সুজন সেন, শেরপুর
চরাঞ্চলজুড়ে এখন লেবুর সুগন্ধে চারপাশ মোহিত। শেরপুর-জামালপুর ফিডার রোড থেকে নেমে গ্রামের মেঠোপথ মাড়িয়ে একটু ভেতরে গেলেই চোখে পড়ে শুধু লেবুর বাগান। শেরপুরের চরাঞ্চলে লেবু চাষ করে ভাগ্যবদল করেছেন হাজারো কৃষক। অনেক চাষি শুধু লেবু বিক্রি করেই কোটিপতি হয়েছেন।
বন্যাপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার বৃহত্তম চরাঞ্চল একসময় পতিত পড়ে থাকত। এ কারণে স্থানীয়দের অর্থনৈতিক অবস্থা একসময় খুবই দুর্বল ছিল। এরপরও নানা ঝুঁকি মোকাবেলা করে শীতকালীন শাকসবজি আবাদই ছিল কৃষকদের প্রধান আয়ের উৎস। কিন্তু এখন সেই চরাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক বছরব্যাপী নানা জাতের লেবু চাষ করে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন।
লেবুচাষি আকবর ও ইসরাইল বলেন, টাঙ্গাইলের জনৈক জাফর (জাফরের নাম অনুসারে জাফরি লেবু) নামে এক লোকের কাছ থেকে শেরপুর স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত চরাঞ্চলের বাসিন্দা মনিরুজ্জামানের মাধ্যমে প্রায় ১২ বছর আগে ২-৩টি বাগানের মাধ্যমে লেবু চাষের সূচনা হয়। তারা বলেন, তিন বিঘা জমিতে লেবু চাষ করতে আড়াই বছর পর্যন্ত সব খরচসহ প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়। পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন শুরু হয় আড়াই বছর পরেই। এরপর থেকেই প্রতি বছরে ওই তিন বিঘার লেবু ক্ষেত থেকে কমপক্ষে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে আয় আসতে শুরু করে। শুধু বাগান পরিচর্যা বাবদ বছর প্রতি ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। আড়াই বছর পর থেকে পরবর্তী ১২ বছরে ওই তিন বিঘা জমিতে খরচ হয় প্রায় ৭ লাখ টাকা আর আয় আসে ১৮ লাখ টাকা।
লেবুচাষিরা জানান, সদর উপজেলার বলায়ের চর, ধোপার চর, চরশ্রীপুর, রামের চরসাহাব্দি, জঙ্গলদি, ঘুঘরাকান্দি, চরপক্ষিমারী, সাতপাকিয়া, কুলুরচর, চরশেরপুর, রৌহা ও কামারিয়াসহ অন্তত ২০টি গ্রামের কয়েকশ একর জমিতে করা হয়েছে লেবুর চাষ। এই লেবুকে কেউ জাফরি বা কেউ বিচি ছাড়া (সিড লেস) সুগন্ধি লেবু বলেই জানে। প্রান্তিক চাষিরা প্রায় প্রতিদিন গাছ থেকে লেবু তুলে বিক্রি করে। তবে বড় চাষিরা ১৫ দিন অন্তর লেবু তুলে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে বিক্রি করে। এখন প্রতি হাজার লেবুর দাম ১ হাজার ৫শ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ সম্পর্কে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, চরাঞ্চলের জমি লেবু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ওইসব এলাকার লেবু বিচিবিহীন রসালো, স্বাদ, গন্ধ ও ভিটামিনে অপূর্ব।