দেশের বৃহত্তম ভাসমান সেতু

ঝাঁপা বাঁওড়ের ওপর নির্মিত হয়েছে দেশের বৃহত্তম ভাসমান সেতু

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

দেশের বৃহত্তম ভাসমান সেতু

  • প্রকাশিত ৩০ অক্টোবর, ২০১৮

জাহাঙ্গীর আলম, মনিরামপুর  

মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা বাঁওড়ের ওপর নির্মিত হয়েছে  দেশের বৃহত্তম ভাসমান সেতু। সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুটি বাঁওড়ের দু’পাড়ের পাঁচ লাখ মানুষকে যুক্ত করেছে সম্প্রীতির বাঁধনে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এতদিন পারাপারের জন্য নৌকাই ছিল যাদের একমাত্র মাধ্যম। ভাসমান এই সেতুটি তাদের সামনে খুলে দিয়েছে স্বপ্নের দ্বার। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের আনন্দের সীমা নেই। হাজারো কৃষক এই সেতুকে ঘিরে বুনতে শুরু করেছেন স্বপ্নের জাল। ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার আশায় কৃষকের আনন্দের সীমা নেই। ইচ্ছামতো এই ব্রিজ পার হয়ে তারা রাজগঞ্জ বাজারে আসতে পারেন। বিক্রি করতে পারবেন তাদের উৎপাদিত ফসল। একইভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে এই ভাসমান সেতুটি ঝাঁপা বাঁওড়ের দু’পাড়ের লাখ লাখ মানুষের মধ্যে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।

ইতোমধ্যে এলাকার যুবকদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতে ঘটনাস্থলে গেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য ও তৎকালীন যশোরের জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন। তারা ঘুরে দেখেছেন সেতুর কাজকর্ম। পরে তিনি এলাকার জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সেতুটি উদ্বোধন করে জনচলাচলের জন্য উন্মুক্ত করেন। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন এই সেতুর ওপর দিয়ে পাঁচ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ চলাচল করছে। এ ছাড়া নান্দনিক এই ভাসমান সেতুটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন হাজার হাজার মানুষ।

ভাসমান এ সেতু নির্মাণের প্রধান উদ্যোক্তা মাস্টার আসাদুজ্জামান বলেন, উপজেলার অভিশপ্ত গ্রামের নাম ঝাঁপা। এ গ্রাম থেকে একটু বাইরে পা রাখলেই হতে হয় নৌকা পারাপার। এই পারাপারের সময় নানা ধরনের সমস্যা ও দুর্ভোগের শিকার হন স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী, চিকিৎসা নিতে যাওয়া দুস্থ রোগী ও প্রসব যন্ত্রণায় কাতর মা, হাটবাজারে আসা-যাওয়া করা সাধারণ জনগণসহ সবাই। এ ছাড়া বাঁওড়ে নৌকাডুবির ঘটনায় জানমালসহ আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়ে আসছেন হরহামেশা। এসব সমস্যা ও দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে ও ক্ষতি থেকে মুক্তি পেতে মুক্তির পথ খুঁজতে থাকে ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। তাই ফাউন্ডেশনের সভাপতি মেহেদী হাসান টুটুল এবং সেতু নির্মাণের প্রধান উদ্যোক্তা আসাদুজ্জামান ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি ফাউন্ডেশনের এক জরুরি সভা আহ্বান করেন। সেই সভায় স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে ঝাঁপা বাঁওড়ের ওপর একটি ভাসমান সেতু তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন।

সেতুটি ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারায় সবার মনে যেন আনন্দের বন্যা বয়ে চলেছে। এদিকে বাঁওড়ের ওপর ভাসমান সেতু তৈরিতে ঝাঁপা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মমিনুর রহমান বলেন, শুধু ঝাঁপা গ্রামবাসীর দুঃখ নয়, মনিরামপুরবাসীসহ সবাই নৌকা পারাপার থেকে মুক্তি পাওয়ায় স্বস্তি ফিরে পাবে। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব আলহাজ আবদুস সাত্তার বলেন, বাবা-মা, দাদা-দাদির সেই চরম ভোগান্তি নৌকা পারাপার আর নয়, এখন সরাসরি ভাসমান সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে রাজগঞ্জে যেতে পারব। ফলে শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা, যে কোনো কাজে আর ভোগান্তি নয়, সব ক্ষেত্রে গ্রামবাসীসহ এলাকার জনগণ খুব উপকৃত হবে। ঝাঁপা ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হক মন্টু বলেন, সেতুটি চালু হওয়ায় মনিরামপুর সদরসহ সব বাজারের সঙ্গে এলাকার সাধারণ জনগণের সরাসরি যোগাযোগের সুবিধা হলো। আমার ইউনিয়নে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে উন্নতির প্রসার ঘটাতে ভাসমান সেতুটি মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করছি।

স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, সেতু তৈরিতে অল্প সময়ের মধ্যে একে অপরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা গেলে সব ক্ষেত্রে উন্নতি হবে। এলাকার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads