আপডেট : ১৯ February ২০২২
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর ক্যাম্পাসের আবাসিক এলাকায় কর্মচারী ও স্থানীয়দের বাস। কর্মচারীদের কলোনির পাশেই পাহাড়ি জঙ্গল। কয়েকদিন আগেই জঙ্গল থেকে হঠাৎ করে খাবারের খোঁজে বের হয়ে আসে ১২ ফুট দীর্ঘ ‘রাজ গোখরা’ সাপ। তাকে দেখার সাথে সাথে আতঙ্কিত হয়ে পরে স্থানীয়রা। আর ঠিক তখনই সাপটিকে উদ্ধারের জন্য ছুটে আসেন রফিকুল ইসলাম। ক্যাম্পাসে সাপেদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম। বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। বাবার চাকরিসূত্রে পড়ালেখা করেছেন বি-বাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে। এবং এসএসসি পাস করেন বরিশালের বি এম স্কুল থেকে। পরিবারের চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি। বর্তমানে পড়াশোনা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে মাস্টার্সে। মানুষের মন থেকে সাপের ভয় দূর করতে এবং সাপ কে বাঁচাতে রফিকুল ইসলাম গড়ে তুলেন ‘স্নেক অ্যাওয়ারনেস’ নামে একটি সংগঠন। ক্যাম্পাসের যেখানেই সাপের দেখা মিলে সাথে সাথে ডাক আসে সংগঠনটির। বিশেষ করে যখন হল, ফ্যাকাল্টি, লোকালয়ে সাপ প্রবেশ করলেই উদ্ধারকাজে ছোটে আসে রফিক এবং তার স্বেচ্ছাসেবীরা। এ পর্যন্ত একশোর বেশি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০টির অধিক সাপ উদ্ধার করেছেন তারা। এগুলোর মধ্যে বিষধর, মৃদু বিষধর এবং বিষহীন সাপ ছিল। যেমন:বিষধর সাপদের মধ্যে রাজ গোখরা, পদ্ম গোখরা, শঙ্খিনী, বড় কাল কেউটে, সবুজ বোড়া, লালঘাড় ঢোঁড়াসাপ এবং নির্বিষ সাপদের মধ্য দাঁড়াশ, জলঢোঁড়া সাপ, ঘরগিন্নি ,দুধরাজ, বেত আছড়া অন্যতম। রফিক বলেন, দ্বিতীয় বর্ষ থেকে বন্যপ্রাণী বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজে পার্বত্য অঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করি। এবং সেখানে দেখতে পাই সাপ সম্পর্কে মানুষের এখনো সেই কু ধারণা রয়ে গিয়েছে। যেখানে সাপ দেখতে পাচ্ছে সেখানে মারা হচ্ছে তাদের। আর সেজন্যই তিনি গড়ে তোলেন ‘স্নেক এওয়ারনেস’ নামের সংগঠনটি। সাপ ধরতে ভয় করে কিনা তা জানতে চাইলে রফিক বলেন, আমিও মানুষ প্রানের ভয়তো আমার ও আছে তবে এতোটা ও নয়। সত্যি বলতে ভয়কে জয় করতে না পারলে তো কখনই মানুষ ও সাপের প্রান বাঁচাতে পারবো না। কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতে হবে। সংগঠনের যাত্রা ২০২০ থেকে শুরু হলে ও অল্প সময়ে মানুষের কাছে সাপ বিষয়ক সহযোগীতার আস্থার প্লাটফর্ম হয়ে দাড়ায়। ১৫ জনের একটিভ রেসকিউয়ার ও ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি ইমারজেন্সী রেসকিউ টিম রয়েছে। এছাড়াও ৩০-৩৫ জনের মতো সেচ্ছাসেবী রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের ফলোয়ার সংখ্যা ১৫০০০ বেশি। তারা প্রতিনিয়ত এই সচেতনতার পাশাপাশি সাপ বিষয়ক বিভিন্ন সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। রফিক সাপের সচেতনতা সম্পর্কে বলেন, সাপ সত্যি বলতে একটি নিরীহ প্রাণী এই প্রাণী না কানে শুনতে পায়, না মানুষকে মনে রাখতে পারে এর স্মৃতিশক্তি প্রখর নয়, পোষ মানার মতো নয় বিবেক বোধ বলতে তেমন কিছু নেই। কেবল সহজাত প্রবৃত্তি হিসেবে নিজের প্রান বাঁচাতে আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে তা ও দংশন করে থাকে বাধ্য হলে অন্যথায় মূল্যবান বিষ সাপ অপচয় করতে চায় না যেটা সাপ শিকার ধরতে মজুদ রাখে। সাপ সম্পর্কে সচেতন হওয়া এতটাই জরুরী যার সাথে মানুষের জীবন-মৃত্যুর বিষয় জরিত অবেহেলা করলেই জীবনের ঝুঁকি। সাপে কাটলে এছাড়াও সংগঠনটি পিছন থেকে শক্তি জুগিয়ে যাচ্ছেন ড. মোহাম্মাদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী (সহযোগী অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ চবি)। সাপ বিষয়ক কার্যক্রম ও গবেষনায় পরামর্শ ও সহযোগীতায় ইবরাহিম আল হায়দার (সহযোগী গবেষক, ভেনম রিসার্চ সেন্টার,চমেক) সজীব রুদ্র (সহকারী গবেষক,ভেনম রিসার্চ সেন্টার), বোরহান বিশ্বাস রোমন (প্রধান প্রশিক্ষক ভেনম রিসার্চ সেন্টার) এছাড়াও বাংলাদেশ ভেনম রিসার্চ সেন্টারের গবেষক দল ও এস্নেক অ্যাওয়ারনেস গ্রুপের রেসকিউয়ার ও স্বেচ্ছাসেবক টিম।
ওঝা নয় হাসপাতালে চিকিৎসা হয়।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১