সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়তে গিয়ে নিজেদের জোটেই ভাঙনের শিকার হলো বিএনপি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের তিন দিনের মাথায় ২০-দলীয় জোট থেকে গতকাল বেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি)। এ বিষয়ে ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নিজের সম্মান নষ্ট করে কারো সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা যায় না। বিএনপি নিজেদের মান-মর্যাদা খুইয়ে বৃহত্তর জোট গঠন করেছে। আমরা আর তাদের সঙ্গে নেই। এভাবে চলতে থাকলে সামনে জোটের আরো শরিক বেরিয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, কারাবন্দি খালেদা জিয়া তাদেরকে যে সম্মান দিয়েছেন, বর্তমান বিএনপি নেতৃত্ব তাদের সেই সম্মান দিচ্ছে না। তাছাড়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট শরিকদের কত আসন বণ্টন করা হবে তাও স্পষ্ট করছে না দলটি। তাই বাধ্য হয়ে তারা জোট ছাড়ছেন। বিকালে গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে জেবেল রহমান গানি বলেন, বাংলাদেশ ন্যাপ ও এনডিপি সাংবিধানিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে। শুধু ক্ষমতার পালাবদলের নামে কোনো অশুভ শক্তি আবারো দেশকে রাজনীতিশূন্য করার অপচেষ্টা চালাক, তা একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা চান না।
ন্যাপ ও এনডিপির চলে যাওয়া প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির কোনো নেতা কথা বলতে রাজি হননি। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, কেউ চলে গেলে তো কিছু করার নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ভাঙনের জন্য সরকারের একটি সংস্থা দায়ী। নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা ভয়ভীতি ও লোভ দেখিয়ে জোটে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করছে।
কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ২০-দলীয় জোট দীর্ঘদিন ধরে আছে। হঠাৎ করে জোটের পরিধি বাড়াতে গিয়ে বিএনপি নিজেদের
বিএনপি জোটে ভাঙন
পরীক্ষিত বন্ধুদের এড়িয়ে চলছিল। এ নিয়ে অসন্তোষের সূত্রপাত হয় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে। বিএনপি তার জোটের কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজেরা ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে যোগ দেয়। প্রতিবাদের কারণে পরে বাধ্য হয়ে বিএনপি জোট শরিকদের সঙ্গে বসে। ভোটের আগেই শরিকদের মধ্যে সংসদের আসন বণ্টনের বিষয়ে তাগাদা দেওয়া হলেও তাতে কর্ণপাত করেননি দলটির নেতারা।
অশুভ শক্তির ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে ন্যাপ ও এনডিপি নেই- জেবেল রহমান গানি : গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় গুলশানের ইমানুয়েলস ব্যাঙ্কুয়েট হলে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২০-দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ন্যাপ ও এনডিপি সাংবিধানিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে। শুধু ক্ষমতার পালাবদলের নামে কোনো অশুভ শক্তি ক্ষমতা গ্রহণ করে আবারো দেশকে রাজনীতিশূন্য করার অপচেষ্টা চালাক, তা একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা প্রত্যাশা করেন না।
ন্যাপ চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, ২০-দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপি সব সময়ই তার শরিকদের অন্ধকারে রাখার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নেই। অথচ এ বিষয়ে বিএনপি তার পরিকল্পনা জানাচ্ছে না। বিভিন্ন বৈঠকে জোট শরিকরা মনোনয়নের বিষয়টি সামনে আনতে চাইলেও দলটি তা কৌশলে এড়িয়ে যায়। আর ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলব, মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নকারীরা যখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, তখন ধরে নেওয়া যায় বিএনপি তার সব নৈতিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জেবেল রহমান গানি বলেন, এমন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি) সাংবিধানিক, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির স্বার্থে এই মুহূর্ত থেকে ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করছে। তারা নতুন পথে চলতে চান। প্রকৃত দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য চান।
একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবিলম্বে সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় সংলাপের আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান জেবেল রহমান গানি। সংলাপের ব্যবস্থা হলে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে সুস্থ ধারা প্রতিষ্ঠিত হবে। সবাই মিলে আগামী দিনে একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা যাবে।