আপডেট : ২০ February ২০২১
তালহা তারীফ
‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা ইলা সাহরি রমাদান।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধি করে দিন।’ পাঠকৃত দোয়াটি নাসায়ি গ্রন্থ থেকে সংকলিত যা হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রজব মাস শুরু হতো তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি করে এই দোয়াটি পড়তেন।
রজব শব্দটি আরবি তারজিব হতে এসেছে। রজব শব্দের অর্থ সম্মান প্রদর্শন করা। রজব মাসে তাওবাকারীদের প্রতি মহান আল্লাহ প্রচুর রহমত বর্ষিত করেন এবং মহান আল্লাহতায়ালার যেসব বান্দা ইবাদতে মশগুল তাদের ওপর কবুলিয়াতের নূর-ফয়েজ-বরকত নাজিল করেন। রজব মাস মহান আল্লাহতায়ালার দেওয়া একটি সম্মানিত মাস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতায়ালা যেদিন আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিন যেভাবে সময় নির্ধারিত ছিল তা ফিরে এসেছে ১২ মাসে এক বছরের মধ্যে চার মাস নিষিদ্ধ ও সম্মানিত। তিন মাস পর পর জিলকদ, জিলহজ ও মহরম এবং অপর মাসটি হলো মুজার গোত্র যাকে রজব মাস বলে জানে যা জুমাদিউল উখরা ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস (বুখারি) জাহেলিয়াতের যুগে আরবরা এ মাসকে অন্য মাসের তুলনায় অধিক সম্মান করতেন। তাই এ মাসের নাম রেখেছিল রজব। ইসলামে ১২টি মাসের মধ্যে চারটি মাসকে আশহুরে হুরুম তথা সম্মানিত মাস বলা হয়েছে। মহান আল্লহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধানে আসমানগুলো ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকে মাস সংখ্যা ১২টির মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতারং এ মাসগুলোতে নিজেদের প্রতি জুলুম করো না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত-৩৬) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস। এজন্যই হজরত আবু বকর বলখি (রহ.) বলেন, ‘রজব ফসল রোপণের মাস, শাবান ফসলে সেচপানি দেওয়ার মাস আর রমজান হলো ফসল ঘরে তোলার মাস।’ তিনি আরো বলেন, ‘রজব মাস ঠাণ্ডা বাতাসের মতো, শাবান মেঘমালার মতো আর রমজান হলো বৃষ্টির মতো’ (লাতায়েফুল মাআরেফ-১৪৩) রজব মাস হলো আশহুরে হুরুমের মধ্যে অন্যতম একটি মাস। এর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা হজরত ইব্রাহিম ও হজরত ইসমাঈল (আ.) থেকে এসেছে।
রজব মাসে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল এর মধ্যে অন্যতম হলো এই মাসে ২৬ তারিখের রাতে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় হাবিব হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজে অভ্যর্থনা জানিয়ে তার কাছে সাক্ষাৎ করিয়েছিলেন, যা পৃথিবীতে অন্য কোনো নবীকে এই সুবর্ণ সুয়োগ দেওয়া হয়নি। মহান আল্লাহতায়ালা সেই রাত্রে প্রিয় নবীর উম্মতদের পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ হাদিয়া হিসেবে দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলার কারণে তা কমিয়ে মহান আল্লাহ আমাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত করে দেন। এই মাসে মহান আল্লাহতায়ালার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা যায়, তাহলে আল্লাহতায়ালা ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সাওয়াব দেবেন। এই মাসে যেহেতু আমাদের ওপর হাদিয়া আসে নামাজ। তাই ফরজ নামাজের পাশাপাশি সুন্নাত ইবাদতের প্রতি জোর দেওয়া অত্যাবশক। এরই সঙ্গে সঙ্গে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, আওয়াবিন, দুখুলুল মসজিদ, সালাতুত তাসবিহ নামাজসহ কোরআন তেলওয়াত প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করতে পরলে বিশেষ সাওয়াবের অধিকারী হওয়া যাবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও হজরত কাতাদা (রহ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে এ মাসগুলোকে কোন আমল করার দ্বারা অন্য মাসের তুলনায় অধিক সাওয়াব লাভ হয় এবং এই মাসগুলোতে কোনো কাজ করলে অন্য মাসের তুলনায় অধিক গোনাহ হয় (তাফসিরে তাবারী : ৬ খণ্ড, ১৪৯-১৫০ পৃষ্ঠা)।
আশহুরে হুরুমের মাসে যে কোনো নেক আমলের সাওয়াব অন্য মাসের তুলনায় বেশি হতে পারে বিধায় এই মাসে সাওয়াবের নিয়তে নফল রোজা রাখা যেতে পারে। এ সম্পর্কে ইমাম গাজ্জালী (রহ.) তার বিখ্যাত মুকাশাফাতুল কুলুব গ্রন্থে উল্লেখ করেন, বেহেশতে রজব নামে একটি ঝরনা আছে এর পানি দুধের চেয়েও সাদা ও মধুর চেয়ে মিষ্টি আর বরফের চেয়ে ঠণ্ডা। যে রজব মাসে রোজা রাখবে তাকে সেই পানি পান করানো হবে। মহান আল্লাহতায়ালার ইবাদতের পাশাপাশি অন্যায় থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। মিথ্যা বলা, অন্যের হক নষ্ট করা, নামাজ কাজা করাসহ সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে নিজকে বাঁচিয়ে ইবাদত বন্দেগিতে বেশি যত্নবান হতে হবে। ইমাম আবু বকর জাসমান (রহ.) বলেন, আশহুরে হুরুমের মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে বাকি মাসগুলোতে ইবাদত করা সহজ হয় এবং এ মাসগুলোতে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকলে অন্য মাসে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। (আহকামুল কোরআন : তৃতীয় খণ্ড পৃষ্ঠা-১৬৩)।
রজব মাস থেকেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। রজব ও শাবান মাসে তিনি অধিক নফল রোজা ও মহান আল্লাহর গুণগানে কাটাতেন। তাই আমাদের উচিত আল্লাহতায়ালার ইবাদত-বন্দেগি করে এই রজব মাসে আমাদের জীবনকে অতিবাহিত করা। তাই এই রজব মাসে আমরা যেন আমাদের মূল্যবান সময়কে কাজে লাগাতে পারি আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন!
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১