জাতিসংঘে বাড়ছে চাঁদার হার

লোগো জাতিসংঘ

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

 গ্রহীতা থেকে দাতা বাংলাদেশ

জাতিসংঘে বাড়ছে চাঁদার হার

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ৫ ডিসেম্বর, ২০১৮

১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্য পদ পেলেও হতদরিদ্র দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল বাংলাদেশের। সদস্য হিসেবে সংস্থাটিতে ন্যূনতম চাঁদা দেয় এ দেশ। বিপরীতে জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংস্থার সহায়তা নিয়ে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বড় সাফল্য এসেছে। নতুন করে বেঁধে দেওয়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে রয়েছে দেশ। আয় বাড়ার পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়নে অবদান রেখে উন্নয়নশীল দেশের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। এখন সময় এসেছে সহায়তা গ্রহীতা দেশ থেকে দাতা দেশে পরিণত হওয়ার। এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন সংস্থায় বাংলাদেশের বার্ষিক চাঁদা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে অনুমোদন চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে একটি চিঠি পাঠিয়েছে একই মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ও জাতিসংঘ লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতাবিষয়ক সংস্থা ইউএন ওমেনের নির্বাহী সভায় প্রতিনিধিত্ব করবে। তা ছাড়া বাংলাদেশ নারী ও শিশুর অধিকার রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ অবস্থায় ২০১৮ সালে এই দুই সংস্থার চাঁদা ১০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের

(পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দরিদ্র হিসেবে বাংলাদেশ এতদিন জাতিসংঘের সহায়তা নিয়েছে। তবে সময়ের পরিবর্তনে দেশের পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছে দেশ। এ অবস্থায় জাতিসংঘে সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে জাতিসংঘ দরিদ্র দেশে উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে। চাঁদা বাড়ার কারণে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এসব কাজে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ কিছুটা হলেও বাড়বে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী সম্মানও বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে যথাযথ নিয়ম মেনেই বাড়তি চাঁদা পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি।

এ বিষয়ে ইআরডির জাতিসংঘ উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব সুতাৈনা আফরোজ কোনো মন্তব্য করেননি। বিষয় উল্লেখ করে মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি। রিসিভ করেননি টেলিফোন কল।

চিঠিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি শরণার্থী সমস্যা সমাধানে উন্নত দেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সংস্থার অনুকূলে অনুদান কমছে। ফলে উন্নয়নশীল দেশে কার্যক্রম চলমান রাখতে তহবিল সঙ্কট হচ্ছে। বিভিন্ন উপায়ে তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো।

ইআরডির সিনিয়র সহকারী সচিব মোছা. মোহসিনা আকতার বানু স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা সম্পূর্ণ অনুদানের মাধ্যমে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও দুর্ঘটনাজনিত জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় এসব সংস্থা জরুরি সহায়তা দিয়েছে। এমডিজি অর্জনে সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি এসডিজি অর্জনেও সংস্থাগুলো সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ইআরডি সূত্র জানায়, পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতিসংঘে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন সময়ে সংস্থাটিতে চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। অনুরোধ এসেছে জাতিসংঘের অনেক সংস্থার পক্ষ থেকেও। পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ, জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ার প্রেক্ষাপটেই এসব প্রস্তাব এসেছে বলে জানানো হয়েছে।

ইআরডির চিঠিতে বলা হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদের আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার চাঁদা প্রদান সংক্রান্ত সচিব কমিটি বিভিন্ন সংস্থার চাঁদার বিষয়টি দেখভাল করে। প্রতিবছরের শেষের দিকে কমিটির সুপারিশের আলোকে ইআরডি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার চাঁদা পরিশোধ করে থাকে। চলতি বছর নির্ধারিত সময়ের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি বিষয়টি অবহিত করেন। ফলে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার চাঁদা প্রদান সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে বিষয়টি উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ফলে অন্যান্য সংস্থার চাঁদা এবারের মতো অপরিবর্তিত রেখে অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়টি বিবেচনায় অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে দুই সংস্থার চাঁদা ১০ শতাংশ করে বাড়ানো হয়েছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘের সব সংস্থায় চাঁদা বাড়ানোর প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। আর ইউএন ওমেন ও ইউনিসেফে পরিশোধ করা বাড়তি চাঁদার বিলম্বিত অনুমতি চাওয়া হয়েছে চিঠিতে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads