কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ী

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ী

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফিচার

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ী

  • কুষ্টিয়া (সদর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২০ নভেম্বর, ২০১৮

কুষ্টিয়া শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে কুমারখালী উপজেলার অন্তর্গত একটি গ্রাম শিলাইদহ। এই শিলাইদহ গ্রামে অবস্থিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ী। ১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুরের উইল সূত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এ অঞ্চলের জমিদারি পান। পরবর্তী সময়ে ১৮৮৯ সালে জমিদারি দেখাশোনার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে জমিদার হয়ে আসেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহের এই কুঠিবাড়ী থেকেই ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারি পরিচালনা করেন। কবি তার অবস্থানকালে এই কুঠিবাড়ীতে সাহিত্যচর্চা করতেন। কবি এখানে রচনা করেছেন ‘সোনার তরী’, ‘চৈতালী’, ‘চিত্রা’সহ অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ। এ ছাড়া কবি শিলাইদহের এই কুঠিবাড়ীতেই অসংখ্য গান লিখেছেন। কবি এখানেই গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন। শিলাইদহ ও পদ্মার প্রতি যে রবীন্দ্রনাথের গভীর অনুরাগ ছিল তা ছিন্নপত্রাবলিতে এর পরিচয় পাওয়া যায়।
শিলাইদহ কুঠিবাড়ি ৩০ বিঘা এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এখানে রয়েছে চিরসবুজ বৃক্ষের বাগান, একটি পুষ্পোদ্যন ও দুটি পুকুর। ভবনটির প্রবেশমুখে যে তোরণ রয়েছে তা সাধারণ হলেও বেশ আকর্ষণীয়। ভবনটিতে রয়েছে বিভিন্ন আকারের ১৬টি কক্ষ। দোতলার ওপরের পিরামিড আকৃতির ছাদ ভবনটির সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ীটি সংরক্ষণ করছে। এখানে ‘ঠাকুর স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভবনটি এখন জাদুঘর হিসেবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে কবি রবীন্দ্রনাথের নানা বয়সের ছবি। তার ব্যবহার্য আসবাবপত্র এবং বিভিন্ন শিল্পকর্ম। তার ব্যবহার্য জিনিসপত্রের মধ্যে রয়েছে পালকি, কাঠের চেয়ার, টি-টেবিল, সোফাসেট, আরাম চেয়ার, পালংক, স্পিডবোটসহ আরো অন্যান্য আসবাবপত্র।

শতবর্ষ ধরে বিশ্বকবির অনন্য প্রতিভার আলো উদ্ভাসিত করে চলেছে বাঙালির জীবন ও দর্শন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষাকে পরিচিত করেছেন বিশ্বদরবারে। নিভৃত বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে কবির জীবনের বেশ কিছু সময় কেটেছে। তার লেখনীর মাধ্যমে ফুটে উঠেছে এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করেন আজো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শিলাইদহ কুঠিবাড়ী। এটি পাল্টে দিয়েছে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা। এখানে স্থানীয়দের চেয়ে এখন বাইরের মানুষেরই বেশি আনাগোনা থাকে। তবে এখনো সেভাবে ভালো পর্যটক আকর্ষক হোটেল গড়ে ওঠেনি। একসময় ঠাকুরবাড়ীতে অসংখ্য পুরাতন গাছ ছিল, সেগুলো মারা গেছে, মারা গেছে সেই ঐতিহাসিক বকুল গাছটিও। অবশ্য ঠাকুরবাড়ীর শ্রীবৃদ্ধি করতে ও স্মৃতি রক্ষায় তার স্থলে একটি বকুল গাছ লাগানো হয়েছে। কিন্তু সেভাবে ফুটে ওঠেনি সৌন্দর্য। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষগণ নাটোরের জমিদার পরিবারের কাছ থেকে শিলাইদহের জমিদারি ক্রয় করে নিয়েছিলেন। জমিদারি পরিচালনার জন্য রবীন্দ্রনাথ যুবক বয়সেই এই শিলাইদহের নীলকুঠিতে আসেন। এই কুঠিবাড়ীতে বসেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, গান রচনা করতেন। জমিদারি পরিচালনার জন্য তিনি দীর্ঘকাল এখানে কাটান। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট কবি মৃত্যুবরণ করলে সরকার ওই জায়গা সংরক্ষিত বলে ঘোষণা করে।

কুষ্টিয়া শহরে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত একটি বাড়ি টেগর লজ। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ১৮৯০ সালের শেষের দিকে কুষ্টিয়া রেলস্টেশনের কাছে এই বাড়ি নির্মাণ করা হয়।

ভুসিমাল ও পাটের ব্যবসার জন্য কবি নিজে এ বাড়িতে ‘টেগর অ্যান্ড কোম্পানি’র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কলকাতা থেকে ট্রেনে কুষ্টিয়া এসে টেগর লজে বিশ্রাম নিয়ে শিলাইদহে যেতেন কবি। যাত্রাপথে কখনো কখনো এই বাড়িতে রাতও কাটিয়েছেন তিনি।
১৮৯০ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় এই বাড়িতে থেকেছেন কবি। দীর্ঘকাল অযত্নে পড়ে থাকার পর ২০০৪ সালে বাড়িটি কিনে নিয়ে সংস্কার করে কুষ্টিয়া পৌরসভা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads