আপডেট : ২১ April ২০২১
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের কাইজবাড়ি গ্রামের আদর্শ ও সফল কৃষক মো. সামসুল ইসলাম (৬০)। তিনি কীটনাশকমুক্ত আধুনিক পদ্ধতিতে মৌসুম ভেদে বছর জুড়ে লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, ঢেঁড়স, বরবটি, লাউ, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতিসহ নানা প্রকার সবজি চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন। কীটনাশক মুক্ত ওইসব শাক সবজি উৎপাদন করে নিজ পারিবারের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে এবং স্থানীয় ভাবে বিক্রি করে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। কঠোর পরিশ্রম আর নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হওয়া যায় তার বাস্তব উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। পাশাপাশি নিজের করা কীটনাশক মুক্ত সবজি খেয়ে তিনি শারীরিক ভাবেও সুস্থ আছেন। এই করোনা কালিন সময়ে ও তার কোন প্রকার রোগ বালাই হয়নি। সরেজমিনে কাইজবাড়ি গিয়ে দেখা যায় সবজি নিয়ে তিনি এক প্রকার ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ পরিচর্যার আবার কেউ বিক্রির জন্য সবজি তুলছেন। পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়মিত সাহায্য করছেন। ফলন ভালো রাখতে তিনি নিয়মিত কৃষি অফিসে যোগাযোগ রাখছেন। কৃষক মো. শামসুল ইসলাম বলেন, এক সময় তিনি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করতেন। সব সময় তার ধান চাষে লোকসান গুণতে হতো। এতে করে পরিবারে সব সময় অভাব অনটন লেগে থাকতো। কোন উপায় না পেয়ে বাড়ি সংলগ্ন অল্প জমিতে সবজি চাষ করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। প্রথমে তিনি লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক ও পাটশাক দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এ চাষে তার খরচ হয় মাত্র ৬ হাজার টাকা। ফলন ভালো হওয়ায় এবছর তিনি ১৫ হাজার টাকার উপর ওইসব শাক বিক্রি করেন। এরপর সবজি চাষের প্রতি তার মনোবল আরো বেড়ে যায়। বর্তমানে তিনি ৭৫ শতক জমিতে কোন প্রকার কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই দেশীয় পদ্ধতিতে লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, ঢেড়শ, বরবটি, লাউ ও পাটশাক, করলা, চাষ করেন। এ চাষ করতে বীজ, জমি তৈরী মাচা তৈরী,পরিচর্যা, পানিসহ অন্যান্য কাজে তার ৪০ হাজার টাকার উপর খরচ হয়। এ পর্যন্ত তিনি ৫৫ হাজার টাকার উপর সবজি বিক্রি করেছেন। তিনি আরো বলেন এলাকায় সবজির ভালো চাহিদা রয়েছে। সবজি চাষ ও বিক্রি তিনি নিজেই করেন। ভ্যান গাড়ি নিয়ে তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে দৈনিক ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করছেন। জমিতে যে পরিমাণ সবজি রয়েছে আরো ৪০ হাজার টাকার উপর সবজি বিক্রি হবে বলে জানায়। তিনি আরো বলেন এই জমিতে যদি ধান চাষ করা হতো তাহলে ১৫ হাজার টাকার বেশী ধান পাওয়া যেতো না। সবজি চাষে কম খরচে স্বল্প সময়ে অধিক টাকা আয় করা যায়। তার পরিবারে স্ত্রী, ৫ মেয়ে ২ ছেলে রয়েছে। পরিবারে সবাই এই কাজে সহযোগিতা করছেন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সবজি আবাদে চলছে তার সংসার। সবজি চাষের আয় দিয়ে তিনি সংসারের যাবতীয় খরচ চালিয়ে ৪ মেয়েকে বিবাহ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কীটনাশক বিহীন আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে সবজি আবাদ করায় নিজেদের পুষ্টি চাহিদা মিটানোর কারণে তাদের কোন প্রকার রোগ বালাই হয়নি। সারা বছরই সবজি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। সবজি আবাদ করে বছরে লাখ টাকা আয় হয় বলে তিনি জানায়। তার এই সফলতা দেখে এলাকায় অনেকেই নিজেদের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে অর্থনীতি ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বলেন, শামসুল ইসলাম একজন পরিশ্রমিক কৃষক। সে বারমাসই নানা প্রকার সবজি আবাদ করছে। তিনি আরো বলেন ফলন বৃদ্ধিতে সব সময় কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়। কম খরচে লাভ বেশী হওয়ায় অনেকেই বানিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনরে সবজি চাষ করছেন।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১