বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০২ May ২০২৩

ভুয়া পরীক্ষার্থীর দায় মাদ্রাসা সুপারের, এমন অঙ্গীকারে ১৭ মাদ্রাসার অনুপস্থিত ৫৩ পরীক্ষার্থী


আবু হাসান শেখ, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
চলতি এসএসসি (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট) ও সমমানের পরীক্ষায় ভুয়া পরীক্ষার্থী রোধে উপজেলা প্রশাসন নিয়েছে অঙ্গীকার নেয়ার বিকল্প উদ্যোগ। এজন্য খোলা হয়েছে একটি রেজিস্টার। যেখানে মাদ্রাসা কেন্দ্রে অংশগ্রহণকৃত প্রতিটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ পরীক্ষা শুরুর আগে দিচ্ছে অঙ্গীকার। তারা তাদের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও পরীক্ষার বিষয় লিখে লিখছেন পরীক্ষার্থী সনাক্ত করে সঠিক পাওয়া গেল। চলতি এসএসসি (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট) ও সমমানের পরীক্ষায় ভুয়া পরীক্ষার্থী রোধকল্পে এ উদ্যোগটি নিয়েছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চলতি দাখিল পরীক্ষার কিশোরগঞ্জ মাদ্রাসা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব মোজাফ্ফর হোসেন। তিনি আরও জানান— কোন ভুয়া পরীক্ষার্থী ধরা পড়লে তার দায় মাদ্রাসা প্রধানকেই নিতে হবে মর্মে অঙ্গীকারও নেয়া হচ্ছে।
চলতি এসএসসি (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত ৩০ এপ্রিল। এ উপজেলার ২৮ টি মাদ্রাসা থেকে চলতি দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিল ৫৬৬ জন পরীক্ষার্থীর। কিন্তু অংশগ্রহণ করেছে ৫১৩ জন । দাখিল পরীক্ষার প্রথম দিন থেকেই মাদ্রাসা কেন্দ্রে ২৮টি মাদ্রাসার মধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান থেকে এ ৫৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেনি। তাহলে কি অঙ্গীকার আর প্রত্যয়ন নেয়ায় এ পরীক্ষার্থীরা চলতি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে না এমনটি মনে করছে পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই। অন্যদিকে সচেতন মহল ধারণা করছে এ সকল অংশগ্রহণ না করা পরীক্ষার্থী কি ভুয়া পরীক্ষার্থী ছিল? এজন্য কি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি, নাকি মাদ্রাসা প্রধানগণ ধরা খাওয়ার ভয়ে তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাননি? অনেকে বলছেন এক বা দু’—তিনটি মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ না করাটি স্বাভাবিক। কিন্তু ১৭টি মাদ্রাসা থেকে অনুপস্থিত থাকবে ৫৩ জন পরীক্ষার্থী এটি অস্বাভাবিক মনে করছে অনেকে। এ ঘটনাটি ভুয়া পরীক্ষার্থীর বিষয়টি সামনে আনছে ও জনমনে রহস্য সৃস্টি করেছে।
এদিকে উপজেলায় চলতি দাখিল পরীক্ষায় ২৮টি মাদ্রাসা অংশগ্রহণ করেছে। এরমধ্যে ১৭টি মাদ্রাসার ৫৩ জন পরীক্ষার্থীই রয়েছে অনুপস্থিত। অনুপস্থিতির সংখ্যা ও প্রতিষ্ঠান গুলো হল উত্তর বাহাগিলী খামাতপাড়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৯ জন, দক্ষিণ দুরাকুটি একরামিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৬ জন, কালিকাপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৫ জন, মেলাবর ইউসুফিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৪ জন, গাড়াগ্রাম খাইরিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৪ জন, সিঙ্গেরগাড়ী জহুরিয়া শরিফ দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৪ জন, মেলাবর বালিকা দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৩ জন, সিঙ্গেরগাড়ী পূর্বপাড়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৩ জন, মুশা মডেল দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৩ জন, , কালিকাপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৩ জন, পানিয়ালপুকুর মাহাতাবিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে ২ জন, উত্তর দুরাকুটি কুদরতিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২ জন, উত্তর বাহাগিলী ডিএস দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১ জন, কিশোরগঞ্জ কেশবা ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ১ জন, উত্তর কালিকাপুর মুসলিমশাহি দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১ জন, চাঁদখানা বুড়িরহাট দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১ জন ও দক্ষিণ বড়ভিটা বাইতুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১ জনসহ মোট ৫৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেনি।
অন্যদিকে উপজেলার কিশোরীগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি ও এসএসসি ভোকেশনাল কেন্দ্রে সাধারণ পরীক্ষার্থী ৭১২ জন ও ভোকেশনালে ২৭৬ জন মোট ৯৮৮ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ৯৮৪ জন পরীক্ষার্থী। অনুপস্থিত ৪ জন। রণচন্ডী স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষার্থী ৭৮৬ জন, তবে অংশগ্রহণ করেছেন ৭৭৮ জন, অনুপস্থিত হল ৮ জন। কিশোরীগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষার্থী ৮৫৫ জন, পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৮৫০ জন, অনুপস্থিত ৫ জন এবং শিশু নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষার্থী ৫৮৭ জন, অংশগ্রহণ করেছে ৫৮১ জন, অনুপস্থিত ৬ জন। এসএসসি ও এসএসসি ভোকেশনাল ৪ টি কেন্দ্র মিলে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩ জন।
ভুয়া পরীক্ষার্থী রোধে রেজিস্টার খোলা ও প্রত্যয়ন নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মাদ্রাসা কেন্দ্রের সচিব মোজাফ্ফর হোসেন বলেন— যাতে কোন ভুয়া পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারে এ জন্য প্রতি বিষয়ের পরীক্ষা শুরুর আগেই মাদ্রাসা প্রধানগণের কাছ থেকে প্রত্যয়ন নেয়া হচ্ছে। কোন ভুয়া পরীক্ষার্থী পাওয়া গেলে তার দায় মাদ্রাসা প্রধানকে নিতে হবে এ রকম মুচলেকাও নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণে ছাত্রী তল্লাশি বুথও খোলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর—ই—আলম সিদ্দিকী জানান— ভুয়া পরীক্ষার্থী ধরা পড়লে তার দায় ওই মাদ্রাসা প্রধানকে নিতে হবে এরকম প্রত্যয়ন নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত বছর মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ভুয়া পরীক্ষার্থী ধরা পড়ায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা চলতি এসএসসি (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট) ও সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠভাবে গ্রহণে সকল ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছি।
উল্লেখ্য যে, ২০২২ সালের এসএসসি (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট) ও সমমানের পরীক্ষায় ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের দাখিল পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে পরীক্ষার্থীর ছোট বোন ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে আটক করা হয়। দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই ভুয়া পরীক্ষার্থী ছিল রণচন্ডী সামছুল উলম দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী। ওই পরীক্ষার্থীকে দু’ বছরের জন্য বহিস্কার করা হয়। এ ভুয়া পরীক্ষার্থী ধরা পড়ায় চলতি পরীক্ষায় এ উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১