আপডেট : ০৪ February ২০২১
আরিফুল ইসলাম সাধারণত ফার্মেসি বলতে আমরা ওষুধের দোকান আর ফার্মাসিস্ট বলতে ওষুধের দোকানদারদের বুঝি। আসলে ফার্মেসি হলো স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা, যা রসায়নের সাথে জীববিজ্ঞানের একটি যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে। যেখানে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন, বিশ্লেষণ, প্রস্তুতকরণ, মান নির্ধারণ ও উন্নয়ন, সংরক্ষণ, সঠিক তথ্য বিতরণ, সঠিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, সঠিক রোগীভিত্তিক প্রয়োগ, গবেষণা, পরিবেশন, কাজ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এসব বিষয়ে যারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অর্থাৎ যারা ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তাদের ফার্মাসিস্ট বলা হয়। ফার্মাসিস্ট হলো ওষুধ বিশেষজ্ঞ। ফার্মাসিস্টরা নিজেদের পেশাগত দক্ষতা দিয়ে ওষুধশিল্পে, সরকারি সংস্থায়, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে, মডেল ফার্মেসি, কমিউনিটি ফার্মেসি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৭৬ সালে ফার্মেসি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ফার্মেসিকে একটি পেশাগত বিষয় এবং ফার্মাসিস্টদের পেশাজীবী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। ফার্মাসিস্টদের কাজের অনেক সেক্টরের মধ্যে একটি হলো মডেল ফার্মেসি। মডেল ফার্মেসি হলো সেসব ওষুধের দোকান যেখানে একজন ওষুধ বিশেষজ্ঞের (গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট) তত্ত্বাবধানে ওষুধ বিক্রয় থেকে শুরু করে এর যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। যার প্রধান লক্ষ্য মানুষকে সুচিকিৎসা প্রদান করা। রেজিস্ট্রেশনবিহীন ওষুধ বা ভেজাল ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় ও বিতরণ প্রতিরোধে ‘মডেল ফার্মেসি’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের সব জায়গায় ওষুধের দোকান থাকলেও সেখানে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট থাকে না। ক্রেতাদের ওষুধ সম্পর্কে কোনো ব্রিফ (কখন, কীভাবে খেতে হবে, কোথায় সংরক্ষণ করতে হবে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়) করা হয় না। ফলে রোগীরা ওষুধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পায় না। সাধারণ ফার্মেসিগুলোতে ওষুধ সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষিত হয় না। ফলে অনেক ওষুধ নষ্ট হয়ে যায়। ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কিনে প্রতারিত হন অনেকে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসকের প্রদত্ত প্রেসক্রিপশন বুঝতে পারে না। তাই তাকে প্রেসক্রিপশন বুঝিয়ে দেওয়ার দরকার হয়। কিন্তু ফার্মেসিগুলোতে ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেওয়ার মতো ফার্মাসিস্ট থাকে না। ফলে ওষুধ ভুল করে খেয়ে গুরুতর সমস্যার শিকার হতে হয় অনেক সময়। সাধারণ ফার্মেসিগুলোতে গ্র্যাজুয়েট ফর্মাসিস্ট না থাকার কারণে ওষুধের যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত হয় না । অপরদিকে মডেল ফার্মেসি কমপক্ষে ৩০০ বর্গফুট এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। মডেল ফার্মেসিতে একজন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট থাকেন। তাদের কাজ হলো রোগীদের কাউন্সেলিং করা। প্রেসক্রিপশনের নির্দেশ অনুযায়ী রোগীকে ওষুধ বুঝিয়ে দেওয়া অর্থাৎ ওষুধের মাত্রা ও ডোজেজ ফর্ম নির্ধারণ, কীভাবে ও কখন খেতে হবে, কোন মাধ্যমে নিতে হবে, ওষুধ কোথায় রাখতে হবে, ওষুধের সঙ্গে ডায়েট কী হবে, কতটুকু পানি খেতে হবে, কোনো একটা ওষুধের সঙ্গে আরেকটি ওষুধ খাওয়া যাবে কি না, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এসব বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট পরামর্শ দেন রোগীদের। মডেল ফার্মেসিতে ওষুধের গুণাগুণ নিশ্চিত থাকার মতো তাপমাত্রা, ছাদ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব অনুযায়ী ওষুধ রাখা এবং ওষুধ রাখার ফ্রিজ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা হয়। প্রত্যেক রোগীর জন্য আলাদা আলাদা ফাইল তৈরি করে তার রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়। সেইসঙ্গে রেফারেন্স বই, প্রেসক্রিপশন সার্ভিস ডেস্ক, ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট, নন-ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট এবং মেডিক্যাল সাপ্লাই অ্যান্ড ডিভাইসের জন্য আলাদা কর্নার থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে প্রেসক্রিপশনে উল্লিখিত ওষুধের অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে রোগীর জন্য ওষুধের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করেন। সভা-সেমিনার, দেয়ালিকা কিংবা প্রকাশনার মাধ্যমে ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের বার্তা সমাজের কাছে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। মডেল ফার্মেসি প্রতিষ্ঠার ফলে নকল, নিম্নমানের, বেশি দামে ওষুধ বিক্রি হবে না, গায়ের দামেই ওষুধ বিক্রি হবে, এক্সপায়ার্ড মেডিসিন এবং আন রেজিস্টার্ড ড্রাগ বিক্রি হয় না। যার কারণে ওষুধ কেনার সময় নকল, ভেজাল, নিম্নমান এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ভয় মানুষের থাকবে না। একে সেফ ড্রাগ রুলস বলা হয়। মডেল ফার্মেসির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীতা থেকেই আমাদের দেশে মডেল ফার্মেসি খুব সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। সুতরাং মডেল ফার্মেসি ব্যাপকভাবে চালু করে প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে এবং মডেল ফার্মেসিতে কর্মরত ফার্মাসিস্টদের উপযুক্ত বেতন দিতে হবে। সকল সাধারণ মানুষের উচিত নিজেকে সুস্থ রাখতে মডেল ফার্মেসি থেকে ওষুধ নেওয়ার পাশাপাশি এর গুরুত্ব সম্পর্কে অন্যদের সাথে আলোচনা করা। মডেল ফার্মেসি শুধু স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন নয় বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দেশকে টেকসই ও শক্তিশালী উন্নয়নের পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। লেখক : শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১