আপডেট : ০২ August ২০২১
মুহাম্মাদ হাবীব আনওয়ার মানুষকে আকৃষ্ট করার সহজ, সুন্দর ও পারিশ্রমিকহীন কাজ হচ্ছে, কারো দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসা আর নাম মনে রাখা। আপনি যখন কারো দিকে তাকিয়ে হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে একটু মুচকি হাসি দেবেন তখন আপনার প্রতি তার হূদয়ে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। আপনার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যাবে। মুচকি হাসা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে মানবিক ভাষা। সৌজন্যবোধের বহিঃপ্রকাশ। মানবিক আচরণ ও উত্তম চরিত্রের অন্যতম সৌন্দর্য। মুচকি হাসার মাধ্যমে অন্যের হূদয়ে যেমন জায়গা করে নেওয়া যায় তেমনি নিজের দাগহীন হূদয়ের সচ্ছতাও প্রকাশ প্রায়। মুচকি হাসি বলা হয়, হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ও আনন্দচিত্তের ফলে আওয়াজহীন দাঁত প্রকাশ হওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল মুচকি হাসি। তিনি সর্বদা মুচকি হাসতেন। আপন-পর, বন্ধু-শত্রু সবার সাথে তিনি উত্তম আচরণ করতেন। হাসিমুখে কথা বলতেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারিস ইবনে জাযয়ি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বেশি মুচকি হাসতে আর কাউকে দেখিনি।’ (তিরমিযি, হাদিস নং-৩৬৪১) আল্লাহর রাসুল শুধু নিজেই মুচকি হেসে ক্ষ্যান্ত হননি সকল উম্মতের জন্য মুচকি হাসাকে ইবাদত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। হজরত আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎকাজ হতে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। পথ হতে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ।’ (তিরমিযি, হাদিস নং-১৯৫৬) হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ও মুচকি হাসির মাধ্যমে মানুষের হূদয়ে খুব সহজেই প্রবেশ করা যায়। মানুষের হূদয়েও একটা তালা আছে। সেই তালার উত্তম চাবি হচ্ছে মুচকি হাসি। হাসির মাধ্যমে পারস্পরিক ভালোবাসা, হূদ্যতা, কল্যাণ ও মমতাবোধ তৈরি হয়। যার ফলে অহংকার, হিংসা- প্রতিহিংসা দূর হয়। প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব উবে যায়। সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার হয়। ভ্রাতৃত্ব মজবুত হয়। আর এমন সমাজই সকলের কাম্য। এই সাধারণ বিষয়গুলো ঈমানের অংশও বটে। কারণ, মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের কাছে প্রিয় হওয়া আবশ্যক। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিন তো সে, যে মানুষকে ভালোবাসে এবং মানুষও তাকে ভালোবাসে। যে মানুষকে ভালোবাসে না এবং মানুষও যাকে ভালোবাসে না, তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। মানুষের জন্য সবচেয়ে উপকারী ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ মানুষ।’ বর্তমান সময়ে নৈতিকতার অবক্ষয় প্রবল আকার ধারণ করেছে। হিংসা, অহংবোধ আর স্বার্থের বিষাক্ত বীজ আমাদের হূদয়ে এমনভাবে প্রোথিত হয়েছে যে, অনেক জোর করেও আমাদের মুখে মুচকি হাসি আনা সম্ভবপর হয় না। এর মূল কারণ হচ্ছে আমাদের হূদয় সচ্ছ নয়। মুচকি হাসি, হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ও কথাবার্তায় নম্রতা তখনি আসে যখন হূদয় সচ্ছ থাকে। একাজগুলো হতে হয় অন্তরের গভীর থেকে। হূদয়ের সচ্ছতার ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যার মন পরিষ্কার, অন্তর সচ্ছ সে শ্রেষ্ঠ মানুষ। হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলা হলো, কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বলেন, প্রত্যেক বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী সত্যভাষী ব্যক্তি। তারা বলেন, সত্যভাষীকে তো আমরা চিনি, কিন্তু বিশুদ্ধ অন্তরের ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, সে হলো পূত-পবিত্র নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ যার কোনো গুনাহ নাই, নাই কোনো দুশমনি, হিংসা-বিদ্বেষ, আত্মঅহমিকা ও কপটতা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৪২১৬) সচ্ছ হূদয়ের জন্য প্রয়োজন সাধনা। সুস্থ পরিবেশ। খোদাভীতি। অন্তরের মাঝে ঝিয়ে রাখা অহমিকা ও আত্মগরিমা দূর করতে হবে। অন্তরে দাম্ভিকতা পুষে রাখলে কখনো সফলতা আসবে না। হূদয়ের নূর নষ্ট হয়ে যাবে। অহংকার, দাম্ভিকতাকে আল্লাহতায়ালাও অপছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা বলেন, ‘পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমিতো ভূপৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না।’ (সুরা বনি-ইসরাইল, আয়াত-৩৭) হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাম্ভিক-অহংকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সরিষার দানা সমপরিমাণ অহংকারও (সামান্যতম) যার অন্তরে আছে সে জান্নাতে যেতে পারবে না। আর সরিষার দানা সমপরিমাণ ঈমানও যার অন্তরে আছে সে জাহান্নামে যাবে না।’ (তিরমিযি, হাদিস নং-১৯৯৮) অন্তর থেকে অহংকার ও আত্মগরিমা দূর করার পাশাপাশি মানবপ্রেম ঢুকাতে হবে। মানুষের সাথে উত্তম আচরণ ও অলংকারপূর্ণ ভাষায় কথা বলা। ক্রোধ সংবরণ করা। ক্ষমা করার মনোভাব তৈরি করা। সত্য গ্রহণের জন্য উন্মুখ থাকা। ভুল পথ এড়িয়ে চলা। সত্যনিষ্ঠদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা। হূদয়কে মমতাময়, সজীব ও কোমল করে গড়ে তুললে মনের অজান্তেই মুচকি হাসি আপনার মুখাবয়বকে উজ্জ্বল করবে। সেই সাথে ইবাদতের পাশাপাশি পারস্পরিক সৌহার্দ্য সৃষ্টি হবে। লেখক : তরুণ প্রাবন্ধিক
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১