বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৯ March ২০২১

জনমানসের সার্বিক মুক্তিই হোক স্বাধীনতার দৃপ্ত শপথ


‘আমাকে স্বাধীনতা দাও অথবা মৃত্যু দাও’—প্যাটরিক হেনরির এই বিখ্যাত বক্তব্যে কিংবা বাঙালি কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়? দাসত্বশৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে, কে পরিবে পায়’-এই পিক্ততে স্বাধীনতার প্রতি মানুষের আজন্ম আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়োজনীয়তার কথা শাশ্বত সূর্যের মতো চিরভাস্বর হয়ে পরস্ফুিটিত হয়েছে। স্বাধীনতা যে-কোনো জাতির জীবনে আরাধনার বিষয়, এক গৌরবোজ্জ্বল ও অবিস্মরণীয় অধ্যায়। ২৬ মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে তেমনি গৌরব ও আনন্দের এক অনন্য দিন। বহু বছরের পরাধীনতার গ্লানি আর শিকল ভাঙার দিন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হলে প্রায় দুইশ বছর ইংরেজ বেনিয়াদের শাসনে আমাদের পিষ্ট হতে হয়। সাতচল্লিশে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের পর থেকে চলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন। ফলে বাঙালির রক্ত সংগ্রামের চেতনার উন্মেষ ঘটতে থাকে। মাতৃভাষার দাবিতে সেই ৪৮ সাল থেকে শুরু করে ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৬-তে এসে সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি আদায়, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ৬ দফার মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তি সনদ ঘোষণা, ৬৯-এর ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান এবং ৭০-এ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারাবাহিকতায় এসেছে একাত্তরের মার্চের সেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি আর তারই মধ্যে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা, এই বাংলার খেটে খাওয়া নির্যাতিত মানুষের জীবনে এনে দিয়েছিল এক মৃত্যুঞ্জয়ী স্বপ্ন। একাত্তরের এই দিনটিতে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটির জন্ম হওয়ার মধ্য দিয়ে এই জনপদে কোটি কোটি বাঙালির হূদয়ে মুক্তি আকাঙ্ক্ষার যে প্রদীপ শিখাটি জ্বলে উঠেছিল, বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে তারই রক্তস্নাত পূর্ণতা ছিল ১৬ ডিসেম্বরে।  কিন্তু একথা অনিবার্য, দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পূর্ণ হলেও জনমানসের সার্বিক মুক্তি এখনো আসেনি। অগণিত প্রাণ ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছিল মূলত সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক, নৃতাত্ত্বিক এমনকি মনস্তাত্ত্বিক কারণে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বর্তমানে সমাজের নানা স্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রয়োগের তুলনায় অপপ্রয়োগ বেশি ঘটছে। প্রবাদ আছে, ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।’ আমাদের পূর্বসূরিদের অপরিমেয় ত্যাগ ও তিতিক্ষার ফসল যে স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।

স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষ হয়েছে রাষ্ট্রীয় সত্তা অর্জনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু মুক্তির সংগ্রাম আজো চলমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুসারে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’ এই তিনটিই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত রাষ্ট্রের আদর্শ ও রাষ্ট্রীয় দর্শন। স্বাধীনতার সুফল দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া জাতীয় দায়িত্ব বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। স্বাধীনতা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে জর্জ বার্নাড শ বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা মানে দায়িত্ব।’ তাই জাতীয় দায়িত্ববোধ থেকে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, উগ্রবাদ, মৌলবাদ, বর্ণবাদ, মাদক, ধর্ষণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ স্বাধীনতাবিরোধী সকল কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে গণতান্ত্রিক ধারায় আইনের শাসন নিশ্চিত, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সব মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষা সর্বোপরি  অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যমুক্ত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী, সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে জনমানসের সার্বিক মুক্তি নিশ্চিত করতে পারলে স্বাধীনতা আরো অর্থবহ হবে বলে মনে করি।

লেখক :কাজী আশফিক রাসেল

শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১