আপডেট : ২৮ June ২০২১
জুবায়ের আহমেদ বাংলাদেশ বর্তমানে একটি উন্নয়নশীল দেশ হলেও স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী ও পরবর্তীসময়ে দেশজুড়ে দরিদ্র মানুষের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। একবিংশ শতাব্দীর ২০ বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেলেও দারিদ্র্য এখনো বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের নিত্যসঙ্গী, যারা দিন এনে দিন খায়। বর্তমান সরকারের আমলে নাগরিকদের মাথাপিছু আয় বাড়লেও এটি বেশ লক্ষণীয়, ধনী আরো ধনী হচ্ছে, মধ্যবিত্ত সম্মান বজায় রেখে বাঁচার চেষ্টা করছে এবং নিম্নবিত্ত-গরিব মানুষ যেমন আছে, তেমনই রয়ে গেছে। সরকার ভিক্ষুকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও দারিদ্র্যমুক্ত দেশের স্বপ্ন এখনো অধরাই রয়ে গেছে। এই দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিরাট একটি অংশ রিকশা চালিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাদের মধ্যে অনেকেই মোটরচালিত রিকশা এবং ছোট চাকার মোটর রিকশা হিসেবে পরিচিত মোটরজান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। কর্মব্যস্ত মানুষ সময় বাঁচাতে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে গন্তব্যস্থানে পৌঁছতে এসব রিকশায় চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকে। বিদ্যুৎ অপচয় এবং আরো কিছু কারণে দেশের প্রধান শহরগুলোতে, বিশেষ করে সিটি করপোরেশনগুলোর আওতাধীন এলাকাতে মোটরচালিত রিকশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে কয়েক বছর আগেই। ফলে রিকশাওয়ালারা ট্রাফিক পুলিশ আছে, এমন জায়গা ব্যতীত শহরের অলি-গলিতেই এসব রিকশা চালায়। কখনো যদি ট্রাফিক পুলিশ কিংবা সংশ্লিষ্ট থানার ডিউটিরত পুলিশের মুখোমুখি হয়, তখন টাকা দিয়ে দফা রফা করতে হয়, নতুবা ব্যর্থতায় মোটর খুলে নিয়ে যায় পুলিশ। চট্টগ্রাম শহরে এমন ঘটনা একাধিকবার দেখেছি আমি নিজেই। এছাড়া বহু এলাকায় স্থানীয় পাতি নেতা কিংবা প্রশাসনের লোকদের নিয়মিত টাকা পরিশোধের মাধ্যমে মোটরচালিত রিকশা চালাতে হয়। সিটি করপোরেশনগুলোর নিষেধাজ্ঞার আদেশের ফলে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় মোটররিকশা চালানো অবৈধ কাজ হলেও রিকশাওয়ালারা যেহেতু কাউকে না কাউকে টাকা দিতে হয়, তখন তারা এটাকেই অনুমতি মনে করে রিকশা চালাতে থাকে। এমনকি যাত্রীরাও মোটরচালিত রিকশা খোঁজে দ্রুত গন্তব্যস্থানে যাওয়ার জন্য। সম্প্রতি আবারো মোটরচালিত রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটি আলোচনায় এসেছে। গত কিছুদিন ধরে চট্টগ্রামের অলি-গলিতেও মোটররিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। যারা এসব রিকশা চালাত তারা পুনরায় প্যাডেলচালিত রিকশা চালাচ্ছে। আবার কেউ কেউ শীঘ্রই আবার চালাতে পারবে, এমন বিশ্বাস নিয়ে বাসায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রিকশাচালায় দরিদ্র মানুষগুলো। যাদের বড়জোর ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো সম্পত্তি নেই, এমনকি নেই নগদ অর্থ। দৈনন্দিন আয়ের টাকা দিয়ে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ কিংবা পিতা-মাতা, ভাই-বোনদের প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে হয়, তার বাইরে সঞ্চয় বলতে কিছুই থাকে না তাদের। বাংলাদেশে শিক্ষিত-অশিক্ষিত লোকদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা এতই কম যে, কর্মসক্ষম বেকারের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। তার ওপর রিকশাচালকদের মধ্যে যারা মোটর রিকশা চালায়, তারা এখন পড়েছে মহাবিপাকে। খুব তাড়াতাড়ি অন্য পেশায় যাওয়া তাদের দ্বারা সম্ভব নয়। প্যাডেলচালিত রিকশা চালানোর মতো শারীরিক সামর্থ্য যাদের নেই, মূলত তাদেরই অধিকাংশ লোক মোটরচালিত রিকশা চালায়। বাংলাদেশে প্রযুক্তি, অবকাঠামো ও রাস্তাঘাটের উন্নয়ন বেশ দৃশ্যমান। কৃষিকাজ, অফিস-আদালত কিংবা রিকশা, সবক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার বেশ ইতিবাচক। কিন্তু রিকশায় প্রযুক্তির ব্যবহারে ড্রাইভারদের কষ্ট লাঘবের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে না দেখে, বিদ্যুতের অপচয় হিসেবে দেখার কারণে মোটর রিকশাচালকরা স্বস্তিতে নেই। প্রযুক্তির এই উৎকৃষ্ট সময়ে যেখানে সব ধরনের পরিবহন মোটরচালিত হবে, সেখানে প্যাডেলচালিত রিকশা বিদ্যমান থাকাটাই অমানবিকতার শামিল। কেননা প্যাডেলচালিত রিকশার মাধ্যমে প্যাডেল চেপে সিটে বসিয়ে মানুষ বহন করা প্রাচীন কালের মানুষ কর্তৃক মানুষ বহনের নিকৃষ্ট প্রথার বর্তমানরূপ। রিকশাচালকরা দরিদ্র শ্রেণির ও নিম্ন-আয়ের নাগরিক, তাদের জন্য সহজলভ্য বিকল্প পেশার ব্যবস্থা না করে মোটরচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। মোটরচালিত রিকশা বন্ধ করার পেছনে যদি কথিত বিদ্যুৎ অপচয় কিংবা এর ফলে বিদ্যুতের ঘাটতিই যদি বড় কারণ হয়, তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করে হলেও মোটরচালিত রিকশা ও ছোট চাকার রিকশা হিসেবে পরিচিত সব ধরনের মোটরযান চলাচল স্বাভাবিক রাখা বাঞ্ছনীয়। এতে করে যে মানুষগুলো কর্মহীন হওয়ার শঙ্কায় পড়েছে, তারা তাদের পেশায় নিয়োজিত থাকতে পারবে। উপরন্তু স্বল্পশিক্ষিত কিংবা অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষগুলোর মধ্যে যারা বেকার জীবনযাপন করছে, তারাও এসব মোটরচালিত রিকশা চালানোর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষগুলোর রুটি-রুজির কথা ভেবে হলেও এ বিষয়ে দরিদ্র নাগরিকবান্ধক সিদ্ধান্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি। লেখক : শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম), ঢাকা।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১