আপডেট : ১২ February ২০২১
মনিরুজ্জামান খুব একা ফিল করা কিন্তু নিঃসঙ্গতা নয়। আবার অনেকের মাঝে থেকেও একা ফিল করাটাই নিঃসঙ্গতা। কোলাহল বা নীরব যেমনই হোক, নিঃসঙ্গতা কখনো সেই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেন না যার অন্তরে দিন খুঁড়ে খুঁড়ে শেষ হয়ে গেছে। কিছুই অবশিষ্ট নাই। আমাদের অন্তরে রবের জন্য ভালোবাসা, ভয় ও দাসত্ব কাজ না করাটাই নিঃসঙ্গতা। নিঃসেন্দহে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়াটা আমাদের একাকীই হবে। দুনিয়ার কেউ সাথে যাবে না তখন। শুধু যাবে আল্লাহর সম্পর্ক। সুতরাং যার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক নাই সে ব্যক্তিই সত্যিকারের নিঃসঙ্গ। আমরা খুব আয়োজন করে আনন্দ করছি। সাথে আপন পর সবার সাথে হাসিতে সময় কাটাচ্ছি। তোয়াক্কা করছি না সময়ের। ইবনু উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন : যখন যুগ খারাপ হয়ে যাবে আর দেখবে যে, মাসুষের সাথে মেলামেশা শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি করে এবং আল্লাহর থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তখন তোমার কর্তব্য হচ্ছে তাদেরকে পরিত্যাগ করে একাকী অবস্থান করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন মুসলিমের উত্তম সম্পদ হবে বকরি, যা নিয়ে সে পাহাড়ের চূড়া অথবা বৃষ্টিপাতের স্থানে চলে যাবে। সে তার দিন নিয়ে ফেতনা থেকে পলায়ন করবে।’ (শারহু রিয়াদুস সালিহীন, ৫/৩৫৪)। অপর এক বর্ণনায় এসেছে : ‘এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, যে তার জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তারপর হচ্ছে ওই ব্যক্তি যে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনো নিভৃত উপত্যকায় তার প্রতিপালকের ইবাদাতে মনোনিবেশ করে থাকে এবং লোকজনকে তার নিজ ক্ষতিকারক বিষয়াদি থেকে বাঁচায়।’ (মুসলিম,৪৭৮১)। আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন : খারাপ বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করার থেকে একাকিত্বের মাঝে প্রশান্তি রয়েছে। (আল উজলাতু ওয়াল ইনফিরাদ : ৬৪)। আমরা কি সেই সঙ্গীদের তাগ করেছি না করিনি? আমরা আরো আষ্টেপৃষ্ঠে তাদের জড়িয়ে নিয়েছি। অথচ রবের জন্য আমাদের দিন অতিবাহিত হবে এই মর্মেই ওয়াদা বদ্ধ হয়ে দুনিয়াতে এসেছি আমরা। কিন্তু দুনিয়ায় এসে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। দুনিয়ার মায়ায় রবকে ভুলে গেলাম! মালেক বিন দিনার রহিমাহুল্লাহ বলেন : এমন প্রত্যেক ভাই, সঙ্গী-সাথি যার দ্বারা তোমার দ্বীনের কোনো উপকার হয় না তার থেকে পলায়ন করো। (আল উজলাতু ওয়াল ইনফিরাদু : ৬৪) হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দীতে সুফিয়ান সাওরি (রা.) বলেছিলেন : ইতঃপূর্বে লোকেরা পরস্পর মিলিত হলে একে অপরের থেকে উপকৃত হতেন, কিন্তু আজকাল সেই বিষয়টি আর নেই। এখন যা দেখতে পাচ্ছি, তাদের পরিত্যাগ করার মধ্যেই মুক্তি রয়েছে। আমরা কি রবকে চিনতে একে অপরের সাথে মিলিত হই? নাকি এ সময় রবকে ভুলে যাই। খুব খেয়াল রাখা দরকার। যার সংস্পর্শে আল্লাহর স্মরণ হয় এমন বন্ধু বান্ধব গ্রহণ করতে হবে। আর যার সাথে মেলামেশা করলে রবের স্মরণ ভুলিয়ে দেয় এমন সঙ্গ ত্যাগ করে একা থাকা উত্তম। সময়গুলো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু হিসেবগুলো ঠিক লিপিবদ্ধ হচ্ছে হাসরের জন্য। সুফিয়ান সওরি (রহ.) আরো বলেন : গর্তে প্রবেশ করা ছাড়া আমি মানুষের জন্য কোনো কল্যাণ দেখছি না।’ (সিয়ারু আলামিন নুবালা ৬/৬৪০)। বর্তমান সময়টা এমন হয়ে গেছে যে, নিজেকে হিফাজত করার জন্য গর্তে প্রবেশ করা ছাড়া অন্য উপায় দেখছি না। আমাদের চারপাশ ফিতনা দিয়ে সাজানো। অবরণেই ফিতনা, যার শেষ নাই। এই ফিতনার মেলামেশা থেকে একাকিত্ব সর্বোত্তম। আমাদের উপলব্ধি শক্তিও রয়েছে। ভালো-মন্দ যাচাই করার ক্ষমতা আল্লাহতায়ালা দান করেছেন আমাদের। আখিরাতের কল্যাণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই হবে আমাদের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ। আল্লাহতায়ালা আমাদের দীনহীনতা থেকে হেফাজত করুন। আমীন। লেখক : শিক্ষার্থী, দারুল উলুম হাটহাজারী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১