একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টিকে ৪২টি আসন দেওয়ার কথা বলা হলেও তারা পাচ্ছেন ৩০ আসন। বাকি আসনগুলো থাকবে উন্মুক্ত। এ ক্ষেত্রে ওই আসনগুলোয় আওয়ামী-জাপার প্রার্থীরা আলাদাভাবে লড়বেন। বর্তমানে জাতীয় পার্টির ৩৬ জন এমপি রয়েছেন। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ৪৯ আসন দিয়েও আওয়ামী লীগ ২০টিতে প্রার্থী রেখে দেয়। এ কারণে লাঙ্গল প্রতীকের ১৩ জন প্রার্থীর জামানত হারাতে হয়। এদিকে গতকাল রাত ৮টায় জাতীয় পার্টির মহাজোটের প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণার লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হলেও পরে তা স্থগিত করা হয়। আজ রোববার নির্বাচন কমিশনে দলীয় চূড়ান্ত তালিকা জমা দেওয়ার শেষ দিন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ২৪০টি আসন নিজেদের দখলে রেখে শরিকদের মধ্যে ৬০টি আসন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৪২টি আসন পাবে জাতীয় পার্টি। এ ছাড়া ১৪ দলের শরিকদের দিয়েছে ১৬টি আসন। এর মধ্যে জোটের শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে পাঁচটি, যুক্তফ্রন্টকে তিনটি, জাসদকে তিনটি, তরিকত ফেডারেশনকে দুটি ও জাসদ একাংশকে একটি এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর দল জেপিকে দুটি আসন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৪০-৪২টি আসন দেওয়ার কথা বলা হলেও জাতীয় পার্টি মূলত ৩০টি আসনে একক প্রার্থী হিসেবে নিশ্চয়তা পেয়েছে। যদিও জাতীয় পার্টি বর্তমানে ৩৬ আসন তাদের দখলে রয়েছে। এই ক্ষেত্রে ওই আসনগুলো উন্মুক্ত থাকবে। এই ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের অন্য শরিকদের মধ্যে যে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন। এ নিয়ে শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে দলটি। কিন্তু জাতীয় পার্টিকে ৪২টি আসন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ৪৫ আসন দিলেও তারা অনেকগুলো আসন উন্মুক্ত রেখে দিয়েছে। এতে আমাদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ ও জাপা দুই দলেরই প্রার্থী থাকবে। আবার কোথাও জাতীয় পার্টি ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীও থাকবে। একজন প্রার্থী হলে ভালো হতো।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, মহাজোটের শরিক জাপাকে ৪০ থেকে ৪২টি আসন দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে দলের চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দুয়েক দিনের মধ্যেই মহাজোটে জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। জাতীয় পার্টি ৪৫ আসন পেতে পারে। মহাজোটের অন্যান্য শরিক দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আছে, তাই একাদশ জাতীয় নির্বাচন খুব শক্ত হবে। এ কারণেই যারা জয়ী হতে পারবেন তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে।
এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তারা হলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রংপুর-৩, বেগম রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ-৪, গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) লালমনিরহাট-৩, মসিউর রহমান রাঙ্গা রংপুর-১, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চট্টগ্রাম-৫, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ঢাকা-৪, কাজী ফিরোজ রশীদ ঢাকা-৬, লিয়াকত হোসেন খোকা নারায়ণগঞ্জ-৩, একেএম সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫, মজিবুল হক চুন্নু কিশোরগঞ্জ-৩, শওকত চৌধুরী অথবা আহসান আদেলুর রহমান আদেল নীলফামারী-৪, ড. আক্কাস আলী সরকার কুড়িগ্রাম-১, পনির উদ্দিন আহমেদ কুড়িগ্রাম-২, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী গাইবান্ধা-১, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বগুড়া-২, নুরুল ইসলাম তালুকদার বগুড়া-৩, নুরুল ইসলাম ওমর বগুড়া-৬, অ্যাডভোকেট আলতাফ আলী বগুড়া-৭, নাসরিন জাহান রত্না বরিশাল-৬, রুস্তম আলী ফরাজী পিরোজপুর-৩, ফখরুল ইমাম ময়মনসিংহ-৮, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ সুনামগঞ্জ-৪, ইয়াহিয়া চৌধুরী সিলেট-২, মো. নোমান লক্ষ্মীপুর-২, লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ফেনী-৩, আলহাজ আতিকুর রহমান হবিগঞ্জ-১, জিয়াউল হক মৃধা অথবা রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, আবুল হোসেন রাজশাহী-৫। এ ছাড়া আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন বরিশাল-২ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা)। তবে এই আসনে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার ইউনুছকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া পটুয়াখালী-১ আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়ন আপিলেও বাদ পড়েছে। এ ছাড়া আরো কয়েকটি আসন মহাজোট থেকে পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে এখনো।