জেসিনর থেকে যশোর

যশোর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বহু কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

জেসিনর থেকে যশোর

  • প্রকাশিত ৩০ অক্টোবর, ২০১৮

গোলাম মোস্তফা মুন্না, যশোর (সদর)

বাংলাদেশ নামের ভূখণ্ডটি প্রাচীনকালে কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। ইতিহাসে এসব রাজ্য ভাঙ্গা, পাণ্ডু, সমতট, তাম্রলিপি বঙ্গ ইত্যাদি নামে পরিচিত। ওই সময় যশোর  তাম্রপিলি ভাঙ্গা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে ধারণা করা হয়। গঙ্গা নদীর পলল অবক্ষেপণে সৃষ্ট যশোর জেলার সবচেয়ে পুরনো বিবরণ পাওয়া যায় টলেমির মানচিত্রে। মহাভারত, পুরাণ, বেদ ও আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে এ অঞ্চলের উল্লেখ পাওয়া যায়। যশোর জেলার নামকরণ অনুসন্ধানে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। যশোর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বহু কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে। কেউ বলেছেন, আরবি শব্দ ‘জেসিনর’ থেকে যশোর নামের উৎপত্তি, যার অর্থ সাঁকো। অনুমান করা হয়, ১৪৫০ সালে পীর খানজাহান আলী বারো জন আউলিয়া নিয়ে মুড়লি কসবায় আসেন। তখন ভৈরব নদ পার হওয়ার জন্য তিনি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে ভৈরব পাড়ি দিয়ে মুড়লিতে আসেন বলে বাঁশের সাঁকো থেকে যশোর নামের উৎপত্তি। আবার কেউ বলেছেন, যশোর শব্দ ‘যশোহর’ শব্দের অপভ্রংশ। যার অর্থ যশ হরণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। গৌড়ের যশ হরণ করে এই শহরের শ্রীবৃদ্ধি হওয়ায় নাম হয় যশোর।

নামের উৎপত্তি যা-ই হোক, পরবর্তীকালে যশোরসহ সন্নিহিত অঞ্চলের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও বিপ্লবী ইতিহাস বহু উত্থান-পতন আর বৈচিত্র্যপূর্ণ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যশোর জেলার আজকের এই অবস্থান।

চিরকালের আপসহীন সংগ্রামী যশোরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইংরেজ শাসকরা তাদের শাসনকাজের সুবিধার জন্য যশোরকে একটি ভূখণ্ডে নির্দিষ্ট করে স্বতন্ত্র জেলায় রূপান্তর করেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম উল্লেখযোগ্য এ জেলাটির মাধ্যমেই ১৭৮১ সালে বর্তমান বাংলাদেশে ব্রিটিশ প্রশাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কথিত আছে, ১৫৫৫ সালের দিকে যশোর রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন খুলনা, ভারতের বনগাঁ, কলকাতার কিছু অংশ, কুষ্টিয়া, ফরিদপুরের অংশবিশেষ যশোর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৭৪৭ সালের দিকে যশোর নাটোরের রানি ভবানীর রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭৮১ সালে যশোরকে একটি পৃথক জেলা হিসেবে ইংরেজ কোম্পানি স্বীকৃতি দেয়। ১৭৮১ সালে জেলা ঘোষণার পর প্রথম জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন টিলম্যান হেঙ্কেল (১৭৮১-১৭৮৯)। বাংলার বারভুঁইয়াদের মধ্যে অন্যতম প্রতাপাদিত্য যশোরের রাজা ছিলেন। প্রায় ২৫ বছর ছিল তার রাজত্ব। প্রতাপাদিত্য নিজ নামে মুদ্রা প্রচলন করেন। মধ্যযুগের কবি ভারতচন্দ্র রাজা প্রতাপাদিত্যকে নিয়ে কবিতা লেখেন- ‘যশোর নগর ধাম প্রতাপ আদিত্য নাম/ মহারাজা বঙ্গজ কায়স্ত/ নাহি মানে পাতশায়, কেহ নাহি আটে তায়/ভয়ে যত ভূপতি দ্বারস্থ/ বরপুত্র ভবানীর প্রিয়তম পৃথিবীর/ বায়ান্ন গাহার যার পল্লী/ ষোড়শ হলকা হাতি অযুত তুরঙ্গ সাতি/ যুদ্ধকালে সেনাপতি কালী।’ ১৮৬৪ সালে যশোর পৌরসভা ঘোষিত হয়। ১৮৩৮ সালে যশোর জিলা স্কুল, ১৮৫১ সালে যশোর পাবলিক লাইব্রেরি, বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় ও চতুর্থ দশকে যশোর বিমানবন্দর এবং উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কলকাতার সঙ্গে যশোরের রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের ফলে অবিভক্ত বাংলার পূর্বাঞ্চলকে করা হয় পাকিস্তানের অংশ এবং পশ্চিমাঞ্চলকে করা হয় ভারতের। এর মধ্যে সীমানারেখা নির্ধারণের ফলে যশোর জেলার ভৌগোলিক অবস্থানের পরিবর্তন হয়। এ সময় যশোরের বনগ্রাম মহকুমাকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। ১৯৮২ সালে এইচ এম এরশাদ থানাকে উপজেলায় এবং মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করেন। বর্তমানে যশোর জেলায় ৬টি সংসদীয় আসন, ৮টি উপজেলা এবং ৭টি পৌরসভা রয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads