দেশে গত ১৪ বছরে ৫৩৫টি বড় নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ছয় হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছে নদী নিরাপত্তা বিষয়ক সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর’। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘নদী বাঁচান, দেশ বাঁচান, মানুষ বাঁচান’ বিষয়ে এক মানববন্ধনে এসব তথ্য জানান নোঙরের সভাপতি সুমন শামস।
তিনি বলেন, ‘নোঙরের হিসাব অনুযায়ী ১৪ বছরে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৫৩৫টি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর এতে ছয় হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এসব দুর্ঘটনা তদন্তে ৮৬৩টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটির কোনোটিরই প্রতিবেদন প্রকাশ হতে দেখা যায়নি। এছাড়া নৌপথের যানবাহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তেমন কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।
তিনি আরো বলেন, নৌপথ তার গতিপথ হারিয়ে প্রায় এখনো ঘটছে ছোট-বড় লঞ্চ দুর্ঘটনা। ১৫ জানুয়ারি গভীর রাতে মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে একটি তেল বোঝাই কার্গোর সঙ্গে ধাক্কা লেগে একটি ট্রলার ডুবে যায়। মাটি বোঝাই ট্রলারটিতে ৩৪ জন শ্রমিক ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৪ জন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও বাকি ২০ জনের ১৮ জনকেই এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুমন শামস বলেন, নদীমাতৃক দেশের নদীগুলো আজ ভালো নেই। বিপর্যয় নেমে এসেছে আমাদের বেশিরভাগ নদীতে। আমাদের অনুসন্ধান বলছে, তেরশো নদীর এখন জীবিত আছে মাত্র ২৩০টি নদী। উজান দেশের উদাসীনতায় ভাটির দেশের পানি কমে যাওয়ায় আজ আমাদের নদীগুলোর এমন অবস্থা হয়েছে। দেশের চল্লিশটির নদীতে কমে গেছে পানি, ভয়াবহ পানি সঙ্কটের দিকে এগিয়ে চলেছে নদীমাতৃক বাংলাদেশ।
তিনি জানান, প্রতিবছর দেশের নদীতে গড়ে জমা পড়েছে ৪ কোটি টন পলি। ফলে নৌপথ ছোট হয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। ৪৮ বছরের নৌপথের দৈর্ঘ্য কমেছে ১৯ হাজার কিলোমিটার। খননে পরে পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তাসহ অন্যান্য নদী এখন ধু-ধু বালুচর। এ ছাড়া দেশজুড়ে অব্যাহত রয়েছে নদী দখল ও দূষণ। ফলে কৃষি, জনস্বাস্থ্য, প্রাণী ও উদ্ভিদ হুমকির মুখে পড়েছে। মানববন্ধনে নদী ও প্রকৃতি বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের একাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।