আপডেট : ০২ February ২০২১
সিনথিয়া সুমি ভাষার মাস প্রত্যয়দীপ্ত একটি মাসই শুধু নয়, স্বাধীনতার সোপান, জাতীয় মূল্যবোধ ও ভাবাদর্শের বাতিঘর। ভাষা আন্দোলনের মতো বিশেষ ঘটনা ও ভাষার জন্যে সালাম, জব্বার, রফিক, শফিকদের আদর্শগত আত্মত্যাগ সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য বহন করে আমাদের জীবনে। বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও দেশের প্রতি মমত্ববোধে উদ্ধত হয়ে ভাষা শহিদদের উপহার ‘বাংলা ভাষা’। আমরা বাঙালি। আমাদের আত্মত্যাগের কথা সারা বিশ্ব স্মরণ করে অথচ আমরাই আমাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে চাইছি। আমাদের মায়ের ভাষাকে প্রাধান্য না দিয়ে আমরা মেতে আছি ভিনদেশি ভাষা-সাহিত্য নিয়ে। মাতৃভাষার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের এই বাংলা ভাষার ইতিহাস-ঐতিহ্য খুবই বেদনাদায়ক। ১৯৫২ সালে আমার দেশের দামাল ছেলেরা নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে আমাদের উপহার দিয়েছেন এই বাংলা ভাষা। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের এই বাংলা ভাষা তথা মাতৃভাষার অবস্থান আরো সুন্দর হয়ে ওঠে। সবশেষে ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ আমাদের বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে। অতঃপর ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে পৃথিবীর অনেক দেশে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ভাষা দিবস’ হিসেবে আমাদের এই বাংলা ভাষা উদযাপন করা হয়। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দ এবং গর্বের বিষয়। ভাষার প্রতি কতটা আবেগ ও ভালোবাসা থাকলে নিজের শরীরের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ছিনিয়ে আনতে পারে তার প্রমাণ বায়ান্নর ভাষা শহীদরা। আমাদের দেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভাষা সচেতনতার অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা লক্ষ্য করা যায়, তারা না বাংলা, না ইংরেজি, না হিন্দি ভাষা বলছে, লিখছে অর্থাৎ কোনো ভাষাতেই সুনির্দিষ্টভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারছে না। হিন্দি, বাংলা ও ইংরেজিকে একসাথে জগাখিচুড়ি করে বাংলাভাষা গুরুত্ব ও ঐতিহ্যে অবহেলা করছে। বাংলা ভাষার ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্যে সবার প্রতি সচেতনতা তৈরির বিকল্প কিছু হতে পারে না। মাতৃভাষাকে যথাযথ ব্যবহার করা প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব। পৃথিবীতে এমন কোনো নজির আর কোথাও নেই, যেখানে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় ভাষা। কিন্তু এই চেতনা কেবল ফেব্রুয়ারি মাসেই জেগে ওঠে প্রভাতফেরীর সাথে আর শেষ হয় স্ট্যাটাসের মাধ্যমে। শুধু ভাষার মাসে নয়, সারা বছর এই চেতনায় বাঙালি তরুণরা জেগে উঠুক। সব ভাষা শহীদের অর্জন আজ প্রজন্ম চত্বরে সবার প্রেরণা। তাই বাংলা শুধু একটি ভাষা নয়, বাংলাজুড়ে আছে আমাদের আবেগ, অনুভূতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংগ্রাম। প্রতিনিয়তই বাঙালিরা পাশ্চাত্যের আদলে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যর্থ চেষ্টায় নিজেদের ডুবিয়ে রাখছে। বাংলার সাথে ইংরেজি, হিন্দির মিশ্রণে কোনো বীরত্ব নেই। বরং সঠিক সুন্দরভাবে বাংলা ভাষা চর্চাই আমাদের আদর্শ জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। তাই আজ তারুণ্যের অঙ্গীকার হোক, কয়েকটি ইংরেজি বুলি মেরে স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা না করে এই বাংলা ভাষাকে বুকে ধারণ করে, লালন করে ভাষার সুস্থ চর্চা করা। তাই একুশের চেতনায়, ভাষা আন্দোলনের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে আমাদের নতুন প্রজন্মকে। আমরা মাতৃভাষাকে ছিনিয়ে আনতে পেরেছি ঠিকই কিন্তু এখনো সম্পূর্ণ মর্যাদা দিতে পারিনি। ভাষার মাসে একটাই প্রত্যাশা মাতৃভাষাকে যথার্থ সম্মান দিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলা ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ করতে হবে। ভাষার অপব্যবহার না করে জাতীয় জীবনে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান ও সাংবিধানিক বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই আমাদের উচিত মাতৃভাষা বাংলাকে শ্রদ্ধা করা এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা। তাই এই ভাষার মাসে আমাদের বাঙালিদের সবার শপথ হোক একটাই, ‘আমি বাঙালি, আমার ভাষা বাংলা।’ শপথটি একদিন বা একমাসের জন্য না হয়ে হোক সারাটা বছরের, সারাটা জীবনের। লেখক : ইতিহাস বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১