আপডেট : ১৭ May ২০২৪
জলজ ফুলের রানী বলা হয় পদ্মকে। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া পদ্মফুল সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে গোপালগঞ্জ এর বিলের চিত্র। দূর থেকে মনে হবে যেন ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে কেউ। প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছে দর্শনার্থীরা! গোপালগঞ্জ জেলার চার পাশে রয়েছে অসংখ্য বিল। তার মধ্যে অন্যতম সদর উপজেলার বলাকইড় বিল। গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে। ১৯৮৮ সালের পর থেকে বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মে। আর এ কারণে এখন এ বিলটি পদ্মবিল (Poddo Beel) নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে। বর্ষা মৌসুমে চারিদিকে শুধু পদ্ম আর পদ্ম। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গোলাপি রং এর পদ্ম দেখলে মন ও জুড়িয়ে যায়। চোখ যত দূর যায় শুধু পদ্ম আর পদ্ম। এমন অপরূপ দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দিচ্ছে। এ বিলের সৌন্দর্য ও পদ্ম দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই আসছে শতশত মানুষ। গোপালগঞ্জের বলাকইড় পদ্মবিলের রাশি রাশি পদ্মফুল প্রকৃতিপ্রেমীদের মাঝে আভা ছড়াচ্ছে। বিশাল বিলে অসংখ্য গোলাপী পদ্মের সমাহার দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে। প্রতি বছরই প্রকৃতিকভাবে এখানে পদ্মফুল জন্ম নেয়। আর পদ্মা সেতু হওয়ায় ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুরসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বিভিন্ন জেলা থেকে খুব সহজে ও অল্প সময়ের মধ্যে ভ্রমণপিপাষুরা চলে আসতে পারেন এ বিলে। নৌকায় ঘুরে উপভোগ করেন পদ্ম বিলের চোখ জড়ানো সৌন্দর্য। কিন্তু এখানে দূর দূরান্ত থেকে আসতে কিছুটা সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। তাই এখানে আসার সড়কটি প্রশস্ত ও পাকাকরণ এবং সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণসহ এখানে মৌসুমি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন দর্শনার্থীরা। কখন আসবেন পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা বা তার আশপাশ থেকে মানুষ এখানে দিনে এসে আবার দিনে ফিরে যেতে পারছেন। এতে সরকারি ছুটির দিনগুলোতে থাকছে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। এ সময় নৌকার সংকট দেখা দেয়। তাই সরকারি ছুটির দিনে না এসে অন্যান্য দিনগুলোতে আসলে মন ভরে ঘুরে দেখা যাবে পদ্মবিলের সৌন্দর্য। কিভাবে আসবেন
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত দর্শনার্থী এখানে ছুটে আসছেন বিলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ইট পাথরের যান্ত্রিক জীবন থেকে কিছুটা সময়ের জন্য প্রকৃতির সঙ্গে একাকার হতে নানা বয়সের মানুষের এ যেন এক মিলন মেলা।
সূর্য়ের আভা ছাড়ানোর আগেই দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। সন্ধ্যা অবধি পরিবার পরিজন, বন্ধু বান্ধব আর প্রেমিক প্রেমিকারা ছোট বড় নৌকায় করে ভেসে বেড়ান প্রকৃতির এ অপরূপ সৃষ্টির মাঝে।
বিলে যত দূর দৃষ্টি যাবে দেখা মিলবে সবুজের মাঝে মাথা উঁচুক করে থাকা গোপালী পদ্ম। সেই সঙ্গে পদ্ম পাতার ওপর ও জলরাশিতে দেখা মিলবে সোলালী ব্যাঙ, ঘাস ফোডিং ও মাছের। দেখা মিলবে মৌমাছি দলের মধু সংগ্রহের জন্য এক ফুল থেকে অন্য ফুলে উড়ে বেড়ানো। কিছুটা সময়ের জন্য এ যেন অন্য জগতে হারিয়ে যাওয়া। আর অনিন্দ্য সৌন্দর্যের জলজ ফুলের রাণী পদ্ম মনের সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে। এখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা যে যার মতো করে এ বিলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন আর ফ্রেমবন্দি করে রাখছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের বিলবেষ্টিত গ্রাম বলাকইড়। জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রাম। আর ইতোমধ্যে পদ্মবিলের কারণে গ্রামটি দেশ জুড়ে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। ১৯৮৮ সালে বন্যার পর থেকে বর্ষাকাল এলেই বিলের অধিকাংশ জমিতে প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মে থাকে। আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত বলাকইড় পদ্মবিলে ফুল থাকে। এ সময় পুরো বিল গোলাপী আর সাদা রংয়ের পদ্মফুলে ভরে ওঠে। তবে সাদা রংয়ের পদ্ম কিছুটা কম দেখা যায়।
পদ্ম যেন এই এলাকার জন্য আশির্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিলে ঘুরতে আসা শত শত দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে কর্মহীনরা উপার্জন করতে পারছেন। এ উপার্জনের ওপর নির্ভর করে চলে অন্তত শতাধিক পরিবার। তবে, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার দর্শনার্থীদের চাপ তুলনামূলক বেশি হওয়ায় তাদের হিমশিম খেতে হয়। এ তিন দিনে দেখা দেয় নৌকার সংকট। অনেক দর্শনার্থীকে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ না করেই ফিরে যেতে হয়। তবে সে সময় স্থানীয়রা তাদের ব্যক্তিগত নৌকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। তারপরেও দর্শনার্থীদের তুলনায় সেটি অপ্রতুল।
এদিকে নৌকা সংকটের সুযোগে কেউ কেউ অল্প সময় ঘুরিয়ে বেশি টাকা নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন দর্শনার্থীরা। তারা বলেন, এখানে নৌকার মালিকরা একটা সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। তারা বন্ধের দিন দর্শনার্থী বেশি হওয়ায় বাড়তি আয়ের আশায় ২৫-৩০ মিনিট ঘুরিয়ে জনপ্রতি ১০০ টাকা করে বেশি নেন। তাতে দর্শনার্থীরা মন ভরে পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন না।
ঢাকার গাবতলী বাসস্টান্ড থেকে টেকেরহাট হয়ে গোপালগঞ্জগামী বাসে করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলতলী বাসস্টান্ডে নামতে হবে। সেখান থেকে ইজিবাইকে করে করপাড়া ইউনিয়নের বলাকইড় পদ্মবিলে যাওয়া যাবে। আবার ঢাকার গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া বাসস্টান্ড থেকে খুলনা বা গোপালগঞ্জগামী বাসে উঠে পদ্মসেতু পার হয়ে জেলা শহরের বেদগ্রাম বাসস্টান্ডে নামতে হবে। সেখান থেকে ইজিবাইকে করে অনায়াসে যাওয়া যাবে পদ্মবিলে। অন্যান্য জেলা থেকে এখানে আসতে হলে জেলা শহরের বেদগ্রামে নেমে ইজিবাইকে করে সহজেই পদ্মবিলে যাওয়া যাবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১