আপডেট : ২২ December ২০২১
চটপটে প্রাণচঞ্চল ফুঁটফুটে এক ছোট্ট শিশু মামুন। বাড়ির উঠানের ধুলাবালি মাড়িয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত মাতিয়ে রাখে সারা দিন। খেলা শেষে মায়ের কোলে উঠে বসে। খানিক পর মায়ের কোল থেকেই দাদীর কোল ঝাপটে ধরে সে। শিশু মামুনের এমন উচ্ছলতায় সবাই খানিক খুশি হলেও সব আনন্দ ফিকে হয়ে আসে তার মরণ ব্যাধি হৃদযন্ত্রে ছিদ্র হওয়ার কথা ভাবতেই। শিশুটির বয়স দেড় বছরের একটু বেশি। কে বলবে চটপটে প্রাণচঞ্চল এ শিশুটি এক প্রাণঘাতী মরণ ব্যাধি হার্ট ছিদ্র নিয়ে ধিকিধিকি বেঁচে আছে। এগুচ্ছে মৃত্যুর দিকে। এক মাত্র সন্তানের এমন মৃত্যুর দিকে ধাপিত হওয়া পরিণতিতে অসহায় হয়ে পড়েছে নিতান্তই গরীব অসহায় পরিবারটি। সহায় সম্বল শেষ করে সাধ্যমত চিকিৎসা করালেও এখন আর সামান্য ওষুধও কিনতে পারেনা শিশুটির পরিবার। স্বজনদের দান করে দেওয়া কিছু টাকা পয়সাতে চলে সংসার। নুন আনতে গেলে পান্তা ফুরায় এমন নিদারুন কষ্টে দিন কাটছে শিশু মামুনের পরিবারে। অসুস্থ শিশুটির বাবা ও মাও নানা রোগে ভোগছেন। সন্তানের বাঁচা মরার সামনে নিজেদের রোগের কথা বেমালুম ভুলে গেছে তারা। এমনি এক মৃত্যু পথযাত্রী শিশু সন্তান নিয়ে দিনানিপাত করছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের আনোয়ার ও মাফিয়া খাতুন দম্পত্বি। তাদের আকুতি আমাগর পুতটারে বাঁচাইয়া দেইন্নি। আমগরত আর কিছু নাই এই পুতই দুনিয়া পুতই সব। শিশু মামুনের স্বজনরা জানান, তার বাবা আনোয়ার রাজমিস্ত্রীর যুগালির কাজ করে। কিছু দিন হলো তার মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেই থেকে এ কাজও নিয়মিত করতে পারছেনা। এক সন্তান নিয়ে তাদের সংসার। সরকারি খাস জমিতে ছোট্ট একটি ঘর করে তাদের বসবাস। বছর তিনেক আগে আনোয়ার মাফিয়ার বিয়ে হয়। ঠিক দেড় বছর পরেই এক পুত্র সন্তানে জন্ম হয় তাদের সংসারে। ভালই চলছিল তাদের সংসার। সামান্য কামাই দিয়েই স্ত্রী সন্তান নিয়ে আনোয়ার সংসার চালাচ্ছিলেন। ছয়মাস আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু মামুন। পরে হাসপাতালে নিলে ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেন শিশু মামুনের হার্টে ছিদ্র ধরা পড়েছে। সেই থেকে সাধ্যমত চিকিৎসা করছে তার পরিবার। এখন অর্থ কষ্টে সামান্য ওষুধও কিনতে পারছেনা তারা। এমন অসুস্থ একমাত্র ছেলেকে নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। শিশু মামুনের দাদি কয়েত বানু জানান, আমাদের বাড়ির দুয়ার (উঠান) সারাক্ষন মাতিয়ে রাখে নাতিডা। কিন্তু যখনই ভাবি সে দিন দিন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখনই আমাদের সব আনন্দ শেষ হয়ে যায়। এখন টাকার অভাবে সামান্য চিকিৎসাও করাতে পারছিনা। তার বাপের মাথায় সমস্যার কারনে এখন কামলা খাটতেও পারে না। এখন দুবেলা ডালভাত যোগারই কষ্ট হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন কোনো সহৃদয়বান কেউ যদি অর্থ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে তাহলে কেবল নাতিকে বাঁচাতে পারবো আল্লাহর রহমতে। তার অপারেশনের জন্য আড়াই লাখ টাকা লাগবে। কই পাবো এতো টাকা। যেখানে দুবেলা খাবার যোগার করতেই আমরা পারি না। অসুস্থ শিশু মামুনের মা মাফিয়া খাতুন জানান, আমরা বহু ডাক্তার দেখানোর পর জানতে পারি আমাদের ছেলের (শিশু মামুন) হার্টে ছিদ্র রয়েছে। ডাক্তার বলছে দ্রুত অপারেশন করাতে। দ্রুত অপারেশন না করালে অপারেশন কঠিন হয়ে পড়বে। এমনি তাকে বাঁচানো যাবে না বলেও জানিয়ে দেন ডাক্তার। তিনি আকুতি করে বলেন, আমাগর পুতটারে বাঁচাইয়া দেইন্নি। আমগরত আর কিছু নাই এই পুতই দুনিয়া পুতই সব। হে না বাঁচলে আমরা কেমনে বাঁচাম গো। টেংরা মোক্তার মোড়ের ওষুধ ব্যবসায়ি মোক্তার হোসেন জানান, আমার কাছ থেকেই ডাক্তারের দেওয়া ওষুধপাতি নিত মামুনের পরিবার। অসুস্থ শিশুটি দারুন চটপটে স্বভাবের। সারাদিন বাড়ি মাতিয়ে রাখে। কিন্তু সব আনন্দের মাঝে দু:সংবাদ হলো শিশু মামুন দিন দিন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখনই তার উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে হার্টের অপারেশন জরুরি। নইলে তাকে বাঁচনো যাবে না। চিকিৎসক বলছে দ্রুত সময়ের মধ্যে তার অপারেশন করাতে। তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল বাতেন সরকার জানান, শিশু মামুনের পরিবার খুবই অসহায়। নিতান্তই শ্রম বিক্রি করে সংসার চলে তাদের। এমন পরিস্থিতিতে এতো টাকা খরচ করে সন্তানের চিকিৎসা করা সম্ববনা। তিনি বলেন কোনো দানশীল কেউ বা কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠান যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে তাহলেই কেবল শিশুটিকে বাঁচাতে পারে তাদের পরিবার।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১