বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০১ February ২০২১

বৃক্ষরোপণ নেকি অর্জনের মাধ্যম


হাবীব আনওয়ার

 

 

আল্লাহতায়ালার অসংখ্য অগণিত সৃষ্টির মাঝে সুন্দরতম একটি সৃষ্টি হচ্ছে গাছ, বৃক্ষ। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই গাছ রয়েছে। গাছ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ এরা ভূমিক্ষয় রোধ করে। গাছ অক্সিজেন তৈরি ও বাতাস থেকে কার্বন- ডাই-অক্সাইড দূরীকরণ এবং ভূমির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত কাঠ ঘরবাড়ি তৈরিসহ নানান কাঠামো তৈরিতে এবং জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহূত হয়। গাছ থেকে আমরা নানারকমের ফল পাই। যা আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়। বিভিন্ন গাছে নানা রঙের ফুল ধরে। যা আমাদের হূদয়ঙ্গম করে। ফুল-ফল বিক্রি করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করি। গাছ আমাদের প্রতিনিয়ত সেবা করে যাচ্ছে। গাছের সাথে মানুষ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ, গাছের নির্মল বাতাস মানুষের জীবনের জন্য অতিপ্রয়োজন।

গাছ আল্লাহতায়ালার এমন একটি সৃষ্টি যা শুধু দুনিয়াতেই নয়, আখেরাতের জন্যও আমাদের পরম বন্ধু। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘বরং তিনি, যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমানসমূহ ও জমিন এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্য বর্ষণ করেন বৃষ্টি, তারপর আমরা তা দ্বারা মনোরম উদ্যান সৃষ্টি করি, তার গাছ উদ্গত করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। আল্লাহর সাথে অন্য কোনো ইলাহ আছে কি? তবুও তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা (আল্লাহর) সমকক্ষ নির্ধারণ করে।’ (সুরা আন-নামল, আয়াত-৬০) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরাই কি এগাছ সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি?’ (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত-৭৩)

ইসলাম গাছ লাগানোর প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও গাছ রোপণ করতেন এবং সাহাবাদেরও গাছ লাগাতে উৎসাহ দিয়েছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলমান ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোনো ফসল ফলায় আর তা হতে পাখী কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায় তবে তা তার পক্ষ হতে সদাকা বলে গণ্য হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং- ২৩২০) হজরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কোনো মুসলিম ফলজবৃক্ষ রোপণ করবে, তা থেকে যা কিছু খাওয়া হয় তা তার জন্য দানস্বরূপ, যা কিছু চুরি হয় তাও দানস্বরূপ, বন্য জন্তু যা খেয়ে নেয় তাও দানস্বরূপ। পাখী যা খেয়ে নেয় তাও দানস্বরূপ। আর কেউ কিছু নিয়ে গেলে তাও তার জন্য দান স্বরূপ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৩৮৬০) অন্যত্র মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বৃক্ষরোপণ করে তা ফলদার হওয়া পর্যন্ত তার পরিচর্যা ও সংরক্ষণে ধৈর্য ধারণ করে, তার প্রতিটি ফল যা নষ্ট হয়, তার বিনিময়ে আল্লাহপাক তাকে সদকার নেকি দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ)

গাছ লাগানোর প্রতি উৎসাহ প্রদানের সাথে সাথে অযথা গাছ কাটার প্রতিও আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধমকি দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ বিন হুবশী (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (খামোখা) কোনো কুল গাছ কেটে ফেলবে (যে গাছের নিচে মুসাফির বা পশু-পক্ষী ছায়া গ্রহণ করত), সে ব্যক্তির মাথাকে আল্লাহ সোজা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং-৫২৪১) আর তাবারানী বর্ণনা করেছেন, ‘ফলদার গাছ-পালার নিচে ও প্রবাহমান নদীনালার কিনারায় পায়খানা করা নিষেধ।’ (বুলুগুল মারাম, হাদিস নং- ৯৩)

মোটকথা ইসলাম গাছ লাগানো ও তার পরিচর্যার প্রতি ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেছেন। সেই সাথে বৃক্ষ রোদনকারীদের প্রতি ভর্ৎসনাও জানিয়েছেন। গাছ আমাদের খুবই আপন। তাই আমাদের চারপাশ সুন্দর ও পরিপাটি রাখতে বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। তাই আসুন, আমরা আমাদের জীবনকে সুরক্ষা ও পরিবেশ সুন্দর এবং আখেরাতে নেকির পাহাড় নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হতে বেশি বেশি গাছ লাগাই ও তার পরিচর্যা করি। গাছ লাগাতে তেমন বেগ পেতে হয় না! খরচও তেমন নেই। অথচ, নেকি অনেক বেশি। রাস্তার দুপার্শ্বে, বাড়ির আঙিনায়, এমনকী বাড়ির ছাদেও আমরা গাছ রোপণ করতে পারি। হোক তা কোনো শবজি কিংবা কোনো ফুলের গাছ। যার দ্বারা পরিবেশের  সৌন্দর্য রক্ষার সাথে সাথে আমাদের আমলনামাও ভারী হবে। তবে মনে রাখতে হবে , গাছ পরিবেশের রক্ষক নয়; বরং আল্লাহতায়ালা-ই পরিবেশের মহানরক্ষক। আসুন! গাছ লাগাই নেকি অর্জন করি এবং পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখি।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, হাটহাজারী মাদরাসা হাটহাজারী, চট্টগ্রাম


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১