আপডেট : ১৬ February ২০২১
দিলখোলাসা জাহিদ খান ইসলাম নারী জাতিকে দিয়েছে মহাসম্মান। পবিত্র কোরআনে নারীদের অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও নিয়ম অনুযায়ী পুরুষদের ওপর অধিকার রয়েছে। আর নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।’ (সুরা আল-বাকারা-২২৮) একমাত্র ইসলামই মাতা, কন্যা-স্ত্রী প্রভৃতি হিসাবে নারীদেরকে বিশেষ মর্যাদা ও অধিকার প্রধান করেছে। নারীর প্রথম পরিচয় সে পিতা-মাতার কন্যা। কিন্তু কন্যা হিসেবে ইসলাম-পূর্ব যুগে তার কোনো মর্যাদাই ছিল না। আরবে তো লজ্জা-শরমে, মনের কষ্টে কন্যা শিশুদেরকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। তাছাড়া পৃথিবীর সর্বত্রই কন্যাসন্তান হলে পরিবারের সকলের মুখ কালো হয়ে যেত। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন মাজীদে বলা হয়েছে, ‘যখন তাদের কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তাদের মুখ কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনোস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না, তাকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের ফায়সালা খুবই নিকৃষ্ট।’ (সুরা আন-নাহল, আয়াত-৫৮, ৫৯) হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তখন আল্লাহপাক ফেরেশতাদের প্রেরণ করেন। তারা এসে বলে, পরিবারের সবার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর তারা তাদের বাহু দিয়ে কন্যা সন্তানটিকে আবেষ্টন করে এবং তার মাথায় হাত রেখে বলে, এক অবলা হতে আর এক অবলা বের হয়েছে। যে ব্যক্তি এর রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগী হবে সে কেয়ামত পর্যন্ত সাহায্য পাবে।’ রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কারো কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হলে সে যদি তাকে পুঁতে না ফেলে, তাকে যদি সে অপমানিত না করে এবং তাকে উপেক্ষা করে যদি সে পুত্রসন্তানের পক্ষপাতিত্ব না করে, তাহলে আল্লাহপাক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (আবু দাউদ শরিফ) স্ত্রী হিসেবেও ইসলাম নারীর অধিকার সংরক্ষণ করেছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরাও তাদের পরিচ্ছদ।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৭) ইসলাম বিবাহের ব্যাপারে সুস্পষ্ট বিধান প্রধান করেছে। বহুবিবাহ প্রথাকে নস্যাৎ করার জন্য চারজন পর্যন্ত স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হলেও সে ক্ষেত্রে কতিপয় শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যার কারণে ইচ্ছা করলেই একাধিক স্ত্রী গ্রহণের প্রবণতা রোধ হয়ে যায়। প্রত্যেক স্ত্রীর ওপর সুবিচার করার ক্ষমতা ও সামর্থ্য না থাকলে একটি বিয়ে করার নির্দেশ জারি রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে হাকীমে বলা হয়েছে, ‘বিয়ে করবে তোমাদের পছন্দমতো দুই, তিন কিংবা চার নারীকে। আর যদি এরূপ আশঙ্কা করো যে, তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে একজনকে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে (সুরা আন-নিসা, আয়াত-৩) স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদকে ইসলাম নিরুৎসাহিত করেছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এটি শরিয়তে জায়েজ হলেও আল্লাহতায়লা পছন্দ করেন না। আর তা হচ্ছে তালাক।’ তাছাড়া তালাক এড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আল্লাহপাক বলেন, ‘যদি তাদের (স্বামী-স্ত্রীর) মধ্যে সম্পর্কোচ্ছেদ হওয়ার মতো পরিস্থিতিরই আশঙ্কা করো, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন বিচারক নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ই মীমাংসা চাইলে আল্লাহপাক তাদের মধ্যে অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত নং-৩৫)। নারীরা হচ্ছে মায়ের জাতি। মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত।’ একজন সাহাবী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমার নিকট খেদমত পাবার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার মা। সাহাবী বললেন, তারপর কে? রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার মা। সাহাবী বললেন, তারপর কে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার পিতা এবং তারপর পর্যায়ক্রমে তোমার আত্মীয়-স্বজন।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিযি ও আবু দাউদ শরিফ) রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের পূর্বে ধন-সম্পত্তিতে নারীদের কোনো উওরাধিকার স্বীকৃত ছিল না। ইসলামই মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তির হকদার পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও প্রধান করে। পবিত্র আল-কোরআনুল কারীমে বলা হয়েছে,‘পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত-৭) লেখক : প্রাবন্ধিক, ইসলামিক কলামিস্ট
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১