বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২২ March ২০২১

রমজান সামনে রেখে সক্রিয় বাজার সিন্ডিকেট


বাজারে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত মজুতের কথা উল্লেখ করে আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়বে না বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। রমজান ঘিরে এবারো ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নতুন করে ফাঁদ পেতে বসেছে। রমজান শুরুর এক মাস আগে থেকে নিত্যপণ্যের দাম নীরবে পরিকল্পিতভাবে বাড়ানো হচ্ছে, যাতে ‘রমজানে পণ্যের দাম বেড়েছে’ এমন অভিযোগ না ওঠে। এক মাসের ব্যবধানে রাজধানীসহ সারা দেশের খুচরা বাজারে সব ধরনের ডাল, ভোজ্যতেল, আদা-রসুন-পেঁয়াজ, হলুদ-মরিচ, চিনি-লবণ, এমনকি খেজুরের দাম বাড়ানো হয়েছে। গরুর মাংস ও মুরগির দামও বেড়েছে। বরাবরের মতো এবারো ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পরিকল্পিতভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে এক মাসের ব্যবধানে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। মনে হচ্ছে, কয়েক বছরের মতো এবারো ৫-১০ রোজা পর্যন্ত নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হবে। এরপর হয়তো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকার সংশ্লিষ্টদের বৈঠকের পর দাম কমতে শুরু করবে। কিন্তু দেখা যাবে, যে পরিমাণে দাম বেড়েছে, সে পরিমাণে কমানো হয়নি।

সুতরাং রোজার আগে বাজারের দিকে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়াতে হবে। কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এক মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১১৪ টাকা, এক মাস আগে যা বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। প্রতি লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২০০ টাকা কেজি, কদিন আগেই ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। প্রতি কেজি পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৩০০ টাকা কেজিতে। কী কারণে দাম বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত। এ ক্ষেত্রে কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়ানো হলে অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। টিসিবির তথ্যমতে, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৩৫ টাকায়। এক মাস আগে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন তা বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫০ টাকা কেজিতে। দেশি রসুন ১২০ টাকায় বিক্রি হয়, এক মাস আগে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয় প্রায় ৬০০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৮০ টাকা। পাশাপাশি প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ৭০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকায়। বরাবর দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা রমজানে পণ্যের দাম খুব কম বাড়ায়। রমজান আসার এক থেকে দুই মাস আগে তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে রমজান আসার আগে বিষয়টি নিয়ে কঠোর মনিটরিং করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

অথচ বাজার ব্যবস্থায় বর্তমানে কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা নেই। অযৌক্তিক মুনাফা করতে ব্যবসায়ীরা সময় ও সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়ায়। এ প্রবণতা ভোক্তা কিংবা সরকার কারো জন্যই শুভ নয়। এখন থেকে বাজার ঠিকমতো মনিটরিং করা না হলে যে সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে, তা রমজান পর্যন্ত থামানো যাবে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বার বার বলা হচ্ছে, বাজার সিন্ডিকেট আটকাতে মনিটরিং করা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুত আছে ইত্যাদি; কিন্তু তারপরও দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে। তাই এখন থেকে বাজার গভীরভাবে পর্যালোচনা করে তদারকি করা উচিত। রমজান ঘিরে ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। ১৫ দিনের পণ্য যাতে একদিনে না কেনেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। এ কারণেও ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাজার সিন্ডিকেটের জন্য প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বা তারও বেশিতে। এ দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী হলেও বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার টন চাল বাইরে থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটায়। ফলে গরিব, প্রান্তিক কৃষকদের মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা অবস্থা হয়।

করোনাভাইরাসের কারণে বিগত একটি বছর ধরে দেশের জনগণের দুরবস্থার শেষ নেই। কাজকর্ম হারিয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো কোনোমতো খেয়ে-পরে বেঁচে আছে। এমন পরিস্থিতিতে এক মুঠো চাল দিয়ে সাহায্য করারও কেউ নেই। অতএব নিত্যপণ্যের এমন লাগামহীনভাবে দাম বাড়লে মানুষের দিন পার হওয়া খুবই কঠিন হয়ে যাবে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষ নিবেদন, সময় থাকতে নিত্যপণ্যের বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করুন। সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে সচেষ্ট হোন। সব পণ্যের সহনীয় দাম নির্ধারণ করে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করুন। দেশের মানুষকে স্বস্তি জীবন নির্বাহের ন্যূনতম সুযোগটুকু দিন।

লেখক : শাকিবুল হাসান

শিক্ষার্থী, বরেন্দ্র কলেজ, রাজশাহী


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১