নেত্রকোণার দূর্গাপুরে পাহাড়ি ঢলে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে দুর্গাপুর-শ্যামগঞ্জ মহাসড়কের এক অংশে। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়তে শুরু করেছে দুর্গাপুরের সব নদীর পানি। আর এই পানির অতিরিক্ত চাপেই সড়কের একটি কালভার্টের মাটি সরে গিয়ে ভাঙ্গতে শুরু হয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা। তবে প্রশাসন বলছে, সড়কটি রক্ষায় সব ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছে তারা।
ভারতের মেঘালয়ে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়তে শুরু করেছে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সকল নদীর পানি। এই পানি সোমেশ্বরী নদীর বিপদসীমা অতিক্রম করে ঢুকতে শুরু করে আশাপাশে নিচু এলাকায় খাল-বিলগুলোতে। এরই ফলে আকস্মিক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে দুর্গাপুর-শ্যামগঞ্জ মহাসড়কের কাকৈরগড়ার ইন্দ্রপুরের একটি কালভার্টে। কালভার্টটি ছোটো হওয়ায় অতিরিক্ত পানি চাপে মাটি সরে দিয়ে ভাঙ্গতে শুরু করেছে কালভার্টের চারদিক।
দুর্গাপুরে সারা দেশের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান সড়ক এই মহাসড়কটি। প্রতিদিন দুর্গাপুর কলমাকান্দাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা লক্ষাধিক বাসিন্দা, পর্যটকসহ যাত্রীরা চলাচল করে আসছে এই সড়ক দিয়ে। রোগী, ব্যবসায় কাজে পণ্য আনা নেওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতেই এই সড়কটি যেন একমাত্র ভরসা।
এর আগে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সড়কটির বেহাল দশা থাকায় চলাচলের পুরোপুরি অনুপযোগী হয়ে। ২০১৭ সালে শেষের দিকে ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৭ কিলোমিটার এই সড়কটি সংস্কারের কাজ শুরু হলে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় এসে শেষ হয় সড়কটির র্নিমাণ কাজ। কিন্তু বেশ কয়েকটি সেতু ও কালভার্টের নিচে এখনো সিসি ব্লক না দেওয়ায় পানির চাপে এসব সেতু ও কালভার্টে ভেঙ্গে সারা দেশের সঙ্গে দুর্গাপুর-কলমাকান্দার সড়ক পথে কয়েক লাখ মানুষের যোগাযোগ বন্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানায়, গত বৃহস্পতিবার বিকাল কালভার্টের নিচ দিয়ে পানি চাপ বাড়তে শুরু করে। আর শুক্রবার বিকালে থেকে সব সীমা ছাড়িয়ে কালভার্টের মাটি সরে ভাঙ্গতে শুরু করে চার দিক। বাশঁ, বালি ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও অতিরিক্ত পানি চাপ আর তীব্র স্রোতে সব কিছু ভেসে যায়।
এমন খবর পেয়ে শুক্রবার বিকালে ক্ষতিগস্থ এলাকা পরির্দশনে আসেন জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ জেলার সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক নির্দেশে ভাঙ্গন রোধ বন্ধ বালি বস্তা, ব্লকসহ কালভার্টের চারপাশে বাঁধ দেওয়া হয়। সড়কটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশে দেন তিনি। এছাড়াও এ সড়কের উপরে দিয়ে যাত্রীবাহী যান ছাড়া বালি, পাথরসহ সকল প্রকার ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক মঈন উল ইসলাম।
তবে শনিবার সকাল থেকেই কমতে শুরু করেছে সোমেশ্বরী নদী পানি। আবহাওয়ায় ভালো থাকায় নতুন করে আর পাহাড়ী ঢলের সম্ভবনাও কমেছে অনেকটা। সেই সঙ্গে ইন্দ্রপুরে কালভার্টের নিচ দিয়ে কমেছে পানি প্রবাহের চাপ। তাই দুপুর থেকে সল্প পরিমাণে সকল যানবাহন চলাচলের জন্য আবারো মহাসড়কটি খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানায় উপজেলা র্নিবাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানম।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঝুমা তালুকদার জানায়, খবর শোনা মাত্রই সড়কের ভাঙ্গন রোধে স্থানীদের সহায়তায় বালির বস্তা ও বাঁশ দিয়ে ভাঙ্গন প্রতিহত করার চেষ্টা করার চেষ্টা করা হয়। আসলে এখানে পানি যাতায়াতের জন্য যে কালভার্টটি করা হয়েছে তা একেবারেই ছোট।
জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার জানায়, ইন্দ্রপুরে এই কালভার্টটি কিছু দিন হলো কাজ শেষ হয়েছে। তাই সিসি ব্লক দেওয়ার সময়ই পাওয়া যায়নি। হঠ্যাৎ করেই পাহাড়ি ঢলের পানি চলে আসায় মহাসড়কের এই কালভার্টটি পানির চাপে কিছুটা ক্ষতিগস্ত হয়েছে। পানি চলে গেলে নতুন করে রিডিজাইন করে সিসি ব্লক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।