দেশের সর্বপ্রথম রেলওয়ে স্টেশন অবস্থিত কুষ্টিয়ার জগতি এলাকায়। এর নাম ‘জগতি স্টেশন’। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর কলকাতার রানাঘাট থেকে জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ চালু হয়। পরে ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারি অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর গোয়ালন্দ পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ সম্প্রসারণ করা হয়। কিন্তু রেলওয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক দেশের প্রথম এই স্টেশনটির অবস্থা জরাজীর্ণ ও খুবই নাজুক। কর্তৃপক্ষের অবজ্ঞা ও চরম উদাসীনতায় রেলওয়ে বিভাগ ঐতিহ্য হারাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জরাজীর্ণ স্টেশন ভবন, প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবসহ অন্যান্য সঙ্কটে জগতি স্টেশনটির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। লোকবলের অভাবে স্টেশনের কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। বর্তমানে এটি শুধু কাগজে-কলমে স্টেশন হিসেবে তালিকাভুক্ত। দৃশ্যত এ স্টেশনে যাত্রীসেবা, নিরাপত্তা ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা একবারে ভেঙে পড়েছে। স্টেশনটিতে নিরাপত্তা বেষ্টনী ও নিরাপত্তা কর্মী না থাকায় ইতোমধ্যে মূল্যবান বহু সম্পদ খোয়া গেছে।
এককালে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও পণ্য পরিবহনে এ অঞ্চলের মানুষের জগতি রেলওয়ে স্টেশনটির কদর ছিল যথেষ্ট। কিন্তু কালের বিবর্তনে দেড়শ বছর আগের ঐতিহ্যমণ্ডিত এই স্টেশনটির আসল রূপ ও জৌলুস হারিয়ে গেছে। স্টেশন ভবনটির ছাদে জন্মেছে প্রচুর আগাছা। এছাড়া ভবনটিতে ধরেছে ফাটল। ঐতিহ্যমণ্ডিত স্টেশন ভবনটি একরকম পরিত্যক্ত। ওয়েটিং রুম ভেঙে পড়েছে। প্লাটফর্মের ইট ও গাঁথুনি ক্ষয়ে গেছে। প্লাটফর্মের সঙ্গেই তৎকালে নির্মিত বিশাল আয়তনের ওভারহেড পানির ট্যাঙ্কটি ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। স্টেশনটিতে নেই কোনো নিরাপত্তা কর্মী। এ ছাড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় উন্মুক্ত স্টেশনটির পুরো এলাকা পরিণত হয়েছে চারণভূমিতে। স্টেশনে নেই কোলাহল ও রাতের বেলায় থাকে না ঝলমলে বাতি। চারদিকে নির্জন ও ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজমান। সর্বোপরি স্টেশনটিতে যাত্রীসেবার নেই কোনো বালাই। জগতি রেলওয়ে স্টেশন ডিঙিয়ে কুষ্টিয়া-পোড়াদহ ও কুষ্টিয়া-গোয়ালন্দ রুটে আন্তঃনগরসহ মেইল ও শাটল ট্রেন চলাচল করে। এই স্টেশনে স্টপেজ রয়েছে শুধু মেইল ও শাটল ট্রেনের। এসব ট্রেনে হাতেগোনা অল্প কিছু যাত্রী ওঠানামা করে। শুধু ট্রেন আসার পূর্ব মুহূর্তে স্টেশনমাস্টারের ছোট কামরার কার্যালয়টি খোলা হয় এবং ট্রেন ছাড়ার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই স্টেশন থেকে অল্প সংখ্যক যেসব যাত্রী ট্রেনে ওঠা-নামা করেন। তাদেরও দুর্ভোগের শেষ নেই। যাত্রী ছাউনি ব্যবহারের অযোগ্য এবং সেখানে বসার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের প্লাটফর্মের এদিক-ওদিক ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। নিরাপত্তার অভাবে স্টেশন এলাকায় প্রতিনিয়ত রেললাইনের সঙ্গে সংযুক্ত পিনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। এই পিন চুরি ঠেকানো না গেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে রেলওয়ে বিভাগের কর্মচারীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও এই স্টেশনটিতে উন্নয়ন কিংবা আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া লাগেনি। এক সময় ভারতের কলকাতায় যাতায়াত ও বাণিজ্যিকভাবে পণ্য আমদানি-রফতানিও হতো জগতি স্টেশন থেকে। এখন তা শুধুই স্মৃতি। স্টেশনটি আধুনিকায়ন না হওয়ায় রেলওয়ে বিভাগ ঐতিহ্য হারাচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আধুনিকায়নসহ স্টেশনটির হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার দাবি এলাকাবাসীর।
গোয়ালন্দ থেকে আসা এনজিও কর্মকর্তা ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী সাবিনা ইয়াসমিন পপি জানান, জগতি এলাকায় দেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশনটির এ বেহালদশা কোনোভাবেই কাম্য নয়। উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্টেশনটির আধুনিকায়নসহ যাত্রী সেবার মান উন্নয়নের দাবি জানান তিনি।