নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পৃথক স্থানে এক নারী ও দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উদ্ঘাটন এবং দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো স্বামী মাসুদ দেওয়ান ও চাচাতো শ্যালক সবুজ ওরফে সোহেল।
পুলিশ জানায়, ওই নারী ও দুই শিশু সম্পর্কে মা-মেয়ে। নিহত মা ও দুই মেয়ে হলেন, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জের রিকশাচালক মাসুদের স্ত্রী নোয়াখালীর সেনবাগের পদুয়া এলাকার আঞ্জুমান বেগম (২৮) ও তার দুই মেয়ে মাহিদা আক্তার ও ফাহিমা আক্তার। এদিকে গ্রেফতার দুজনের স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে এই ত্রিপল মার্ডারের চাঞ্চল্যকর তথ্য। মূলত স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েকে কেন্দ্র করে প্রথম স্ত্রী ও তার দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তাদের মরদেহ বস্তায় ভরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল পুকুরে।
গতকাল রোববার বিকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বিবরণ জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক অঞ্চল) মো. শরফুদ্দিন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আবদুস সাত্তার, পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম, পরিদর্শক (অপারেশন) আজিজুল হক প্রমুখ।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনজনের মধ্যে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মাসুদ দেওয়ান (২৬) চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার দক্ষিণ শাআলী এলাকার খলিলুর রহমানের ছেলে ও তার চাচাতো শ্যালক নেত্রকোনার খালিয়াজুরী থানার ফতুয়া এলাকার স্বপন মিয়ার ছেলে সবুজ ওরফে সোহেল (২৩)।
গতকাল বিকালে কিলিং মিশনে থাকা গ্রেফতারকৃত সবুজ ওরফে সোহেল নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া অপর ঘাতক স্বামী মাসুদ দেওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত শুনানির জন্য আজ সোমবার তারিখ নির্ধারণ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিদ্ধিরগঞ্জের আটি হাউজিং মসজিদ গলির কবির মিয়ার বাড়ির ৬ তলার পশ্চিম দক্ষিণ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয় মাসুদ দেওয়ান। সে তার প্রথম স্ত্রী আঞ্জুমান বেগমের অমতে তারই বান্ধবী শোভা আক্তারকে বিয়ে করে। এই বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই ছিল। ওই ঝগড়ার জের ধরে সে তার দ্বিতীয় স্ত্রী শোভা আক্তার ও চাচাতো শ্যালক সবুজ ওরফে সোহেলকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম স্ত্রী আঞ্জুমান বেগমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ওই পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৯ জুন শোভা আক্তার ও সোহেল মিলে প্রথমে আঞ্জুমান বেগমকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে বড় মেয়ে মাহিদা আক্তার ও ছোট মেয়ে ফাহিমাকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর তাদের মরদেহ বস্তায় ভরে সিদ্ধিরগঞ্জের একটি নির্জন স্থানে ও একটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।
গত ১১ জুন বিকাল ৫টায় সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙ্গারপুল এলাকার ডিএনডি ইরিগেশন খালের পাশ থেকে ড্রামের মধ্যে আঞ্জুমান বেগমের (২৮) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর গত ১৬ জুন ঈদের দিন আটি হাউজিংয়ের আলী মোহাম্মদের মাছের খামারে ভাসতে থাকা বস্তাবন্দি অবস্থায় ১৫ মাস বয়সী শিশু ফাহিমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ১৮ জুন আটি এলাকার একই খামারে ভাসতে থাকা একটি ব্যাগ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শিশু মাহিদার (৭) মরদেহ উদ্ধার হয়।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক অঞ্চল) মো. শরফুদ্দিন জানান, ঘাতক সবুজ ওরফে সোহেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। স্বামী মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। অপর ঘাতক দ্বিতীয় স্ত্রী শোভাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।