আপডেট : ২৩ March ২০২১
তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন, তিস্তার ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণসহ ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য আগামীকাল বুধবার সকাল ১১টা থেকে ১১টা ১০ মিনিট তিস্তা নদীর দুই পাড়ের (লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থেকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ) ২৩০ কিলোমিটারব্যাপী স্তব্ধ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর রাজা রামমোহন ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সন্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি নজরুল ইসলাম হাক্কানী। একই দাবিতে গত বছরের ১ নভেম্বর ২৩০ কিলোমিটার এলাকায় মানববন্ধন করেছিল সংগঠনটি। নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্দীর সাথে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছিল। কিন্ত দীর্ঘ ৪৮ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমহোন সিং বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির একটি খসড়া প্রস্তুত করেছিল। বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎ সফর বাতিল করায় সেই চুক্তি আর আলোর মুখে দেখেনি। ফেডারেল রাজনীতির কূটকৌশলে তিস্তা চুক্তি আটকে আছে। হক্কানী দাবি করে বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ভারত একতরফাভাবে তিস্তা নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করছে। এর কারণে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। ধু-ধু বালু চরে পরিণত হয়েছে। তিস্তার পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় বাংলাদেশ অংশের তিস্তা নদীর বুক ভরাট হয়ে গেছে। শাখা, উপ-শাখার সব মুখ বন্ধ ও দখল হয়েছে। এর ফলে বর্ষাকালে তিস্তা নদীর তীরবর্তী জনপদ এবং নিম্নাঞ্চলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ২০১৫ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ সফরে এসে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন। নরেন্দ্র মোদিও বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছিলেন তিস্তা চুক্তি হবে। কিন্ত হবে হবে করে তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন তিস্তাপাড়ের দুই কোটি মানুষ। দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও তিস্তা চুক্তি সই করা না গেলে খরা, বন্যা ও নদী ভাঙনে তিস্তাপাড়ের কৃষি, জীববৈচিত্র্য ধবংসের মুখে পতিত হবে। খরাকালে টান পড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির। হক্কানী বলেন, রংপুর বিভাগে ৮ জেলার প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস। এই বিভাগে দারিদ্র্যের হার ৪৬ শতাংশ। তিস্তা-তীরবর্তী কুড়িগ্রাম জেলায় দারিদ্র্যের হার ৭১ শতাংশ। লালমনিহাট জেলায় ৪২, গাইবান্ধা জেলায় ৪৭ ও রংপুর জেলায় ৪৩ শতাংশ। তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে। সেইসাথে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নতি হবে। বিভাগের হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেই সাথে গড়ে উঠবে শিল্প-কারখানা, কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, পোশক কারখানা, রাস্তাঘাটসহ নানান উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ড। আগামী ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এই সফরে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি নিয়ে সন্তোষজনক আলোচনা হবে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে এমন আশাও করেন তারা। ৬ দফার মধ্যে রয়েছে-তিস্তা নদী সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন ও অভিন্ন নদী হিসেবে ভারতের সাথে ন্যায্য পানির হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন এবং তিস্তা নদীতে সারা বছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে জলাধারা নির্মাণ। তিস্তার ভাঙন বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ, ভাঙনের শিকার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন, তিস্তা নদী সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত খনন ও মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদী ও তিস্তা-তীরবর্তী কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষায় কৃষক সমবায় এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প-করকারখানা গড়ে তোলা, তিস্তা নদীর শাখা-প্রশাখা ও উপশাখাগুলোর সঙ্গে নদীর পূর্বেকার সংযোগ স্থাপন এবং দখন দূষণমুক্ত করা, নৌচলাচলের ব্যবস্থা করা এবং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি পূরণ এবং প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অধিকার ভিত্তিতে তিস্তাপাড়ের মানুষদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। সংবাদ সন্মেলন শেষে তিস্তাপাড়ের এক লাখ মানুষের স্বাক্ষরিত একটি বই রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাবেন। সংবাদ সন্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলন পরিষদের স্ট্যাাডিং কমিটির সদস্য ড. তুহিন ওয়াদুদ, ছাদেকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম কানু মিয়া, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, আমিন উদ্দিন বিএসসি, মোজাফ্ফর হোসেন, গোপাল চন্দ্র বর্মণ প্রমুখ।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১