আপডেট : ০৬ July ২০২২
এবার ঈদুল আজহার আগে ও পরের তিনদিন মিলিয়ে মোট সাতদিন মহাসড়কে যৌক্তিক কারণ ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। এই বিধিনিষেধে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন চালক-যাত্রীরা। এ বিষয়ে, অ্যাপ-বেইজড ড্রাইভারস ইউনিয়ন অব বাংলাদেশের (ডিআরডিইউ) সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ বলেন, সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে ব্যবসায়িক স্বার্থ থাকতে পারে। কয়েকটা দিন যাক, আমরা ঈদের আগে কোনো কর্মসূচি হাতে নিচ্ছি না। যত যন্ত্রণা আমাদের ওপর দিয়েই যাক। ঈদ আরো আসবে। ঈদের পরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো এবং কর্মসূচি হাতে নেবো। তিনি বলেন, যার মোটরসাইকেল আছে সে সেটা নিয়ে যাবে না বাড়িতে? বিষয়টা কেবল রাইড শেয়ারিং কেন ভাবা হচ্ছে? আর সড়ক দুর্ঘটনার অজুহাত তুলে যে বিধিনিষেধ, দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে মোটরসাইকেল দায়ী নয়। আমরা মহাসড়ক ও সেতুতে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন দাবি করছি। তবে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধের বিষয়টিকে পুরোপুরি প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বলছেন পরিবহন মালিকরা। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ঈদযাত্রায় বাইকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন। এর সঙ্গে পরিবহন মালিকদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সম্প্রতি মোটরসাইকেল চলাচলের এ বিধিনিষেধের পেছনে পরিবহন (বাস) মালিকদের ইন্ধনের অভিযোগ তুলেছেন মোটরসাইকেল চালক ও যাত্রীরা। যদিও পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগ নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। সড়কে ৭ দিন মোটরসাইকেল না চলাচলের সরকারের সিদ্ধান্ত গত ঈদের মতো এবারো যারা মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করছিলেন তারা পরিকল্পনা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে ট্রেনের টিকিট পেতেও ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ফলে একমাত্র উপায় থাকছে বাস। সম্প্রতি সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন বিভাগে অনুষ্ঠিত এক সভা শেষে সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী জানান, ঈদুল আজহায় ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল (রাইড শেয়ারিং) মহাসড়কে চলতে পারবে না। রাইড শেয়ারিং শুধু রাজধানী ঢাকাসহ অনুমোদিত এলাকায় চলতে পারবে। ঈদুল আজহার আগের তিনদিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরের তিনদিন সারা দেশের মহাসড়কে যৌক্তিক কারণ ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। পাশাপাশি এক জেলায় রেজিস্ট্রেশন করা মোটরসাইকেল অন্য জেলায় চালানো যাবে না। তবে যৌক্তিক ও অনিবার্য প্রয়োজনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে মোটরসাইকেল চালানো যাবে। এ নিয়ে বাইকার ও যাত্রীরা বলছেন, গতবারের ঈদযাত্রায় বিপুলসংখ্যক মানুষ মোটরবাইকে গ্রামে গেছেন এবং ঈদ শেষে ফের কর্মস্থলে ফিরেছেন। এক্ষেত্রে তারা দ্রুত এবং অপেক্ষাকৃত কম খরচে যাতায়াত করতে পেরেছেন। দুই চাকার এই বাহন নিয়ে সহজেই যানজট এড়ানো গেছে। কোনো সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়েও থাকতে হয়নি। কিন্তু এর বিপরীতে গত ঈদে যাত্রী সংকটে ভুগেছে বাসগুলো। বছরের পর বছর ঈদে বাড়তি ভাড়ার নৈরাজ্য চালিয়ে আসা বাসমালিকরা বেশ বেকায়দায় পড়েন গত ঈদে। যাত্রী না পাওয়ার কারণে শিডিউলও বাতিল করতে বাধ্য হয় অনেক পরিবহন। মোটরসাইকেলের চালক ও যাত্রীদের অভিযোগ, বাসমালিকদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অর্থাৎ মোটরসাইকেলে যারা যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তারাও যেন বাধ্য হয়ে বাসেই যান, সেজন্য এমন বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। এই বিধিনিষেধ দিতে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে দুর্ঘটনার অজুহাত। বিআরটিএর পক্ষ থেকে দাবি ছিল বাইকে রাইড শেয়ারিং নিষিদ্ধ করা। আলোচনাও হয়েছে রাইড শেয়ারিং নিয়ে, ব্যক্তিগত পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়নি। এটা স্পষ্ট, এই জায়গায় একটা ভুল মেসেজ যাচ্ছে। পরিবার নিয়ে গ্রামে যাবেন সেটা নিষেধ করেনি, যাত্রী নিয়ে যাবেন সেটা নিষেধ করা হয়েছে। মোজাম্মেল হকের মতে, ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করলে তা হবে মাথা ব্যথায়, মাথা কাটার মতো ব্যাপার। কারণ ঈদযাত্রায় মানুষ পরিবহন মালিকদের হাতে জিম্মি থাকে এবং পদে পদে ভোগান্তি পোহায়। স্বস্তিতে প্রিয়জনের কাছে যেতে তারা মোটরসাইকেল বেছে নেন। মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন চালক ও যাত্রীরা। এমনই এক ভুক্তভোগী বেসরকারি চাকরিজীবী তামজিদ হাসান।তিনি বলেন, প্রতি বছর ঈদে নিজের মোটরসাইকেল চালিয়ে কুড়িগ্রামের বাড়িতে যাই। এবারো সেই পরিকল্পনা ছিল। তবে এক জেলার মোটরসাইকেল অন্য জেলায় যেতে পারবে না, এমন বিধিনিষেধে বিপাকে পড়েছি। তিনি আরো বলেন, গণপরিবহনের প্রতি মানুষের অনীহা বাড়ায় মানুষ মোটরসাইকেলে চেপে বাড়ি যাচ্ছে। কার স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত তা মাথায় ঢুকছে না। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত যুগোপযোগী নয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর বলেন, সরকারের ঘোষণাটা ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। কারণ মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করেনি, রাইড শেয়ারিং নিষিদ্ধ করেছে। এমনিতেই মহাসড়কে রাইড শেয়ারিংয়ের অনুমোদন নেই। ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল নিষেধ করেনি। ঈদযাত্রা নিয়ে যে তিন-চারটা মিটিং হয়েছে, প্রত্যেকটা মিটিংয়ে আমি ছিলাম।
সভায় মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং নিষিদ্ধ পরিবহন মালিকদেরও দাবি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবহন মালিক, সড়ক ও জনপথ এবং
তামজিদ হাসান বলেন, মোটরসাইকেলে যেতে ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগে। ধীরে ধীরে চালিয়ে ভোগান্তি ছাড়াই নিরাপদে বাড়ি যাওয়া যায়। অন্যদিকে বাসে যেতে সময় বেশি লাগে। খরচ আর ভোগান্তি তো আছেই। কুড়িগ্রামের নন এসি বাসের ৮০০ টাকার টিকিট ঈদের সময় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা হয়। তারপরও টিকিট পাওয়া যায় না। নির্ধারিত সময়েও বাস ছাড়ে না।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১