বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১০ April ২০২১

মানসিক শান্তির খোরাক বই


বই এমন একটা শব্দ, যার ভেতরে লুকিয়ে আছে হাজারো জ্ঞানের ভান্ডার। হাজারো স্বপ্ন পূরণের কারিগর হচ্ছে এই বই। বই পড়লে শুধু জ্ঞানই বাড়ে না, তার সাথে মানসিকতারও জোগান দেয়। মানসিক শান্তি-প্রশান্তির উৎস এই বই, যা আমাদের অন্তরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা যন্ত্রণাগুলোকেও নিমিষেই দূর করে দিতে পারে। বই পড়লে মানুষের জ্ঞানের দ্যুতি বাড়ে। আমাদের জীবসত্তা জাগ্রত থাকলেও মানবসত্তা জাগ্রত করার সিঁড়ি হচ্ছে বই।

মানব সভ্যতার সূচনা থেকেই মানুষের পাঠ অভ্যাসের তথ্য পাওয়া যায়। মানুষ বই পড়ে মনের খোরাকের জন্য, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এবং নিজেকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার জন্য। জ্ঞানের সূচনা বই থেকেই এবং সে জ্ঞানকে সামগ্রিকভাবে কাজে লাগানোর দক্ষতা মানুষ বই পড়ে পেয়ে থাকে। মানুষের মননশীল, চিন্তাশীল, সৃষ্টিশীল চিন্তার যাবতীয় সূচনার বিস্ফোরণ একমাত্র বইয়ের মাধ্যমে হতে পারে। কিন্তু মানুষ আগে যেভাবে যে-কোনো বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিতে পারত, প্রযুক্তির এ সময়ে এসে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে আগের মতো আর মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বইয়ের সাথে মানুষের দূরত্ব। একটা সময় অলস দুপুরে বালিশে হেলান দিয়ে কিংবা ভ্রমণে বাসে-ট্রেনে বসে বই বই পড়ে সময় কাটানো কিংবা এক টানে একটি বই পড়ে শেষ করার প্রবণতা এখনকার দিনে নেই বললেই চলে। এখন আধা পৃষ্ঠার একটা প্রবন্ধ পড়ার দরকার হলে হয়তো দু-এক লাইন পড়েই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ আমাদের একটা বিষয় স্বীকার করতেই হবে, সবারই বইপত্র বা খবরের কাগজের প্রবন্ধ ইত্যাদি পড়ার অভ্যাস একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অথচ জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে যেসব গুণ বা দক্ষতার প্রয়োজন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বই পড়া বা বই থেকে জ্ঞান অর্জন।

পৃথিবীর সফলতম মানুষদের মধ্যে জ্ঞানের প্রতি যে অসীম তৃষ্ণা রয়েছে তা মেটানোর জন্যই হচ্ছে বই পড়া। কিছু মানুষ তাদের মানসিক চাপ কমাতে ব্যায়ামের আশ্রয় নেয়, কেউ কেউ আবার যোগব্যায়ামের দ্বারস্থ হয় তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে। জীবনে এমন কোনো মানসিক চাপ নেই সেটি যেই পরিমাণই হোক না কেন, যা একটি ভালো গল্প সমাধান করতে পারে না। বই পড়ার মজা হচ্ছে এটি একজন মানুষকে মুহূর্তের মধ্যেই কোনো এক অজানা জগতে নিয়ে যাবে কিংবা এমন কোনো সময়ে ভ্রমণ করাবে যা সে কখনো কল্পনাও করেনি। একটি ভালো অনুচ্ছেদ তাকে প্রতিদিনের বাস্তবতা থেকে একটু হলেও রেহাই দেবে। এমনি মানসিক চাপ কমিয়ে মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনে সহায়ক মাধ্যম বই। যত বেশি বই পড়া হবে তত বেশি শব্দভান্ডারে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ যোগ হতে থাকবে। ফলে বই পড়া শব্দভান্ডার সমৃদ্ধিতে অনেক বেশি সাহায্য করে। শব্দভান্ডার সমৃদ্ধিতে অনেক  নিজেকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা চাকরিজীবনে, এমনকি ব্যক্তিগত জীবনেও সহায়ক হবে। এমনকি  একজন মানুষকে আত্মবিশ্বাস জোগাতেও অনেক সাহায্য করে। নতুন কোনো ভাষা শিখতেও বই পড়ার বিকল্প নেই। এটি খুব দ্রুত নতুন যে-কোনো ভাষাকে আয়ত্ত করতে সহায়তা করে। নিজেকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা চাকরিজীবনে এমনকি ব্যক্তিগত জীবনেও সহায়ক হবে। এমনকি  মানসিক প্রশান্তি পেতে কোনো এক নিরিবিলি জায়গায় কোনো এক পছন্দের বই নিয়ে যেতে হবে। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মুক্ত বাতাস ওই পাঠকের চিন্তাকে যেন আরো প্রসারিত করবে, যা কখনোই লাইব্রেরিতে বসে বসে পড়ার মধ্যে পাওয়া সম্ভব নয়। কিছুক্ষণের বই পড়া তার সারাদিনের ক্লান্তিকে নিমিষেই দূর করে দেবে। ব্যায়াম যেমন আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে, তেমনি বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মনকে সুস্থ এবং প্রফুল্ল রাখতে পারি। আসলে বই পড়ার আনন্দ কখনোই শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয়, এটি শুধু অনুভব করা যায় অভিজ্ঞতা দ্বারা।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

ঢাকা কলেজ, ঢাকা


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১