আপডেট : ০৬ July ২০২১
কাজী মোহাম্মদ হাসান স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করল বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে জন্ম নেওয়া দেশটি নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে অর্থনীতিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্যের হারও কমে আসছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার এবং ফোকাস ইকোনমিকসের তথ্যমতে, দ্রুত অর্থনীতি বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ ৪৬ বিলিয়ন ডলার। দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে দ্রুতগতিতে। এহেন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে বিশ্বমানের করার জন্য দরকার বৈদেশিক বিনিয়োগ। কিন্তু বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। কেননা বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ অপরিহার্য। এছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টেকসই উন্নয়নের জন্য সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বৈদেশিক বিনিয়োগেও বাংলাদেশ উন্নতি করতে শুরু করেছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এই খাতে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এবং অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে এই খাত আরো তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের সর্বশেষ প্রতিবেদনে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে এফডিআই ১১ শতাংশ কমে গেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের এফডিআই ছিল ২৫৬ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে, ২০১৮-তে বাংলাদেশের এফডিআই ছিল ৩৬১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। বিগত কয়েক বছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমতে শুরু করেছে বাংলাদেশে। এফডিআই কমে যাওয়ার পেছনে বর্তমানে বড় কারণ হচ্ছে করোনা মহামারি। দেশে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। বাংলাদেশে ৬৬টির বেশি দেশ বিনিয়োগ করে থাকে। তবে এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, নেদারল্যান্ডস ও জাপান। বর্তমানে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ আছে চীনের। তবে করোনা মহামারি ছাড়াও বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বা এফডিআই কমার পেছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখযোগ্য, তার মধ্যে শেয়ার মার্কেটের ভঙ্গুর অবস্থা, ব্যাংকিং খাতে অরাজকতা, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অদক্ষ জনবল অন্যতম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অবকাঠামো ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এক বড় কারণ। বিনিয়োগকারীদের মূলত নজর থাকে একটি দেশের অবকাঠামোগত দিক আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দিকে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবকাঠামো অনুন্নত থাকার কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হয় না। আবার সময়মতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না পাওয়া এবং আইনি জটিলতাসহ নানা ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার জন্যও বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে স্বাচ্ছদ্যবোধ করেন না। ফলে বৈদেশিক বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত রূপলাভ করতে পারছে না। তাছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে শেয়ার বাজার এবং ব্যাংকিং খাতের অবস্থা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এতে করে বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহ হারাচ্ছেন। অর্থনীতিবিদের মতে, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আশানুরূপ না হওয়ার মধ্যে আরো কিছু সমস্যা হলো ভূমি না পাওয়া, বিদ্যুৎ স্বল্পতা, গ্যাস সংকট ইত্যাদি। সরকার বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এবং বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তর করার লক্ষ্যে অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টর বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে বিনিয়োগকারীদের নানা সুযোগও দিচ্ছেন। বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হলে সরকারকে কিছু বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে। প্রথমত, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বন্ধ করতে হবে। কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়া যেন বিনিয়োগকারীরা সহজে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাংকিং সিস্টেমকে উন্নত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শেয়ার বাজারের ধস বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজি প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শিল্প কারখানাগুলোতে যাতে বিদ্যুৎ, গ্যাস নিরলসভাবে সরবরাহ থাকে, সেদিকে নজর দিতে হবে। কেননা স্বল্প বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনের গতিকে বাধাগ্রস্ত করে থাকে। বিনিয়োগকারীরা যাতে নিরাপদে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারে, কোনো রকম হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেজন্য তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশে ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে প্রত্যেক সেক্টরগুলোকে বিনিয়োগের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে দেশের বিশাল মানবসম্পদকে কাজে লাগানো যাবে। বিনিয়োগের ফলে দেশে বড় বড় কলকারখানা তৈরি হবে এবং কলকারখানায় শ্রমিক নিয়োগ দেবে। এতে করে যেমন দেশের বেকার সমস্যা বহুলাংশে কমে যাবে তেমনি শ্রমিকরা হয়ে উঠবে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে। সুতরাং, বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এবং বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিবেশ গড়ে তোলা জরুরি। বাংলাদেশের অর্থনীতি একদিন সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাবে এমনটি প্রত্যাশা। লেখক : শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১