বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ৩১ January ২০২১

কবরের আজাব থেকে মুক্তির আমল


মাওলানা মাহাথির মোবারক

 

 

 

হজরত উসমান (রা.) যখন কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করতেন তখন কান্নায় তার দাড়ি ও বুক ভেসে যেত। লোকেরা জিজ্ঞেস করত, আপনি জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা শুনেও এত বেশি কান্নাকাটি করেন না। কিন্তু কবরের পাশ দিয়ে গেলে এত কান্নাকাটি কেন করেন? তিনি বলেন, আমি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট শুনেছি, কবর আখেরাতের প্রথম ঘাঁটি। যে ব্যক্তি এখানে নাজাত পেয়ে গেল, তার জন্য সমস্ত মঞ্জিল আসান বা সহজ হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি এখানে মুক্তি পাবে না, তার জন্য হাশর-নাশর অনেক ভয়ানক হয়ে দাঁড়াবে। আরো শুনেছি, কবর হতে ভয়ংকর দৃশ্য আমি আর কোথাও দেখিনি। কবরের আজাব সম্পর্কে আমি রাসুলুল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে বলেন : উসমান, আমি কি তোমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দেব যার দ্বারা তুমি কবরের আজাব হতে মুক্তি পেয়ে যাবে? আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আমার পিতা-মাতা আপনার ওপর কোরবান হোক। আপনি আমাকে তা বলে দেন। অতঃপর তিনি বললেন, প্রতিদিন এশার নামাজের পর রাতে ঘুমানোর আগে যে ব্যক্তি সুরা তাবারাকাল্লাজি অর্থাৎ সুরা মুলক তেলাওয়াত করবে তার মৃত্যুর পর কবরের আজাব মাফ করে দেওয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিয়মিত সুরা মুলকের আমল করবে সে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাবে। (তিরমিজি-২৮৯০)।

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোরআন শরিফে ৩০ আয়াত বিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যা তার তেলাওয়াতকারীকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত তার জন্য সুপারিশ করতেই থাকবে। সুরাটি হলো ‘তাবারাকাল্লাজি বি ইয়াদিহিল মুলক অর্থাৎ সুরা মুলক।’ (আবু দাউদ-১৪০২)। অন্য এক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমার মন চায় প্রত্যেক মুমিনের হূদয়ে যেন সুরা মুলক মুখস্থ থাকে।’ (বায়হাকির শুআবুল ইমান-২৫০৭)। আর যে ব্যক্তি নিয়মিত সুরা মুলকের আমল করবে সে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাবে। (তিরমিজি-২৮৯০)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো রাতে সুরা মূলক না পড়ে ঘুমাতেন না। (তিরমিজি-২৮৯২)। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত-নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয় পবিত্র কোরআনে একটি সুরা, যাতে আছে ত্রিশটি আয়াত। উহা পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে, যে পর্যন্ত তাকে ক্ষমা না করা হয়। সুরাটি হচ্ছে ‘তাবারাকাল্লাজি বি ইয়াদিহিল মুলক...।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান)।

আবদুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, ‘কবরস্থিত ব্যক্তির নিকট পায়ের দিকে দিয়ে ফেরেশতারা শাস্তির জন্য আসতে চাইবে। তখন তার পদদ্বয় বলবে, আমার দিক দিয়ে আসার রাস্তা নেই। কেননা সে সুরা ‘মুলক’ পাঠ করত। তখন তার সিনা অথবা পেটের দিক দিয়ে আসতে চাইবে। তখন সিনা অথবা পেট বলবে, আমার দিকে দিয়ে আসার কোনো রাস্তা তোমাদের জন্য নেই। কেননা সে আমার মধ্যে সুরা ‘মুলক’ ভালোভাবে ধারণ করে রেখেছিল। অতঃপর তার মাথার দিক দিয়ে আসার চেষ্টা করবে। মাথা বলবে এদিক দিয়ে আসার রাস্তা নেই। কেননা সে আমার দ্বারা সুরা ‘মুলক’ পাঠ করেছিল। সুরা মুলক হচ্ছে বাধাদানকারী। কবরের আজাব থেকে বাধা দেবে। তাওরাতেও সুরা ‘মুলক’ ছিল। যে ব্যক্তি উহা রাত্রে পাঠ করে, সে অধিক ও পবিত্র-উৎকৃষ্ট আমল করল। (নাসাঈ)। অন্য এক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি প্রতি রাতে তাবারাকাল্লাজি বি ইয়াদিহিল মুলক... পাঠ করবে, আল্লাহ্ তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন।’ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে সুরাটিকে ‘মানিয়া’ বা বাধাদানকারী সুরা বলে আখ্যা দিতাম। উহা আল্লাহতায়ালার কিতাব কোরআনের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরা, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে উহা পাঠ করল সে অধিক ও উৎকৃষ্ট আমল করল। আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত সুরা মুলক তেলাওয়াত করবে কিয়ামতের দিন এই সুরাটি তাকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

 

লেখক : খতিব মসজিদে বায়তুন নুর, মাওনা, গাজীপুর।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১