশ অর্থাৎ ২০০০ মেগাওয়াট আসবে নবায়নযোগ্য শক্তি খাত থেকে।
এই লক্ষ্য পূরণে আমাদের এখনো অনেক পথ যেতে হবে বলে মনে করেন তিনি। কারণ টেকনাফের নতুন সোলার পার্কটি চালু হওয়ার পর এই খাত থেকে মাত্র ৫৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে। তিনি জানান, ২০১৯ সালের মধ্যেই এই খাত থেকে আরো ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া পাইপলাইনে রয়েছে। আর ২০২০-২১ সালের মধ্যে আরো ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য খাতের পাশাপাশি জীবাশ্ম জ্বালানি খাতেও বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে। তাই ওই সময়ের মধ্যে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও শতাংশের হিসাবে তা ১০ শতাংশ নাও হতে পারে। তবে আসল কথা হচ্ছে, এই খাত থেকে উৎপাদন বৃদ্ধি থেমে থাকবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কাটিয়ে টেকসই উন্নয়নকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।